তবু লড়াই করার আশায় বাংলাদেশ

'আউট হওয়াটা তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নাই'- বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে বললেন হাসান মাহমুদ। বাংলাদেশের ডানহাতি পেসারের 'সহজ-সরল' উত্তর, যেখানে ফুটে উঠলো বাস্তবতাও। চাইলেই উইকেটে টিকতে পারবেন, যেন এই সামর্থ্য বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নেই! দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিংও সেই সাক্ষ্য দেয়। দুই ইনিংসেই অদ্ভূতুরে ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় দিন শেষেই ইনিংস হারের শঙ্কায় স্বাগতিকরা। এরপরও অবশ্য লড়াই করার আশা ছাড়ছে না তারা।
দুই দিন শেষে মিরপুর টেস্ট পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের আগের ইনিংস বিবেচনায় ইনিংস ব্যবধানে জেতার আশাও করতে পারে প্রোটিয়ারা। বাংলাদেশকে ১০৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে সেঞ্চুরিয়ান কাইল ভেরেইনা ও উইয়ান মুলডারের ব্যাটে প্রথম ইনিংসে ৩০৮ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসেই ২০২ রানে এগিয়ে যায় সফরকারীরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭.১ ওভারে ৩ উইকেটে ১০১ রান তুলেছে বাংলাদেশ, ইনিংস হার বাঁচাতে আরও ১০১ রান করতে হবে তাদের।
এ পথে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও মুশফিকুর রহিম। প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করা জয় এই ইনিংসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রান করেছেন, ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৩৮ রানে অপরাজিত। ওয়ানডের চেয়েও বেশি গতিতে রান তোলা মুশফিক ২৬ বলে ৩টি চারে ৩১ রানে হার না মানা। কাল তাদের এই জুটির ওপর বাংলাদেশের ভবিষ্যত অনেকাংশেই নির্ভর করবে। লড়াইয়ে টিকে থাকতে তিন সেশন ব্যাটিং করতে চাইলে এ দুজনের বড় ইনিংস খেলার বিকল্প নেই।
প্রথম ইনিংসে শুরুতেই বেজে ওঠা ভাঙনের সুর না থামাতে পেরে অল্পতেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানরা উইকেটে যেন ক্ষণিকের অতিথি ছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও শুরুটা হয় চরম হতাশার। তৃতীয় ওভারেই ফিরে সাদমান ইসলাম অনিক। এই চাপ কাটিয়ে ওঠার আগেই সাজঘরে মুমিনুল হক। ৪ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। শুরুর দুর্দশা অবশ্য কাটিয়ে তোলেন জয় ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এই জুটি থেকে আসে ৫৫ রান।
দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদার বিপক্ষে শুরুর দিকে সংগ্রাম করতে হলেও মানিয়ে নেন শান্ত। কিন্তু ৪৯ বল খেলে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৩ রান করে প্রোটিয়া স্পিনার কেশব মহারাজের শিকারে পরিণত হন তিনি। এরপর জয় ও মুশফিকের ব্যাটিংয়ে ধীরে ধীরে স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে। এ দুজন ৫০ বলে ৪২ রানের জুটি গড়ে দিনের বাকিটা সময় পাড় করেন।
এই জুটিতে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে দিন শেষ করলেও হতাশা শেষ নেই বাংলাদেশের। দুই ইনিংস মিলিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাটসম্যান উল্লেখ করার মতো দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। অথচ একই উইকেটে চরম দুর্দশার মাঝেও দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়া কাইল ভেরেইনা খেলেন ১১৪ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। অলরাউন্ডার উইয়ান মুলডার করেন ৫৪ রান। এমনকি বোলার ডেন পিটও করেন ৩২ রানের কার্যকরী এক ইনিংস।
একই উইকেটে দুই দলের ব্যাটিংয়ে কতো পার্থক্য। ঘরের মাঠের সুবিধা নেওয়ার বদলে বাংলাদেশকে চেয়ে চেয়ে দেখতে হয়েছে সফরকারী দলের ঘুরে দাঁড়ানোর দৃশ্য। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা পারলেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কেন পারছেন না। এমন প্রশ্নের উত্তরে হাসান বলেন, 'আউট হওয়াটা তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নাই। আমার মনে হয় যে আরও মনোযোগ দিয়ে ব্যাটিং করা, যতোটুকু সম্ভব সেট হয়ে ব্যাটিং করাটা দরকার।'
দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশ এখনও ১০১ রানে পিছিয়ে। এই রান পেরিয়ে তারপর দক্ষিণ আফ্রিকাকে লক্ষ্য দিতে হবে। সেটা সম্ভব হবে বলে মনে করেন হাসান বাংলাদেশের এই পেসার ভরসা রাখছেন জয়-মুশফিকের জুটি ও পরের ব্যাটসম্যানদের ওপর। ২০০ রানের লক্ষ্য দিতে পারলে জেতা সম্ভব বলে বিশ্বাস হাসানের। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'জয় আর মুশফিক ভাই অনেক ভালো একটা সময় পার করছে।'
'কালকে ইনশাআল্লাহ তাদের চেষ্টা থাকবে যতো লম্বা সময় ব্যাটিং করতে পারে, জুটিটা যতো বড় করতে পারে, পরের ব্যাটসম্যানদেরও একই মানসিকতা নিয়ে ব্যাটিং করা উচিত যে, আমরা কতো বড় পার্টনারশিপ করতে পারবো। আমার মনে হয় ২০০ রানের বেশি লক্ষ্য দিলে অবশ্যই আমরা পারব ইনশাআল্লাহ।' যোগ করেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নেওয়া হাসান।
বাংলাদেশের সংগ্রহ ১০১, দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২০০ রানের লক্ষ্য দিতে হলে তাদেরকে আরও ৩০০'র বেশি রান করতে হবে। অর্থাৎ, কাজটি করতে ১০৬ রানে অলআউট হওয়া দলটিকে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪০০'র বেশি সংগ্রহ গড়তে হবে। তিন সেশন ব্যাটিং করলে সেটা সম্ভব বলে মনে করেন হাসান, 'আমরা যদি তিন সেশন করতে পারি কাল, বা দুই-আড়াই সেশন ব্যাটিং করতে পারি, আমরা ৪০০'র কাছাকাছি যেতে পারবো বলে মনে করি।' তিন সেশন ব্যাটিং করা সম্ভব কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'জ্বি, সম্ভব।'