Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Tuesday
June 17, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
TUESDAY, JUNE 17, 2025
ফ্রান্স বনাম ভেনিস: আয়নার অঘোষিত যুদ্ধ

ইজেল

উসামা রাফিদ
15 December, 2021, 06:45 pm
Last modified: 15 December, 2021, 06:48 pm

Related News

  • অমিয়শঙ্কর, ঘরে ফিরে যা
  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স
  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...

ফ্রান্স বনাম ভেনিস: আয়নার অঘোষিত যুদ্ধ

কাচের জিনিস তৈরির জন্য সবার প্রথমে যে নাম মুখে চলে আসে, তা হচ্ছে ভেনেশিয়ান গ্লাস। রেনেসাঁর পর থেকেই ভেনিসের কাচ প্রস্তুতকারকদের তৈরি কাচের তৈজসপত্র হয়ে উঠতে থাকে ইউরোপীয় অভিজাতদের সংগ্রহের বিষয়। কাচের অনেক নতুন প্রযুক্তিও ভেনেশিয়ানদের আবিষ্কার।
উসামা রাফিদ
15 December, 2021, 06:45 pm
Last modified: 15 December, 2021, 06:48 pm

৩ সপ্তাহের মধ্যে প্যারিসের 'দ্য রয়্যাল গ্লাস অ্যান্ড মিরর কোম্পানি' তাদের সেরা ২ জন আয়না কারিগরকে হারিয়ে প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়ল। ভেনিস থেকে আসা ধাতু পালিশকারীদের মধ্যে অন্যতম দক্ষ ব্যক্তি মারা গেলেন কয়েকদিনের জ্বরে ভুগে। ঠিক তার কয়েকদিন পরেই এক গ্লাসব্লোয়ার মারা গেলেন ভয়াবহ পেটব্যথা নিয়ে। এই দুজনকে হারিয়ে কোম্পানির মালিক মাথায় হাত না দিয়ে পারলেন না, কারণ, তাদের জোগাড় করতেই প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাকে। কারখানার দায়িত্বে থাকা ডুনোয়েঁ সন্দেহ করতে থাকলেন এর পেছনে রয়েছে ভেনেশিয়ানদের হাত।

কাচের জিনিস তৈরির জন্য সবার প্রথমে যে নাম মুখে চলে আসে, তা হচ্ছে ভেনেশিয়ান গ্লাস। রেনেসাঁর পর থেকেই ভেনিসের কাচ প্রস্তুতকারকদের তৈরি কাচের তৈজসপত্র হয়ে উঠতে থাকে ইউরোপীয় অভিজাতদের সংগ্রহের বিষয়। কাচের অনেক নতুন প্রযুক্তিও ভেনেশিয়ানদের আবিষ্কার। ক্রিস্টালো নামে পরিচিত পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা কাচের জন্মস্থানও ভেনিস। আর এই কাচের কারিগরদের বেশিরভাগই ছিলেন ভেনিসের উত্তর দিকের মুরানো দ্বীপগুলোর অধিবাসী।

ভেনিসের এই মুরানো দ্বীপের কারিগররাই পরবর্তীতে পৃথিবীর সেরা আয়না প্রস্তুতকারী হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। ভেনিসের এত সমৃদ্ধির পেছনের অন্যতম কারণ ছিল এর কাচ ও আয়নার কারিগররা। তাদের বানানো আয়না আর কাচের বিলাসবহুল বস্তু রপ্তানি করেই ভেনেশিয়ানরা বাকিদের তুলনায় ধনী হয়ে উঠেছিল। পুরো ভূমধ্যসাগরে কাচের ব্যবসায় একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি করে রেখেছিল ভেনিসের ব্যবসায়ীরা। এদিকে আয়না তৈরির আধুনিক পদ্ধতি বের হওয়ার পর ইউরোপের অভিজাত সমাজের কাছে আয়না হয়ে উঠল 'আবশ্যকীয়' জিনিস।

নিস। অভিজাত নারীরা আয়নায় নিজেদের আভিজাত্য মোড়ানো চেহারা দেখে আরও গর্বিত হয়ে উঠত, ব্যতিক্রম ছিল না পুরুষেরাও। মূলত যার কাছে যত দামি ও অলংকারে সাজানো আয়না, তার সামাজিক মর্যাদা তত বেশি। ফলে ভেনিসের কারিগররা কখনোই দম ফেলার ফুরসত পেতেন না।

