বিসিবির কাছেও সাকিবের ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এখন একটাই আলোচনা, সাকিব আল হাসান। তার দেশে আসা, বিদায়ী টেস্ট খেলা নিয়েই সব আগ্রহ ক্রিকেটমোদীদের। সংশয় পেরিয়ে অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকেই নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় দেশে আসা হচ্ছে না সাকিবের। শেষ পর্যন্ত তিনি আসবেন কিনা, তার খেলা হবে কিনা কিংবা শেষ পর্যন্ত তার বদলে কাউকে দলে নেওয়া হবে কিনা; এসব বিষয়ে অন্ধকারে খোদ বিসিবিই।
ব্যাপারটি বিসিবি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নেই। সাকিবের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারই যেখানে 'পিছু হঠা' নীতিতে হাঁটছে, সেখানে বিসিবিকে অজানা উদ্দেশ্যের দিকে বসে থাকতে হচ্ছে। বিসিবি প্রধান ফারুক আহমেদ ও প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী আইসিসির সভায় অংশ নিতে আছেন দুবাইয়ে। সরকার বদলের পর অনেক বোর্ড পরিচালক লম্বা সময় ধরে অনুপস্থিত। বাকিদের কেউ বিষয়টি নিয়ে কথা বলার মতো অবস্থাতেও নেই। সব মিলিয়ে সাকিবের খেলা না খেলা বা দেশে আসার ব্যাপারে বিসিবির কাছে কোনো তথ্য নেই বললেই চলে।
বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, সাকিবের ব্যাপারে সরকারের পক্ষে থেকে পরিষ্কার কোনো বার্তা আসেনি তাদের কাছে। শেষ পর্যন্ত সাকিব আসবেন কিনা, এ নিয়ে বিসিবি ধোঁয়াশায়। বিসিবি সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী দেশে না থাকায় সাকিবের ব্যাপারটি নিয়ে কোনো আলোচনাও নেই বোর্ডে। নির্বাচক থেকে শুরু করে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের কারও কাছেই সাকিবের ব্যাপারে পরিষ্কার কোনো তথ্য নেই। তাই সাকিবের বিকল্প নেওয়া হবে নাকি ১৪ জনের স্কোয়াডই থাকবে, এ ব্যাপার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপেক্ষায় সংশ্লিষ্টরা কর্তারা।
১৯ অক্টোবর মাঠে গড়াচ্ছে জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল)। খেলা হবে বিকেএসপি, খুলনা, বগুড়া, সিলেটে। ক্রিকেটাররা নিজেদের দলের সঙ্গে অনুশীলনে ব্যস্ত। যেসব দলের খেলা ঢাকার বাইরে, তাদের ভেন্যুতে চলে যাওয়ার কথা। এনসিএলের ম্যাচ দেখতে নির্বাচকরাও কাল ভেন্যুতে যাবেন। ভারতে থাকা আব্দুর রাজ্জাক কালকের মধ্যে বাকি নির্বাচকদের সঙ্গে যোগ দেবেন। আপাতত তাদের দৃষ্টি এনসিএলেই, ২০ অক্টাবর পর্যন্ত আসরটির ম্যাচ দেখবেন তারা। মাঠ থেকেই সাকিবের বিকল্প বা স্কোয়াড ১৪ জনের থাকবে কি না, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন তারা।
ভারত সফরে টেস্ট অবসরের ঘোষণা দেন সাকিব। বিদেশে ঘোষণা দিলেও ঘরের মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার ইচ্ছার কথা জানান দেশের সর্বকালের সেরা এই ক্রিকেটার। যদিও তার দেশের মাটিতে শেষ টেস্ট খেলতে পারা নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। শুরুতে কঠোর বার্তা দেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ এবং যুবও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সাকিবকে তার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানান ক্রীড়া উপদেষ্টা।
কদিন পরে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া পোস্টে অবস্থান পরিষ্কার করাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরব ভূমিকা পালনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন সাকিব। এর কদিন পর ক্রীড়া উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ অলরাউন্ডারকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এ ছাড়া, তার দেশে আসা বা দেশ ছাড়ার ব্যাপারে কোনো বাধা নেই বলে জানান তিনি। এরপর সব ঠিকঠাকই এগোচ্ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তায় আটকে গেল সাকিবের দেশে ফেরা।
জাতীয় দলে খেলার পাশাপাশি সংসদ সদস্যও ছিলেন সাকিব। গত জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাগুরা-১ আসন থেকে নির্বাচত হন তিনি। গত আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে নিহত গার্মেন্টকর্মী রুবেল হত্যা মামলায় নাম আসে সাকিবের, তাকে ২৮ নম্বর আসামি করা হয়। ছাত্র আন্দোলনে নিরব ভূমিকায় থাকা দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত হয়ে আসছেন তিনি।