চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বাংলাদেশের বিদায়

লক্ষ্য নিয়ে করা প্রশ্নে কোনো রাখঢাক ছিল না নাজমুল হোসেন শান্তর উত্তরে। দেশ ছাড়ার আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক জানান, শিরোপা জিততে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যাচ্ছেন তারা। কিন্তু লক্ষ্য, বক্তব্য আর বাস্তবতার সাথে মিললো না এতোটুকুও। প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় হার মেনে নেওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচেও ব্যাট হাতে একই পথে হাঁটলো। তাতে সংগ্রহ থাকলো সামান্য, ফলও গেল বিপক্ষে। হতাশার ব্যাটিংয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও হার মেনে নিতে হলো বাংলাদেশকে, এক ম্যাচ বাকি থাকতেই বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল তাদের।
সোমবার পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এই হারে আসর থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল তাদের। সঙ্গে বিদায় ঘণ্টা বেজ গেল টানা দুই ম্যাচ হারা স্বাগতিক পাকিস্তানেরও। আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ জিতলেই কেবল আশা বেঁচে থাকতো তাদের। টানা দুই জয়ে সেমি-ফাইনালে উঠলো নিউজিল্যান্ড। দুই ম্যাচের দুটিতেই জেতা ভারতও পা রাখলো শেষ চারে। নিয়ম রক্ষার ম্যাচে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়বে বাংলাদেশ।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। ভারত ম্যাচের মতো আজও ধুঁকে ধুঁকে ব্যাটিং করে তারা। এর মাঝেও ব্যতিক্রম ছিলেন হাফ সেঞ্চুরি করা শান্ত ও জাকের আলী অনিক। এ ছাড়া শুরুতে তানজিদ হাসান তামিম ও শেষ দিকে রিশাদ হোসেন কিছুটা অবদান রাখেন। এ কজনের ব্যাটে ৯ উইকেটে ২৩৬ রান তোলে বাংলাদেশ। শুরুর গতিতে থাকলে সংগ্রহ ৩০০ ছাড়িয়ে যেতে পারতো। কিন্তু উইকেট হারানোর চাপ সামলাতে গিয়ে প্রচুর ডট খেলে বাংলাদেশ। ৩০০ বলে মধ্যে ১৮১টি বল ডট দেয় তারা। অর্থাৎ, ১১৯ বলে ২৩৬ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে রাচিন রবীন্দ্রর সেঞ্চুরি ও টম ল্যাথামের হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৬.১ ওভারে (২৩ বল হাতে রেখে) জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো ছিল না নিউজিল্যান্ডের। প্রথম ওভারেই স্টাম্প উপড়ে উইল ইয়াংকে বিদায় করেন তাসকিন আহমেদ। কিছুক্ষণ পর কেন উইলিয়ামসনও থামেন, তাকে ফেরান বাংলাদেশের তরুণ গতি তারকা। ১৫ রানে দুই উইকেট হারানো দলের চাপ কমান ডেভন কনওয়ে ও রাচিন। যদিও এই জুটি তেমন বড় হয়নি, দলীয় ৭২ রানে কনওয়েকে আউট করেন মুস্তাফিজুর রহমান। এর আগে ৪৫ বলে ৬টি চারে ৩০ রান করেন কনওয়ে। এখান থেকে জুটি গড়ে তোলে রাচিন ও ল্যাথাম। চতুর্থ উইকেটে ১৩৬ বলে ১২৯ রান যোগ করেন এ দুজন।
এই জুটিতেই জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের, ২০০ ছাড়িয়ে যায় দলটি। এরপর থামেন চাপ কাটিয়ে অসাধারণ ব্যাটিংয়ে দলকে পথ দেখানো রাচিন। বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার ১০৫ বলে ১২টি চার ও একটি ছক্কায় ১১২ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন, ওয়ানডেতে এটা তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। ৭৬ বলে ৩টি চারে ৫৫ রান করা ল্যাথাম কিছুক্ষণ পর আউট হলে জয় তুলে নেওয়ার বাকি কাজটুকু সারেন গ্লেন ফিলিপস ও বল হাতে বাংলাদেশকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলা মাইকেল ব্রেসওয়েল। ফিলিপস ২১ ও ম্যাচসেরা ব্রেসওয়েল ১১ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের তাসকিন, নাহিদ, মুস্তাফিজ ও রিশাদ একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন আনে। সৌম্য সরকার বাদ পড়ায় তানজিদ তামিমের সঙ্গে ওপেন করেন শান্ত। তানজিদ শুরু থেকেই দাপট দেখিয়ে ব্যাটিং করতে থাকেন, তবে শান্ত ছিলেন ধীর-স্থির। এ জুটি ৮.২ ওভারে ৪৫ রান যোগ করে। ২৪ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ রান করে ব্রেসওয়েলের প্রথম শিকারে পরিণত হন তিনি। এরপর উইকেটে যাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজকে সাবলীল দেখালেও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি, ১৪ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৩ রান করে আউট হন এই অলরাউন্ডার।
আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান তাওহিদ হৃদয় আজ কিছু করতে পারেননি, টাইমিং করতে ভুগতে থাকা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ফেরেন দলীয় ৯৭ রানে। ২৪ বলে ৭ রান করেন তিনি। দলের দুঃসময়ে দৃষ্টিকটুভাবে আউট হন মুশফিকর রহিম। ১০৬ রানের মাথায় তেড়েফুঁরে খেলতে গিয়ে নিজের উইকেটটি উপহার হিসেবে দিয়ে আসেন ৫ বলে ২ রান করা অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। এখান থেকেই রানের গতি কমার শুরু। দলীয় ১১৮ রানে অহেতুক শট খেলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ফিরলে আর চাপে পড়া বাংলাদেশ রান তুলতে ভুগতে শুরু করে।
এতো বিপর্যয়ের মাঝেও একটা পাশ আগলে রাখেন শান্ত। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিদায়ের পর জাকেরের সঙ্গে জুটি গড়েন তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে এ দুজন ৬৭ বলে ৪৫ রান যোগ করেন। যা যৌথভাবে বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ রানের জুটি, উদ্বোধনী জুটি থেকেও আসে সমপরিমাণ রান। শান্তর বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ওয়ানডের দশম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ১১০ বলে ৯টি চারে ইনিংসসেরা ৭৭ রান করেন। পরের জুটিতে ৩৫ বলে ৩৩ রান যোগ করেন জাকের ও রিশাদ হোসেন।
২৫ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৬ রান করেন রিশাদ, যা বাংলাদেশের ইনিংসের তৃতীয় সর্বোচ্চ। ৪৯তম ওভার পর্যন্ত লড়া জাকের রান আউটে কাটা পড়ার আগে ৫৫ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় করেন ৪৫ রান। ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদ ২০ বলে একটি চারে ১০ রান করেন। বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভোগানো ব্রেসওয়েল ১০ ওভারে ২৬ রানে ৪টি উইকেট নেন। যা তার ক্যারিয়ার সেরা, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের স্পিনারদের মধ্যেও এটা সেরা বোলিং। উইল ও'রোক ২টি এবং ম্যাট হেনরি ও কাইল জেমিসন একটি করে উইকেট নেন।