১৬৬৫ থেকে ১৬৭০ সালের মাঝে ফ্রান্সের অভিজাত সমাজের মধ্যে আয়না কেনার হিড়িক পড়ে যায়। প্রতিবছর প্রচুর অর্থ খরচ করত ফরাসিরা স্রেফ আয়না কেনার পেছনেই। কেবল ১৬৬৫ সালেই ২১৬টি আয়নাভর্তি বাক্স আমদানি করে ফ্রান্স। আর ভেনিসের আয়নার সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিলেন স্বয়ং ফ্রান্সের রাজা! এক বছরেই কয়েক হাজার পাউন্ড সমমূল্যের আয়না নিজের রাজপ্রাসাদে জড়ো করেন তিনি।

অবশ্য ভেনিসের এই আধিপত্য ধরে রাখার পেছনে কারণও ছিল। আয়না ও কাচ প্রস্তুতের পদ্ধতিকে গোপন রাখতে আয়নার কারিগরদের আলাদাভাবে মূল্যায়ন করত ভেনিসের বণিকেরা। তাদের পারিশ্রমিক হিসেবে বড় অঙ্কের বেতন তো ছিলই, সাথে ছিল নাগরিক সুবিধা (যেটি সব পেশার মানুষ পেত না), করমুক্তির সুবিধা এবং অভিজাত নারীদের বিয়ে করার সুযোগ। এসব সুবিধার পাশাপাশি কাচ তৈরির জ্ঞান যেন মুরানোর বাইরে যেতে না পারে, সেজন্য তাদের অন্য দেশে যাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি কেউ যদি অন্য দেশে পালিয়ে যেতে গিয়ে ধরা পড়ে কিংবা পালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তবে তাকে 'বিচার'-এর আওতায় এনে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে তাদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং পরিবারসহ তাকে প্রায় জিম্মি অবস্থায় রাখা হয়। কয়েক শতক ধরে চলা এই আইনই ছিল ভেনিসের গোপন জ্ঞানকে গোপনই রেখে দেওয়ার অসামান্য অস্ত্র।

এদিকে ভেনিসের এই একচ্ছত্র আধিপত্যে ভাগ বসাতে দৃশ্যপটে হাজির হলেন কোলবার্ট নামের এক ফরাসি বণিক, উদ্দেশ্য আয়নার বাজার থেকে ভেনিসকে হটিয়ে ফ্রান্সকে সে জায়গায় প্রতিস্থাপন করা, গঠন করলেন দ্য রয়্যাল গ্লাস অ্যান্ড মিরর কোম্পানি। উদ্দেশ্য ভেনিস থেকে কয়েকজন দক্ষ কাচ প্রস্তুতকারককে প্যারিসে এনে কাচ প্রস্তুতের জ্ঞান জেনে নেওয়া। ১৫৪৭ সালে জার্মানির রাজা প্রথম লিওপোল্ড তার ব্যক্তিগত কাজের উদ্দেশ্যে দুই কাচ প্রস্তুতকারীকে ডেকে পাঠালে দুজনই আততায়ীর হাতে খুন হয়। ১৫৮৯ সালের দিকে ভেনিস থেকে পালিয়ে যাওয়া আরেক কাচ প্রস্তুতকারক আন্তোনিও ওবিজ্জোকে ধরার জন্য ঘোষণা করা হয় ১০০ পাউন্ড পুরস্কার। কোলবার্ট এসব ইতিহাস ভালো করেই জানতেন, তাই আটঘাট বেঁধেই নেমে পড়লেন ভেনিসকে বুড়ো আঙুল দেখানোর জন্য।

