ব্রাজিলের পঞ্চপাণ্ডব, নজর থাকবে যাদের ওপর

কাতার বিশ্বকাপের পর্দা উঠেছে চারদিন হলো। এর মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে বেশ কয়েকটি ম্যাচ, ঘটেছে বেশ কিছু অঘটনও। আর্জেন্টিনা, জার্মানির মতো পরাশক্তি হোঁচট খেয়েছে তাদের প্রথম ম্যাচে। এবার ফুটবলমোদীদের দৃষ্টি ফেবারিট ব্রাজিলের দিকে, যাদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হচ্ছে আজ। রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১টা সার্বিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে।
সব দলেরই কিছু খেলোয়াড় থাকেন, যারা দলের স্বপ্ন বহন করেন। যদিও দলের প্রতিটি সদস্যই গুরুত্বপূর্ণ, এরপরও কারও কারও কাছ থেকে দলের বিশেষ চাওয়া থাকে। ব্রাজিল দলেও এমন কয়েকজন ফুটবলার আছেন, যাদেরকে একসঙ্গে পঝ্চপাণ্ডব ডাকা যায়। মূলত তাদের কাঁধেই থাকবে মূল দায়িত্ব, তাদের সেরা দিনে ব্রাজিল হাসবে; এমনই প্রত্যাশা সবার।
তিতের তত্ত্বাবধানে থাকা ব্রাজিল এবার হেক্সা মিশনে নেমেছে। প্রথম দেশ হিসেবে পাঁচটি শিরোপা ঘরে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের দেশটি এবার ষষ্ঠ শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে দৃঢ়প্রত্যয়ী। ফুটবলে কোনো কিছুরই নিশ্চয়তা না থাকায় এ পথে নির্ভুল থাকতে হবে ব্রাজিলকে, হতে হবে সবার চেয়ে আলাদা। এই মিশনে ব্রাজিলের নেতৃত্বে থাকবেন নেইমার, থিয়াগো সিলভা, মার্কিনিয়োস, কাসেমিরো ও লুকাস পাকেতা। বাছাই পর্বে অপরাজিত থাকা ব্রাজিল বিশ্বকাপ পুনরুদ্ধারে এই পাঁচ ফুটবলারের ওপর ভরসা রাখতে পারে।
সেলেসাওদের পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে একজন কেবল ফরোয়ার্ড, তিনি নেইমার। এ ছাড়া বাকি চারজনের দুজন ডিফেন্ডার এবং দুজন মিডফিল্ডার। বলা হয় একটি দলকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারে তাদের রক্ষণভাগ। ব্রাজিলের কোচ তিতেও সেই হিসাবই করেছেন, সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন রক্ষণভাগে। কারণ এই বিভাগটি নিয়ে তার যথেষ্ট মাথাব্যথা ছিল।
নেইমার
পজিশন: ফরোয়ার্ড
বয়স: ৩০
প্যারিস সেইন্ট জার্মেইতে (পিএসজি) খারাপ সময়ই যাচ্ছিল নেইমারের। তবে এবারের মৌসুম দিয়ে চেনা চেহারায় ফিরেছেন ব্রাজিলের এই প্রাণভোমরা। ফরাসী জায়ান্টদের হয়ে ১৯ ম্যাচে ১৩টি গোল করেছেন নেইমার, সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও ১১টি। এবারও তাই নেইমারের দিকে তাকিয়ে সেলেসাওরা।

২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাই থেকে নিজেকে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা নেইমার এবারের মৌসুমে ঝলমলে শুরু করে আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি কতোটা অনন্য। কাতার বিশ্বকাপে নেইমারকে মূলত প্লেমেকার হিসেবেই ব্যবহার করতে চায় ব্রাজিল। এবং তারুণ্য নির্ভর দলটিতে মাঠের যেকোনো জায়গায় খেলার স্বাধীনতা দেওয়া হবে তাকে।
থিয়াগো সিলভা
পজিশন: সেন্টার-ব্যাক
বয়স ৩৮
ব্রাজিলের দীর্ঘদিনের পথচলার সাথী থিয়াগো সিলভা। সেই ২০০৮ সাল থেকে জাতীয় দলের হয়ে খেলে আসছেন চেলসির তারকা এই রক্ষণভাগের খেলোয়াড়। বয়স চলছে ৩৮, কিন্তু এখনও তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা। এ কারণেই বয়সের কথা না ভেবে সিলভার ওপর ভরসা রেখেছেন তিতে, এবং রক্ষণভাগের মূল ভরসার জায়গা থাকবেন তিনিই।
বলের ওপর সিলভার নিয়ন্ত্রণ অবিশ্বাস্য। খেলাটা দ্রুত পড়ে ফেলতে পারেন বলে নিজের দুর্দান্ত শক্তিমত্তা দিয়ে দ্রুতই রক্ষণভাগের ফাঁকা জায়গা আটতে দিতে পারেন তিনি। চেলসিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও সুপার লিগে জেতা সিলভা বিশ্বকাপে রীতিমতো সবার ফেবারিট। এমনকি তিনি চেলসি কিংবদন্তি জন টেরিরও প্রশংসা জিতেছেন, যার সাথে চেলসির পথচলা দারুণ গৌরবময়।

