দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতে চান না সাকিব

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টেস্ট থেকে ছুটি নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু দল না পাওয়ায় তার টেস্ট খেলা নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়। কদিন আগে বিসিবি সভাপতি জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলবেন সাকিব। পরে তাকে নিয়েই টেস্ট এবং ওয়ানডে দল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এর দুদিন পর বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার জানালেন, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতে চান না তিনি।
কারণ হিসেবে নিজের মানসিক ও শারীরিক অবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন সাকিব। তার মতে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো মানসিক ও শারীরিক অবস্থায় নেই তিনি। এই মুহূর্তে ক্রিকেট উপভোগ করছেন না বলে জানিয়েছেন সাকিব। এমন মানসিক অবস্থা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়া ঠিক হবে না বলে করেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।
রোববার ঢাকার একটি হোটেলে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানে ছিলেন সাকিব। সেখান থেকে দুবাই যাত্রার উদ্দেশে তিনি সরাসরি যান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এর আগে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার অনাগ্রহের ব্যাপারটি ইতোমধ্যে বিসিবিকেও জানিয়েছেন তিনি। বোর্ডের পক্ষ থেকে তাকে দুই-এক দিন ভেবে সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়েছে।
বিমানবন্দরে সাকিব বলেন, 'দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ নিয়ে যেটা বলতে হয়, মানসিক ও শারীরিক যে অবস্থায় আছি, আমার কাছে মনে হয় না আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সম্ভব খুব একটা। এই কারণে আমার মনে হয়, যদি আমি একটা বিরতি পাই, আমি যদি ওই আগ্রহটা ফিরে পাই, তাহলে আমার খেলাটা সহজ হবে।'
সাকিব সব সময়ই চালকের আসনে থাকতে চান। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেকে যাত্রী মনে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আফগানিস্তান সিরিজে আমার কাছে মনে হয়েছে আমি একজন যাত্রী, যেটা আমি হয়ে কখনই হয়ে থাকতে চাই না। আমি খেলাটা একদমই উপভোগ করতে পারিনি। পুরোটা সিরিজটাই, টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে। আমি চেষ্টা করেছি, কিন্তু হয়নি। আমার মনে হয় না এ রকম মন মানসিকতা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ খেলাটা ঠিক হবে।'
ইতোমধ্যে নিজের ভাবনা বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসকে জানিয়েছেন সাকিব। তবে তাকে চিন্তা করার সময় দিয়েছেন জালাল ইউনুস। বাংলাদেশ অলরাউন্ডার বলেন, 'আমি এই কথা জালাল ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করেছি। জালাল ভাই বলেছেন, দুদিন উনিও চিন্তা করবেন, আমাকে চিন্তা করার সময় দিয়েছেন। তারপর একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বা উচিত বলে আমি মনে করি।'
এমন মানসিক অবস্থা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে খেললে সেটা দলের জন্য ক্ষতি হবে বলে মনে করেন সাকিব। তার ভাষায়, 'যদি আমার মন মানসিকতা এ রকম থাকে, ফিজিক্যাল কন্ডিশন এ রকম থাকে, মেন্টাল কন্ডিশনও এ রকম থাকে; এটা দলের জন্যই ক্ষতি হবে। আমি যেটা নিজে মনে করি, আমার নিজের প্রতি নিজের যে সম্মান, মানুষ যেটা প্রত্যাশা করে, সেটা যদি আমি করতে না পারি, সেখানে আসলে যাত্রী হয়ে থাকাটা খুবই দুঃখজনক হবে। সতীর্থদের সঙ্গে চিট করার মতোই একটা ব্যাপার হবে।'
সাকিবের কাছে জানতে চাওয়া হয়, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতে ইচ্ছুক কিনা? উত্তরে সাকিব বলেছেন, 'এটা আসলে সিদ্ধান্তের ব্যাপার। পাপন ভাইয়ের (বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান) সঙ্গে কথা বলার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পুরো সিরিজটাই খেলতে যাব। এ জন্যই আমার নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, গতকাল সিরিজ শেষ হওয়ার পর অনেক চিন্তা করেছি। এর আগেও তো পারফরম্যান্স খারাপ হয়েছে সেটা অন্য বিষয়। আমি যখন ক্রিকেটটা উপভোগ করতে না, পারি সেটা আমার জন্য দুঃখজনক। সেটা আমি কখনই চাই না। এটা আমার সতীর্থদের ঠকানো। সেটা আমি কখনই চাই না।'
ক্রিকেট খেলার অবস্থায় নেই জানিয়ে সাকিব আরও বলেন, 'আমি চিঠি দিয়েছি কিন্তু বলিনি যে ওয়ানডে সিরিজ খেলবো না বা টেস্ট খেলবো না। আমি নিজের অবস্থান আসলে জানিয়েছি জালাল ভাইকে। উনি বলেছেন, ''তুমিও দুদিন চিন্তা করো।" উনারাও করুক। তারপর হয়তো আলোচনা করে কোনো একটা সিদ্ধান্ত আসবে। আমি আসলে যেটা বললাম, আমি খুব খোলা মনে আছি। এখন আমি ক্রিকেট খেলার পরিস্থিতিতে নেই। আমি ওই পরিস্থিতিতে যখন আসব, তখন অবশ্যই চাইব ক্রিকেট খেলব।'
আফগানিস্তান সিরিজে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশ বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। তিনি বলেন, 'স্বাভাবিকভাবে আমার ব্যক্তিগত দিক থেকে চিন্তা করলে অবশ্যই হতাশাজনক। আমার নিজের প্রতি নিজের যে প্রত্যাশা, মানুষ যেভাবে প্রত্যাশা করে, বিসিবি যেভাবে প্রত্যাশা করে অবশ্যই ওভাবে করতে পারেনি। এ জন্য অবশ্যই আমি হতাশ।'
সর্বশেষ ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করে বাংলাদেশ। সেবারও টেস্ট সিরিজ থেকে ছুটি নেন সাকিব। তার টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি অনাগ্রহের আলোচনার শুরু তখন থেকেই। ২০২১ সালে ঘরের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেললেও চোটের কারণে দ্বিতীয় টেস্ট খেলা হয়নি তার।
এরপর আইপিএলে খেলতে গত বছর শ্রীলঙ্কায় টেস্ট খেলতে যাননি তিনি। সে সময় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, 'সাকিব তো আরও তিন বছর আগেই খেলতে চায়নি টেস্ট। ও তো এমনিতেই টেস্টের প্রতি অতো আগ্রহ দেখায়নি, চাচ্ছিল না খেলতে।' সর্বশেষ, এ বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকেও পারিবারিক কারণে ছুটি নেন সাকিব।