ভেনিস থেকে প্যারিসে

কোলবার্ট ভেনেশিয়ান কারিগরদের প্যারিসে আনার পরিকল্পনা করেছিলেন ১৬৬৪ সালে। তবে তা কার্যকর করতে সময় লেগেছিল প্রায় আড়াই বছর, সাথে প্রচুর খরচ আর ঝক্কিঝামেলা তো রয়েছেই। ভেনিসে থাকা ফরাসি দূত পিয়েরেঁ দ্য বনজিকে কাজে লাগালেন কোলবার্ট। শরীরে ফ্লোরেন্সের রক্ত বইলেও নিজেকে জাত ফরাসি হিসেবে প্রমাণ করতে কোলবার্টের প্রস্তাবে রাজি হলেন বনজি। খোঁজ লাগালেন ভেনিসে, তবে কয়েক মাস পর কোলবার্টের কাছে যে বার্তা পাঠালেন তা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। ভেনিস তার আয়না কারিগরদের কেন্দ্র করে যে দুর্ভেদ্য দেয়াল তৈরি করে রেখেছে, তা ভেদ করে কারিগরদের প্যারিসে পাঠানো মুখের কথা নয়। দুটো ধাপে এ কাজ করার প্রস্তাব করলেন তিনি; প্রথম ধাপে চড়া বেতনের বিনিময়ে ফ্রান্সে কাজ করতে যেতে রাজি হওয়া দক্ষ কারিগরদের খুঁজে বের করতে হবে, অন্যদিকে দ্বিতীয় ধাপে রাজি হওয়া এই কারিগরদের নিরাপদে ফ্রান্সে যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার রাখতে হবে, আর তা হবে ভেনেশিয়ান কাউন্সিলের অজ্ঞাতসারেই।

বনজি অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ফ্রান্সে যেতে রাজি হওয়া বেশ কিছু কারিগরকে খুঁজে বের করলেন। সেজন্য কাজে লাগিয়েছিলেন এক ভাড়া করা ছদ্মবেশী বণিককে। কারিগরদের মধ্যে কয়েকজন আগে থেকেই ভেনেশিয়ান বণিকদের এই চোখে চোখে রাখা থেকে বের হতে চাইছিল, ফলে মোটা অঙ্ক দিয়ে তাদের বাগাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। অন্যদিকে এই কারিগরদের নিরাপদে ফ্রান্সে আনতে ২০০০ পাউন্ডের বিনিময়ে আরেকজনের ঘাড়ে দায়িত্ব দিলেন বনজি। ১৬৬৫-এর গ্রীষ্মে কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই প্যারিসে নিরাপদে পৌঁছালেন ৩ নামীদামি আয়নার কারিগর-লা মত্তা, পিয়েত্রো রিগো এবং জুয়ান দানদোলো। এদিকে এই ৩ জনের অনুপস্থিতি চোখ এড়ায়নি ভেনিসের কর্তৃপক্ষের। সাথে সাথেই তাদের বাসায় খোঁজ লাগানো হলো, চুক্তির কাগজপত্র পাওয়া গেলেও ততদিনে তারা পগারপার। প্যারিসে থাকা ভেনিসের দূতকে এই ৩ জনকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেওয়া হলো, কিন্তু ৩ জন যেন স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।

এদিকে প্রথম ধাক্কায় কোনো ঝামেলা ছাড়াই ৩ জনকে নিয়ে আসতে পারায় কোলবার্ট বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলেন। তিনি আরও কয়েকজনকে প্যারিসে আনার বন্দোবস্ত করতে লাগলেন। তিনি অন্যতম প্রভাবশালী কারিগর ক্যাস্টেলানকে ৪৬০০ পাউন্ডের বিনিময়ে ইতালি থেকে কয়েকজন কারিগর খোঁজার দায়িত্ব দিলেন। ক্যাস্টেলান নিজে না গেলেও তার জামাই মার্ক বর্নিওলেকে পাঠালেন। এদিকে বর্নিওলের এক সহকারী গন্ডোলায় যাতায়াত করার সময় শুনতে পেলেন, দুই ভেনেশিয়ান নাগরিক বলাবলি করছে একজন ফরাসি ভেনিসের আয়নার কারিগরদের ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছে এবং এই বিষয়টি খুব দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত। সহকারী খুব দ্রুত বর্নিওলেকে জানালেন এবং পুলিশ আসার আগেই বর্নিওলে তার কারিগরদের দল নিয়ে পালালেন ভেনিস থেকে। প্রথমে ফেরারে, সেখান থেকে তুরিন, তুরিন থেকে লিওঁ এবং শেষমেশ লিওঁ থেকে প্যারিস, এই ছিল বর্নিওলের যাত্রা পরিকল্পনা। কিন্তু লিওঁতে গিয়ে বিপত্তি বাধল। লিওঁর এক ব্যবসায়ী তাদের ২ হাজার পাউন্ডের বিনিময়ে লিওঁতে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করলেন। বড় অঙ্কের টাকা দেখে ৪ জন রাজিও হয়ে গেলেন, নেমে পড়লেন সেখানেই। এদিকে শহরটির গভর্নরের লোকজন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেই তাদের পালানোর খবর গোপন থাকল না, ৪ জনের জায়গা হলো হাজতে এবং প্রথম সুযোগেই তারা ভেনিসে ফিরে গেল। 