সিলভাকে নিয়ে টেরি বলেছেন, 'আমি তাকে খুব পছন্দ করি, ভালোবাসি। এই বয়সে বিশ্বের সেরা লিগে এতো ভালো খেলাটা অবিশ্বাস্য। আমি যদি তার মতো খেলতে পারতাম! সবকিছু সহজ রেখে কোনও ঝুঁকি না নিয়েই সে দারুণ ফুটবল খেলে।' টেরির কাছ থেকে এমন প্রশংসা পাওয়া যে কারও ওপর যে ভরসা রাখা যায, সেটা বলাই বাহুল্য।
মার্কিনিয়োস
পজিশন: ডিফেন্ডার
বয়স: ২৮
পিএসজি ও ব্রাজিলে থিয়াগো সিলভার দীর্ঘদিনের সতীর্থ মার্কিনিয়োস। কাঁধে কাঁধ মিরিয়ে রক্ষণভাগ সামলেছেন তারা। ইউরোপের অন্যতম সেরা দলে দীর্ঘদিন খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার তার সেরা ফর্মে আছেন। প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্যায়েও দীর্গদিন ধরে নিজেকে 'টিপ-টপ' রেখেছেন মার্কিনিয়োস।

দুরন্ত, চটপটে মার্কিনিয়োস মাঠের অনেকটাজুড়ে নিজের উপস্থিতি প্রমাণ করেন। একাই সামলান রক্ষণভাগের অনেকটা জায়গা। যে দলগুলো আক্রমণাত্মক বা উপরের দিকে খেলতে পছন্দ করে, তাদের বিপক্ষে তিনি খুবই কার্যকরী। লম্বা সময় ধরে ব্রাজিলকে প্রতিনিধিত্ব করা মার্কিনিয়োসকে এবার নেতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কাসেমিরো
পজিশন: ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার
বয়স: ৩০
১১ বছর আগে ব্রাজিল দলের অংশ হন কাসেমিরো। দুই বছরের মধ্যেই নিজেকে অন্যতম গুরু্বপূর্ণ হিসেবে প্রমাণ করেন তিনি। ২০১৩ সালে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমান ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডার। গত আগস্টে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেওয়ার আগে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে দীর্ঘ পথচলায় পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও তিনটি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জেতেন তিনি। দারুণ ছন্দে থাকা কাসেমিরোকে নিয়ে এবার ব্রাজিলের আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা।

ক্ষীপ্র গতির এই খেলোয়াড় আক্রমণ সাজানোর কারিগর হিসেবে দারুণ কার্যকর। ক্লাব ও দেশের হয়ে সেটা দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছেন তিনি। যদিও কৌশলগত দিকগুলোর কারণেই ব্রাজিলের প্রথম একাদশের পছন্দ নন তিনি। পুরো একটি 'প্যাকেজ, হিসেবে কাসেমিরোকে এবার দলের ভিড়িয়েছেন ব্রাজিলের কোচ তিতে।
লুকাস পাকেতা
পজিশন: অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার
বয়স: ২৫
পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে লুকাস পাকেতা সবচেয়ে তরুণ। চার বছর আগে ব্রাজিল দলে অভিষেক হওয়া এই মিডফিল্ডার ইংলিশ ক্লাব ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেডের হয়ে খেলেন। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব মিশনে মাত্র একটি গোল করেছেন পাকেতা। গত কলম্বিয়ার বিপক্ষে করা সেই গোলটি দিয়েই এবারের কাতার বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
সাও পাওলোর ওই ম্যাচের পরে তিতে উষ্ণ অভ্যর্থনা পান পাকেতা। সেই সময় পাকেতাকে নিয়ে তিতে বলেছিলেন, 'আমি যখন তাকে জড়িয়ে ধরি, তখন তাকে বলেছিলাম, 'তুমি বাঁ পায়ের সত্যিকারের প্লেমেকার, মিডফিল্ডার।' আমি তার সঙ্গে মজা নিচ্ছিলাম, কারণ সে ক্লাবে কখনও কখনও নয় নম্বর পজিশনে খেলে। সে তখন বলে, আমি চাইলে যেকোনো পজিমনে তাকে খেলাতে পারি।'

ক্লাব ও জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠা পাকেতা আক্রমণ সাজানো ও আক্রমণ করায় দারুণ পটু। এবারের বিশ্বকাপ মিশনে তাই ব্রাজিলের একাদশে তার জায়গা পাওয়া একপ্রকার নিশ্চিত হয়েই আছে। বিশ্বকাপ বাছাইয়েরে মিশনে নেইমারের সঙ্গে তার দারুণ বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে। গোল করেছেন আবার সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেনও।