টানা চার জয়ে সেমি-ফাইনালে এক পা ইংল্যান্ডের

চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে ইংল্যান্ড। তাদের সামনে কোনো প্রতিপক্ষই বাধার দেয়াল তুলতে পারছে না। অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাশক্তিও ইংলিশদের প্রতাপের সামনে দাঁড়াতে পারেনি। সুপার লিগের চতুর্থ ম্যাচেও ছন্দ ধরে রাখল ইয়ন মরগানের দল। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে আরেকটি জয় ঝুলিতে পুড়লো তারা।
সোমবার শারজাহতে সুপার লিগে এক নম্বর গ্রুপের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ২৬ রানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। চলতি বিশ্বকাপে এটা ইংল্যান্ডের টানা চতুর্থ জয়। ৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে থাকা ইংল্যান্ড সেমি-ফাইনালে এক পা দিয়ে রাখল। চার ম্যাচের তিনটিতে হেরে সেমি-ফাইনাল স্বপ্ন প্রায় শেষ শ্রীলঙ্কার।
চার জয়ের পরও ইংল্যান্ডের সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত না হওয়ার কারণ অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। তিন ম্যাচে দুটি করে জিতেছে তারা। বাকি দুই ম্যাচে জিতলে তাদের জয়ও হবে ৪টি, পয়েন্ট হবে ইংল্যান্ডের সমান। কারণ বাকি দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় মানে শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের হার। তখন রান রেটের হিসেবে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্য থেকে দুটি দল শেষ চারে উঠবে।
আছে আরও সমীকরণ। যে সমীকরণে বেঁচে আছে বাংলাদেশের শেষ চারে খেলার স্বপ্নও। এর জন্য বাংলাদেশকে বাকি থাকা দুই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে হবে। প্রার্থনায় থাকতে হবে শেষ ম্যাচেও যেন এই দুই দল হেরে যায়।
এ ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার জয়ের কামনা করতে হবে। তখন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতলেও তাদের পয়েন্ট হবে ৪। এই সমীকরণে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট সমান ৪ করে হবে। নেট রান রেটের হিসাবে ইংল্যান্ডের সঙ্গী হবে কোনো দল।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টস হেরে আগে ব্যাটিং করে নেমে দিক হারা হয়ে পড়া ইংল্যান্ডকে পথ দেখান ম্যাচসেরা জস বাটলার ও অধিনায়ক ইয়ন মরগান। বাটলারের হার না মানা ১০১ ও মরগানের ৪০ রানের সুবাদে ১০ ওভারে ৪৭ রান তোলা ইংল্যান্ডই পায় ১৬৩ রানের লড়াকু সংগ্রহ। জবাবে কয়েকটি মাঝারি ইনিংসে লড়াই করেও হার মেনে নিতে হয় শ্রীলঙ্কাকে। ১৯ ওভারে ১০ উইকেটে তাদের ইনিংস শেষ হয় ১৩৭ রানে।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দলীয় ১ রানেই ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কাকে হারায় শ্রীলঙ্কা। কিছুক্ষণের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরেন ২১ রান করা চারিথ আসালাঙ্কা ও কুশল পেরেরাও। ৩৪ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলায় লঙ্কানদের রান তোলার গতিতে প্রভাব পড়ে। ৮ ওভারে ৫৪ রান তোলে তারা।
উইকেটে সেট হয়েও ১৪ বলে ১৩ রান করে আউট হন আভিস্কা ফার্নান্দো। ভানুকা রাজপাকশে ২৬ রান করে আউট হন। এরপর অধিনায়ক দাসুন শানাকা ও ভানিন্দু হাসারাঙ্গা কিছুক্ষণের জন্য আশা দেখান। সেটাও শেষ হয়ে যায় ২৬ রান করা শানাকার বিদায়ে। হাসারাঙ্গা সর্বোচ্চ ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন। ইংল্যান্ডের আদিল রশিদ, মঈন আলী ও ক্রিস জর্ডান ২টি করে উইকেট নেন। এ ছাড়া ক্রিস ওকস ও লিয়াম লিভিংস্টোন একটি করে উইকেট পান।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি ইংল্যান্ড। দলীয় ১৩ রানেই ওপেনার জেসন রয়কে হারায় তারা। দাভিদ মালানকে নিয়ে শুরু ধাক্কা কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন সেঞ্চুরিয়ান বাটলার। কিন্তু মালান পারেননি, ৬ রান করে দলীয় ৩৪ রানের মাথায় আউট হন তিনি। পরের ওভারে থামেন জনি বেয়ারস্টো। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে দিকহারা হয়ে পড়ে ইংল্যান্ড।
বাটলারের সঙ্গে উইকেটে যোগ দেন মরগান। কিন্তু দুজনই রান তুলতে সংগ্রাম করছিলেন। ১০ ওভারে স্কোরকার্ডে মাত্র ৪৭ রান যোগ করেন তারা। আরও দুটি ওভার যায় এভাবেই। ১৩তম ওভার থেকে হাত খুলে খেলতে শুরু করেন বাটলার-মরগান। এরপর অনেকটা সময় চলে তাদের ব্যাটিং শো। চতুর্থ উইকেটে ১১২ রানের জুটি গড়েন ইংল্যান্ডের এই দুই ব্যাটসম্যান। তাদের ব্যাটেই শেষ ১০ ওভারে ১১৬ রান তোলে ইংলিশরা।
৩৬ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪০ রান করা মরগানের আউটে ভাঙে এই জুটি। ম্যাচের নায়ক বাটলারকে ফেরাতেই পারেনি শ্রীলঙ্কা। ডানহাতি উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান মাত্র ৬৭ বলে ৬টি চার ও ৬টি ছক্কায় খেলেন ১০১ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস। টি-টোয়েন্টিতে এটাই বাটলারের প্রথম সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম ও ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির মালিক হলেন তিনি। শ্রীলঙ্কার লেগ স্পিনার ভানিন্দু হাসারাঙ্গা ৩টি ও দুশমন্ত চামিরা একটি উইকেট নেন।