অন্যদিকে বাকি দল প্যারিসে নিরাপদে পৌঁছাল। ভেনিসে ফ্রান্সের নতুন দূত পিয়েরেঁ ফ্লামেন্টের সহযোগিতায় কোলবার্টও আরও বেশ কিছু কারিগরদের হাতে পেলেন। কোলবার্ট এবার কোম্পানিকে পুরোদমে চালু করার মতো যথেষ্ট লোক তার হাতে রয়েছে বলে মনে করলেন। বিশজন ভেনেশিয়ান কারিগরের সাথে আরও কয়েক ডজন ফরাসি কর্মী যোগ হলো কাজ শেখার জন্য। ১৬৬৬ সালের ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখ কোম্পানি তাদের প্রথম নিখুঁত আয়না তৈরি করতে সমর্থ হলো। কোলবার্টের মুখের হাসি হয়ে উঠল আরও চওড়া।

কারখানায় বিপত্তি

আয়না তৈরি শুরু হলেও কাজ খুবই ধীরগতিতে চলছিল। এদিকে কোম্পানির কাজ শুরু হওয়ার পর প্যারিসে থাকা  ভেনিসের দূত সাগ্রেদোও কারিগরদের খোঁজ পেলেন এবং তাদের ভেনিসে ফেরত পাঠানোর জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালাতে থাকলেন। এদিকে কোলবার্টের সাথে প্রায় ১ বছর চিঠি চালাচালি করেও কোনো ফল দেখাতে পারলেন না সাগ্রেদো, কেবল কারিগরদের মাথাপ্রতি কোলবার্টের খরচ বাড়ানো ছাড়া। কোম্পানির প্রধান ভেনেশিয়ান কারিগর আন্তোনিও রিভেত্তা বছরে পেতেন ১২০০ পাউন্ড, আর তার ৩ সহকারীর পেছনে কোম্পানিকে ব্যয় করতে হতো মাথাপিছু ৮০০ পাউন্ড করে। সাগ্রেদো কারিগরদের পরিবারকে আটকে রাখবেন এমন হুমকি দিয়েও কারিগরদের ভেনিসে যেতে রাজি করাতে পারলেন না, তাদের কাছে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির চেয়ে তাৎক্ষণিক লাভই বড় হয়ে দেখা দিতে থাকল। এদিকে সাগ্রেদোর কাছ থেকে কোনোরকম ফল না পেয়ে ভেনিস প্যারিসে তাদের নতুন দূত নিয়োগ দিল, নাম জিউস্তিনিয়ানি।

জিউস্তিনিয়ানির প্রতিও ভেনিসের একই নির্দেশ: যেকোনো মূল্যে কারিগরদেরভেনিসে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে কোলবার্ট তার কোম্পানিকে টিকিয়ে রাখার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এ লক্ষ্যে তিনি রাজাকে কারখানা সফরের অনুরোধ করলেন। কারখানার কাজ দেখে সন্তুষ্ট রাজা চতুর্দশ লুই কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কোলবার্টকে অর্থ সহযোগিতা করতে রাজি হলেন।

এদিকে জিউস্তিনিয়ানির চাপ যে একেবারেই প্রভাব ফেলছিল না, এমন নয়। তার হুমকিতে বেশ কয়েকজন কারিগর ভেনিসে ফিরে যায়। কোম্পানির ভাগ্য ভালো যে তাদের কেউই ওপর দিকের কেউ নয়। তবে এটি প্রমাণ করে দেয় যে কোম্পানি এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এরপর কোলবার্ট সিদ্ধান্ত নেন যে এই কারিগরদের প্যারিসেই স্থায়ী করে ফেলবেন, এজন্য এক কারিগরের ভাতিজাকে দায়িত্ব দেন তাদের স্ত্রীদের কাছে ভেনিস ছেড়ে প্যারিসে চলে আসার নির্দেশ দেওয়ার জন্য। কিন্তু ভেনিসের পুলিশের কাছে আগেই ধরা পড়ে যায় চিঠিগুলোএবং ফিরতি চিঠিতে লিখে পাঠান যে, 'এভাবে ঝুঁকি নিয়ে আসা সম্ভব নয়। বরং তোমরা ভেনিসে এসে আমাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিও ভেনিসে ফিরবে, নাকি প্যারিসে স্থায়ী হবে।' তবে কারিগররা চিঠির ভাষা দেখেই ধরে ফেলেন যে এটি মোটেই তাদের স্ত্রীদের লেখা চিঠি নয় বরং আরও পড়াশোনা জানা কোনো ব্যক্তির।

