ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে হৃদয়ের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের ২২৮

রান আউট থেকে বাঁচতে ডাইভ দেওয়াই যেন কাল হলো তাওহিদ হৃদয়ের। শুশ্রূষা নিয়ে ব্যাটিং শুরু করলেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়াচ্ছিলেন। আরেকটি ডাইভে ব্যথায় কুঁকড়ে যান ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। হৃদয়ের পাওয়া এই ব্যথা নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের ভক্তদের মনেও আঘাত হেনেছে। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া হৃদয়ই যে সব আশা-ভরসা ছিলেন। জাকের আলী অনিকের সঙ্গে রেকর্ড জুটি গড়ে লড়াকু সংগ্রহের সম্ভাবনা জাগানো বাংলাদেশ ব্যাটসম্যান একই ছন্দে শেষটা করতে পারেননি। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন, তবে দলকে এনে দিতে পারেননি লড়াই করার রসদ।
বৃহস্পতিবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করে ২২৮ রান তুলেছে বাংলাদেশ। ২ বল বাকি থাকতে অলআউট হয় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। অবস্থা বিবেচনায় এই সংগ্রহেই সন্তুষ্ট থাকতে পারে বাংলাদেশ। কারণে দুঃস্বপ্নের শুরুর পর ১০০ রানের আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল তারা। মাঝ দরিয়া থেকে দিকহারা দলকে পথ দেখিয়ে ২০০ ছাড়ানো সংগ্রহ এনে দেওয়ার প্রধান কারিগর সেঞ্চুরিয়ান হৃদয়, জাকের পান হাফ সেঞ্চুরির দেখা। শেষ দিকে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে কিছুটা অবদান রাখেন রিশাদ হোসেন।
অগোছালো শুরুর পর মুহূর্তেই কোণঠাসা হয়ে পড়া বাংলাদেশ ৩৫ রানের মধ্যেই ৫ উইকেট হারায়। একে একে ফিরে যান সৌম্য সরকার, অধিনায়ক শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজ, তানজিদ হাসান তামিম ও মুশফিকুর রহিম। এর মধ্যে সৌম্য, শান্ত ও মুশফিক রানের খাতাই খুলতে পারেননি। প্রথম ওভারেই ভারতের পেসার মোহাম্মদ শামির ভেতরে ঢোকা বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন সৌম্য। পরের ওভারে থামেন শান্তও। ভারতের আরেক পেসার হর্ষিত রানার অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে কভারে বিরাট কোহলির হাতে ধরা পড়েন তিনি।
এরপর চার ওভারের বিরতি, ষষ্ঠ ওভারে গিয়ে আবারও উইকেটের পতন। শামির বলে ব্যাট চালিয়ে সৌম্যর মতো মিরাজও উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন, ১০ বলে ৫ রান করেন তিনি। নবম ওভারে বাংলাদেশকে দিক ভুলিয়ে দেন অক্ষর প্যাটেল। ভারতের বাঁহাতি এই স্পিনার পরপর দুই বলে ফেরান তানজিদ ও মুশফিককে। এ কজনের মধ্যে কেবল তানজিদই কিছু রান করতে পেরেছেন, বাঁহাতি তরুণ এই ওপেনার ২৫ বলে ৪টি চারে ২৫ রান করেন। নবম ওভারে আরেকটি উইকেট পেতে পারতেন অক্ষর, হ্যাটট্রিকের কীর্তিতেও উঠতে পারতো তার নাম। কিন্তু জাকেরের তোলা সহজ ক্যাচটি নিতে পারেননি রোহিত শর্মা।
৩৫ রান থেকে জুটি গড়া হৃদয় ও জাকের অনেকটা পথ পাড়ি দেন। চাপ সামলে দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন তারা। এ দুজনের ব্যাটিংয়ের কল্যাণেই ৫ উইকেট পড়ার পর নিজেদের এবং চাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৪১.১ ওভার ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে ২০৬ বলে ১৫৪ রানের জুটি গড়েন হৃদয় ও জাকের। এই জুটিতে বেশ কয়েকটি রেকর্ড দখলে নিয়েছেন তারা। ওয়ানডেতে ষষ্ঠ উইকেটে এটাই বাংলাদেশের সেরা জুটি। ভারতের বিপক্ষেও ষষ্ঠ উইকেটে যেকোনো দলের সেরা জুটি এটা। এ ছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসেও এটা সেরা ষষ্ঠ জুটি।
জাকেরের বিদায়ে ভাঙে এই রেকর্ড জুটি। এর আগে ১১৪ বলে ৪টি চারে ৬৮ রান করেন জাকের, ওয়ানডেতে এটা তার দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। এরপর হৃদয়ের সঙ্গে যোগ দিয়ে প্রথম কয়েকটা বল দেখে খেলা রিশাদ ঝড় তোলেন। তার ব্যাটে ৪৬তম ওভার থেকে ২০ রান পায় বাংলাদেশ। ১২ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ১৮ রান করেন রিশাদ। বাঁ পায়ে চোট পাওয়ায় বাকি পথটা ভালো কাটেনি হৃদয়ের, অনেক বলে নিশ্চিত এক রান হবে জেনেও দৌড়াতে পারেননি তিনি। দুই বল বাকি থাকতে আউট হওয়া হৃদয় ১১৮ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০০ রানের মহাকার্যকর ইনিংস খেলেন। এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। ভারতের অষ্টম বোলার হিসেবে ২০০ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছানো শামি ৫৩ রানে ৫টি উইকেট নেন। হর্ষিত ৩টি ও অক্ষর ২টি উইকেট পান।