ফেসবুকে দ্বন্দ্ব: আসিফ বললেন ‘আমি সঠিক ছিলাম’; উপদেষ্টা জাতীয় দলে ফেরার পথ বন্ধ করেছেন দাবি সাকিবের

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান জানিয়েছেন, গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে চান। সেই ম্যাচের স্কোয়াডেও তার নাম ছিল। কিন্তু দেশে ফিরতে না পারায় শেষ টেস্ট খেলতে পারেননি। এখনও সেই সুযোগ হারানোর আক্ষেপ রয়ে গেছে তার মনে।
তবে এবার সাকিব পরোক্ষভাবে দায় দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ওপর। তার অভিযোগ, আসিফই তাকে আবার জাতীয় দলে ফিরতে বাধা দিয়েছেন।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে দুবাইয়ে এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান লড়াই নিয়ে যখন ক্রিকেটপ্রেমীরা ব্যস্ত ছিলেন, তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাকিব ও আসিফের মধ্যে শুরু হয় তুমুল বাকযুদ্ধ।
দু'জনেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে কারও নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। তবে কাকে উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে তা সহজেই বোঝা যাচ্ছিল।
এই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শুরু হয় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিবের একটি পোস্ট থেকে। রোববার রাত ৮টা ৫২ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। সেই সঙ্গে শেয়ার করেন পুরোনো এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার সঙ্গে তোলা একটি ছবি।
সাকিবের পোস্টে নানা মহলের ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
রাত ১০টা ৪ মিনিটে সাকিবের পোস্টের জবাবে ইঙ্গিত করে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে আসিফ লেখেন, 'একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি দিয়েছেন আপনারা আমাকে। কিন্তু আমি সঠিক ছিলাম। এখানেই আলোচনা শেষ।'
পরে তিনি সেই পোস্ট নিজের ভেরিফায়েড পেজেও শেয়ার করেন। সেখানেও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়।
এরপর পাল্টা জবাবে রাত ১১টা ১৯ মিনিটে সাকিব লেখেন, 'যাক শেষমেষ কেউ একজন স্বীকার করে নিলেন যে তার জন্য আমার আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেওয়া হলো না, বাংলাদেশের জন্য খেলতে পারলাম না! ফিরবো হয়তো কোন দিন আপন মাতৃভূমিতে, ভালোবাসি বাংলাদেশ'
বর্তমানে সাকিব বিশ্বের বিভিন্ন ঘরোয়া টি–টোয়েন্টি লিগে খেলছেন। কয়েক দিন আগেই তিনি সিপিএলে অংশ নেন। বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বশেষ তিনি খেলেছেন গত বছরের অক্টোবরে ভারতের বিপক্ষে।
ক্রিকেটার সাকিব ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে মাগুরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট তিনি কানাডায় ছিলেন, তখনই শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকার পতন ঘটে।
এর পর থেকে তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। অন্য সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো সাকিবও খুন, শেয়ারবাজার কারসাজি ও দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলার মুখোমুখি।
দেশের ক্রিকেটের একসময়কার আইকন সাকিব এখন মূলত ক্রিকেট থেকে বিচ্ছিন্ন। চোট বা খারাপ ফর্ম নয়, রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগসূত্রই তার ক্যারিয়ারে ছায়া ফেলেছে। তার সংসদ সদস্য হওয়ার অভিজ্ঞতা ও দলটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তাকে খেলাধুলার জগৎ থেকে অনেকটা দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
গত অক্টোবরে মিরপুরে তার বিদায়ী টেস্ট হওয়ার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক এবং জুলাইয়ের আন্দোলনে নীরব থাকার কারণে নিরাপত্তা শঙ্কায় মাঠে নামতে পারেননি।
তবুও এ বছরের এপ্রিল মাসে এক সাক্ষাৎকারে সাকিব জানান, রাজনীতিতে আসা নিয়ে তার কোনো অনুশোচনা নেই। 'ডেইলি সান'-কে তিনি বলেন, 'আমি যা করেছি, তাতে কোনো ভুল দেখছি না… যদি আমার রাজনীতিতে আসাটাই ভুল হয়, তবে ভবিষ্যতে যারা রাজনীতিতে আসবে, তাদের জন্যও সেটা ভুল হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'রাজনীতিতে আসা নাগরিকের অধিকার… আমি যখন রাজনীতিতে এসেছি, তখনও মনে করেছি আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখনও তাই মনে করি। কারণ আমার উদ্দেশ্য ছিল মাগুরার মানুষের জন্য কাজ করা।'