কোলবার্ট এরপরও চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলেন এই কারিগরদের প্যারিসেই পাকাপাকিভাবে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য। এ জন্য তাদের প্যারিসের অভিজাত নারীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার টোপ ফেলানো হলো। কারিগররা ইতিমধ্যেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্যারিসে পরিচিতি পেয়েছে, তাছাড়া মোটা বেতনে তাদের জীবনও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে কেটে যাচ্ছিল, ফলে অভিজাত সমাজের সাথে মানিয়ে নেওয়া তাদের জন্য কঠিন কিছু ছিল না। 

এদিকে দিন দিন কারিগরদের চাহিদা বেড়েই যাচ্ছিল। কিন্তু এরপরও কোলবার্ট হাল ছাড়তে রাজি নন, যেহেতু তার পেছনে রাজার কৃপা দৃষ্টি রয়েছে। ভেনেশিয়ানরা শেষমেশ বাধ্য হয়েই বাজারে গুজব রটিয়ে দিল যে ভেনেশিয়ান আয়নার মতো ফরাসি আয়না মোটেই টেকসই নয়, বরং তাপমাত্রা কমবেশি হলেই তা ভেঙে যায়। এদিকে কোলবার্টের কানে দুঃসংবাদ আসতে দেরি হলো না। কারিগরদের প্যারিসে আনা থেকে শুরু করে কারখানা তৈরি কিংবা তাদের বেতন, এই বিশাল খরচের বিপরীতে তাদের লাভের অঙ্কের হিসাব বহুদূরে। প্রথম বছরে লাভ থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার পাউন্ড পিছিয়ে আছে রয়্যাল কোম্পানি, আর এ থেকে উত্তরণ পেতে কোম্পানিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে সেই আয়নার কারিগরদের দিকেই। কিন্তু এই ভেনেশিয়ান কারিগররা আয়না তৈরির সময় কোনো ফরাসিকে তাদের কাজের জায়গায় ঢুকতে দিতে রাজি নয়, ফলে ভালো আয়না তৈরির জন্য কেবল ভেনেশিয়ানদের ওপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে কোম্পানিকে। 

এদিকে প্যারিসে প্রথমদিকে আসা লা মত্তা এবং আরেক অভিজ্ঞ রিভেত্তার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হলো। কোম্পানির ভেনেশিয়ান দল দুইভাগে ভাগ হয়ে গেল। দুই দলের বিবাদ শেষমেশ এতটাই বেড়ে গেল যে দুই দল সরাসরি অস্ত্র নিয়ে নেমে পড়ল! লা মত্তার কাঁধে গুলি লাগল, লাগল তার আরেক সহযোগীর হাতেও। দ্বন্দ্ব থামাতে হাজির হতে হলো রয়্যাল গার্ডকে। এদিকে এই দ্বন্দ্বযুদ্ধ থামাতে কোম্পানিকেও গচ্চা দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কাজ থেমে আছে, কিন্তু আগুন জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে! কারণ, আগুন নিভিয়ে দিলেই পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে, ক্ষতি হবে ২০ হাজার পাউন্ডেরও বেশি!

