পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষেই করুণ হাল বাংলাদেশের

প্রস্তুতি ম্যাচে কেমন প্রস্তুতি হলো, সেটাই আসল। এসব ম্যাচের ফল সেভাবে হিসেবে নেওয়া হয় না। কিন্তু এখানে হারের ব্যবধান বা ব্যাটিং-বোলিংয়ের পারফরম্যান্স উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। শাহিনস নামের পাকিস্তানের 'এ' দলের বিপক্ষেই যেমন বাংলাদেশের করুণ হালের ব্যাপারটি যেমন হিসেবে নিতেই হচ্ছে। জাতীয় দল হয়েও প্রস্তুতি ম্যাচে দলটির বিপক্ষে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে অনুজ্জ্বল থেকে যাওয়া বাংলাদেশ মেনে নিয়েছে বড় হার।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশনে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দুবাই গিয়ে পৌঁছায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের লম্বা টুর্নামেন্ট বিপিএল খেলায় ওয়ানডে প্রস্তুতি সারতে একটু আগেভাগেই দেশ ছাড়ে বাংলাদেশ দল। কয়েকদিন অনুশীলনের পর আজ পাকিস্তান শাহিনসের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে নামে তারা, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচ। দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে।
ব্যাটিং-বোলিং কোনোটাই মনপুত হয়নি বাংলাদেশের। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে ছিল হতশ্রী অবস্থা। গা গরমের এই ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস কেবল ৪৪। ওসামা মীর, মুসা খানদের বোলিংয়ের বিপক্ষে ৩৮.২ ওভারে ২০২ রানেই অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে মুহাম্মদ হারিস ও মুবাসির খানের ব্যাটে ৩৪.৫ ওভারে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান শাহিনস। বিবর্ণ ব্যাটিংয়ের পর বল হাতেও বিশেষ কিছু করতে পারেনি বাংলাদেশ।
দেশ ছাড়ার আগে লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সাংবাদিকদের জানান, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই যাচ্ছেন তারা। যদিও তার কথায় ভরসা করার মতো মানুষের সংখ্যা একেবারেই কম। কারণ 'এ' গ্রুপের লড়াইয়ে ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তানের মতো দলকে হারিয়ে পরের রাউন্ডে যাওয়াটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় পরীক্ষা। সেই পরীক্ষা যে আরও কঠিন হতে পারে, আজকের প্রস্তুতি ম্যাচে যেন সেই আভাসই মিললো।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ যাদের নিয়ে লড়বে, আজকের ম্যাচে তারাই খেলেছেন। অধিনায়ক শান্ত থেকে শুরু করে তানজিদ হাসান তামিম, সৌম্য সরকার, তাওহিদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুশফিকুরি রহিম, তাসকিন আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব, রিশাদ হোসেনরা সবাই ছিলেন ম্যাচে। অন্যদিকে পাকিস্তান শাহিনস দলটি তরুণ ক্রিকেটারদের সাজানো। যেখানে জাতীয় দলে কেলা কয়েকজন ক্রিকেটার ছিলেন, যাদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা একেবারেই কম।
এই দলটির বিপক্ষেই টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে চরম বিপর্যয়ে পড়ে শেষমেষ অল্প রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। দলের হয়ে কেউ হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি, পুরো ইনিংসে আসে মাত্র একটি ছক্কা। সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন মিরাজ। ডানহাতি এই অলরাউন্ডার ৫৩ বলে ৩টি চারে এই ইনিংস খেলেন। হৃদয়ের সঙ্গে দলের একমাত্র অর্ধশত রানের জুটিও গড়েন তিনি। ওপেনার তানজিদ ৬ রান করেই বিদায় নেন। দলীয় ৫০ রানে থামেন শান্ত, তার ব্যাট থেকে ২১ বলে ১২ রান আসে।
কিছুটা ব্যতিক্রম থাকা সৌম্য ৩৮ বলে ৪টি চারে করেন ৩৫ রান। ধীর গতিতে ব্যাট চালানো হৃদয় ৩৩ বলে করেন ২০ রান। ৭ রান করেই সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। জাকের আলী অনিক করেন ৪ রান। রিশাদ ১৫ বলে ১৪ রান করে আউট হন। শেষ দিকে লড়াই করা তানজিম হাসান সাকিব ২৭ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩০ রান করেন। দলের ইনিংসের একমাত্র ছক্কাটি মারেন তিনি।
নাসুম আহমেদ ১৬ বলে ১৫ রান করেন। তাসকিন ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। পাকিস্তান শাহিনসের ওসামা মীর ১০ ওভারে ৪৩ রানে ৪টি উইকেট নেন। ২টি উইকেট নেন মুবাসির। একটি করে উইকেট পান আলী রাজা, মুবাসির ও সুপিয়ান। প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিং করার সুযোগ থাকে সবারই। তবে ব্যাটিং করেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও পারভেজ হোসেন ইমন। তবে বোলিং করেন অনেকেই, তবে কেউ-ই সেভাবে প্রতিপক্ষকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি।
হারিস ও মুবাসিরের ব্যাটে সহজেই জয় তুলে নেয় পাকিস্তান শাহিনস। ৭৬ রান করা হারিস চোটে পেয়ে মাঠ ছাড়েন। ৬৩ রানে অপরাজিত থাকেন মুবাসির। এর আগে সাহিবজাদা ২৩ ও আজান ৩১ রান করেন। প্রতিপক্ষের ৩টি উইকেট নিলেও বাংলাদেশের কেউ-ই উল্লেখ করার মতো বোলিং করতে পারেননি। তাসকিন ৫ ওভারে ২৭ রানে উইকেটশূন্য থাকেন। ৫ ওভারে ২০ রান দেওয়া মুস্তাফিজও উইকেট পাননি। এক উইকেট নেওয়া মিরাজ ৬ ওভারে দেন ৩৯ রান। গতি তারকা নাহিদ ২ ওভারে ১১ রানে একটি উইকেট নেন। তুলনামূলক ভালো বোলিং করা তানজিম এক উইকেট নিতে ৪ ওভারে খরচা করেন ১৫ রান। রিশাদ, নাসুম, সৌম্যদের কেউ-ই উইকেটের দেখা পাননি।