এভাবেই কোনোরকমভাবে গড়িমসি করে কাজ এগিয়ে যাচ্ছিল ১৬৬৬-এর বড়দিন পর্যন্ত। তারপর হঠাৎ করেই মুরানো থেকে আসা প্রথম দলের একজন, যিনি কাচ গলানোর কাজে পারদর্শী, মারা গেলেন। তার কয়েকদিন পরেই দ্বিতীয় আরেকজন মারা গেল। প্যারিসে থাকা কারিগররা এবার ভয় পেয়ে গেল। টাকাপয়সা দিয়ে হলেও নিজেদের জীবন বাজি রেখে তারা আর থাকতে রাজি হচ্ছিল না। দু-একজনও যদি রাজি হয়, তবে পুরো দলই প্যারিস ছেড়ে চলে যাবে এমন ভাব দেখা যাচ্ছিল তাদের মধ্যে। এরকম অবস্থাতেই ভেনিসের দূত জিউস্তিনিয়ানি আবারও হুমকি দেওয়া শুরু করলেন, ঘোষণা করলেন এখন ভেনিসে ফিরে গেলে তাদের কোনোরকম শাস্তি পেতে হবে না। ভেনেশিয়ান কাউন্সিল তাদের কথা রেখেছিল, তাদের পুনরায় তাদের কাজে বহাল রাখা হলো, কিন্তু ঝামেলা বাধল অন্য জায়গায়। মুরানোতে থাকা বাকি কারিগররা প্যারিস থেকে আসা এই কারিগরদের যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করা শুরু করল। তারা বাধ্য হয়ে কাউন্সিলকে তাদের অবস্থার কথা জানাল। কাউন্সিল পুনরায় তাদের প্যারিসে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন।

কিন্তু বিধিবাম! কোলবার্ট তাদের অনুপস্থিতিতে অন্য জায়গা থেকে কারিগর নিয়ে এসেছেন। কারিগররা যখন তাদের পুনরায় কোম্পানিতে কাজ করার অনুরোধ করল, তখন কলবার্ট ঠান্ডা স্বরে জবাব দিলেন, 'তাদের জন্য আমাকে যে ঝামেলা পোহাতে হয়েছে, তাদের দ্বিতীয় সুযোগ দিলে সেরকম যে আবার হবে না, তার নিশ্চয়তা কী?'

৩ বছরের মাথায় রয়্যাল গ্লাস অ্যান্ড মিরর কোম্পানি সাফল্যের মুখ দেখল অনেক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে। ফরাসিরা নিজেরাই নিজেদের পদ্ধতি আবিষ্কার করলেও ইতালীয় দূত প্যারিসে যাওয়া কারিগরদের বিশ্বাসঘাতক অ্যাখ্যা দিয়ে অভিযোগ জানালেন, ফরাসিরা তাদের প্রযুক্তি চুরি করে এ সাফল্য পেয়েছে।

তবে এরপর থেকেই ফ্রান্সের আয়না তৈরির স্বর্ণযুগ শুরু হলো। ভলতেয়ারের ভাষায়, '১৬৬৬ সালের পর থেকেই আমরা ভেনিসের মতোই সুন্দর আয়না বানাতে শুরু করলাম, যেটি কিছুদিনের মধ্যেই ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ল। এগুলোর মধ্যে কয়েকটির আকার এত বড় এবং এত সুন্দর যে এগুলোর সাথে তুলনা করার মতো দ্বিতীয় আয়না আর তৈরি করা হয়নি।'
 

Related Topics

টপ নিউজ

ইজেল

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবে ইরান, আইন প্রণয়ন করছে
  • ইরান কেন রাতে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে
  • চট্টগ্রামে ‘সাংবাদিক’ পরিচয়ে গেস্টহাউসে তল্লাশির ভিডিও ভাইরাল, আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন
  • ২ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সাবেক হাইকমিশনার মুনা তাসনিম ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শুরু
  • “তেহরানের আকাশ এখন আমাদের দখলে”—ইসরায়েলের দাবি, কিন্তু বাস্তবতা কী?
  • ‘মেয়র’ পরিচয়ে নগর ভবনে সভা করলেন ইশরাক

Related News

  • অমিয়শঙ্কর, ঘরে ফিরে যা
  • ঋত্বিক ঘটকের কন্যা: এক অসমাপ্ত আলাপ
  • শোক হতে শ্লোক
  • আমার স্নিকার্স
  • রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবে ইরান, আইন প্রণয়ন করছে

2
আন্তর্জাতিক

ইরান কেন রাতে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে

3
বাংলাদেশ

চট্টগ্রামে ‘সাংবাদিক’ পরিচয়ে গেস্টহাউসে তল্লাশির ভিডিও ভাইরাল, আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন

4
বাংলাদেশ

২ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সাবেক হাইকমিশনার মুনা তাসনিম ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শুরু

5
আন্তর্জাতিক

“তেহরানের আকাশ এখন আমাদের দখলে”—ইসরায়েলের দাবি, কিন্তু বাস্তবতা কী?

6
বাংলাদেশ

‘মেয়র’ পরিচয়ে নগর ভবনে সভা করলেন ইশরাক

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net