Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

পাখির বাসার বৈচিত্র্যময় ভুবন

বর্তমানে দেশের পক্ষীকুল খুবই সংকটময় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। প্রকৃতিতে এখন প্রাচীন বৃক্ষ নেই বললেই চলে। তাই বিশাল আকারের পাখিরা বিদ্যুৎ কিংবা মোবাইল টাওয়ারে বাসা বানানোর জায়গা খুঁজে নিচ্ছে। এতে করে তাদের স্বাভাবিক প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে।
পাখির বাসার বৈচিত্র্যময় ভুবন

ইজেল

সরওয়ার পাঠান
02 December, 2023, 11:05 am
Last modified: 02 December, 2023, 11:09 am

Related News

  • যে বাজারে পা ফেলার জায়গা থাকে না, কিচিরমিচিরে কান পাতা দায়
  • যেসব প্রাণী একে অন্যকে উপহার দেয়
  • সবচেয়ে প্রাচীন বুনোপাখি হিসেবে পরিচিতি তার, ৭৪ বছরে এসে ডিম দিল
  • ব্যালকনিতে ফুলের টবে ঘুঘুর বাসা, ডিম ফুটে বাচ্চা ওঠার অপেক্ষায়
  • গজারি বনের ‘মাছ মুরাল’

পাখির বাসার বৈচিত্র্যময় ভুবন

বর্তমানে দেশের পক্ষীকুল খুবই সংকটময় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। প্রকৃতিতে এখন প্রাচীন বৃক্ষ নেই বললেই চলে। তাই বিশাল আকারের পাখিরা বিদ্যুৎ কিংবা মোবাইল টাওয়ারে বাসা বানানোর জায়গা খুঁজে নিচ্ছে। এতে করে তাদের স্বাভাবিক প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে।
সরওয়ার পাঠান
02 December, 2023, 11:05 am
Last modified: 02 December, 2023, 11:09 am

বাংলাদেশ পাখির দেশ। আজও শহর কিংবা গ্রামে মানুষের ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে। পাখি ছাড়া প্রকৃতির কথা কখনো ভাবা যায় না। পাখি ছাড়া প্রকৃতি টিকেও থাকতে পারবে না। ওরা যে একে অপরের পরিপূরক, পাখিকে বলা হয় প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। গায়ক পাখি, শিকারি পাখি, জলের পাখি, রঙিন পাখি, সাদা পাখি, কালো পাখি; কত বর্ণিল আর বৈচিত্র্যময় পাখির ভুবন।

আমাদের দেশে শত শত প্রজাতির পাখি রয়েছে। এই পাখি প্রজাতি দুই ভাগে বিভক্ত। স্থানীয় কিংবা আবাসিক পাখি, যাযাবর কিংবা পরিযায়ী পাখি। পরিযায়ী পাখিরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এখানে আসে। সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী পাখি এ দেশে আসে অক্টোবর থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত। এ সময়টাতে নানা জাতের ভিনদেশি বুনোহাঁস, শিকারি পাখিসহ নানা জাতের জলজ পাখির আগমন ঘটে। 

অনেকে ধারণা করে থাকেন, শুধু শীতকালেই এ দেশে পরিযায়ী পাখিদের আগমন ঘটে। আসলে কিন্তু তা নয়। পরিযায়ী পাখিরা বিভিন্ন সময় এখানে যাতায়াত করে। এসব পাখির মধ্যে কয়েকটি প্রজাতির পাখি আছে, যারা প্রজননক্রীড়া সম্পন্ন করার জন্য আসে। তখন ওরা বাসা বানায়, ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা বড় করে তোলে।

দেশে বর্তমানে ঠিক কত প্রজাতির পাখি রয়েছে- এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ড. মনিরুল হাসান খান জানান, 'বর্তমান সময়ে দেশে ৭৫০ প্রজাতির অধিক পাখি রয়েছে। এদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ পাখি পরিযায়ী।'

ছবি- রাকিব হাসান

দেশে বসবাসকারী প্রতিটি প্রজাতির পাখি বাসা তৈরির ক্ষেত্রে অত্যন্ত সুনিপুণ কারিগর। স্থানীয় পাখিদের শতকরা ৭৫ ভাগই বাসা বাঁধে মে থেকে জুলাই- এই তিন মাস সময়ের মধ্যে। এ সময়টাতে দেশের প্রকৃতি নানা জাতের পাখির বাসায় ভরে ওঠে। প্রতিটি প্রজাতির পাখি ভিন্ন রকম বাসা তৈরি করে থাকে। এখানে ওদের দেখা যায় কখনো সুনিপুণ স্থপতি, কখনো দক্ষ প্রকৌশলীর ভূমিকায়। অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা এ এক বিস্ময়কর ভুবন।

দেশীয় পাখির মধ্যে সবচেয়ে বড় আকৃতির বাসা তৈরি করে থাকে শকুন, কুড়া, ইগল, মাছ মুরাল, মানিকজোড়, মদনটাক ইত্যাদি। এদের বাসার আকৃতি বড় হলেও মোটেও দৃষ্টিনন্দন নয়। তা ছাড়া বাসা তৈরির বিষয়ে এরা বেশ অলস। বাসা তৈরির কাজকে এরা রীতিমতো ঝামেলার কাজ মনে করে। তাই বছরের পর বছর নতুন বাসা তৈরি না করে একই বাসা ব্যবহার করে থাকে। শুধু ডিম পারার আগে বাসাটাকে ঠিকঠাক করে নেয়। বাসা তৈরির উপাদান হিসেবে এরা ব্যবহার করে থাকে গাছের চিকন শুকনো ডাল। একে অন্যের বাসা দখল করার প্রবণতাও এদের কারও কারও মধ্যে লক্ষ করা যায়। এসব পাখির সবাই সুউচ্চ বৃক্ষের মগডালে বাসা তৈরি করতে পছন্দ করে।

বুলবুলি, ফিঙ্গে, বেনেবউ, ফটিকজল ইত্যাদি পাখির বাসা দেখতে অনেকটা গোল বাটির মতো। এরা অত্যন্ত যতœসহকারে বাসা তৈরির কাজ করে থাকে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ গাছের একেবারে চিকন ডালের শেষ মাথায় বাসা বানায়। ফলে শিকারি প্রাণীরা সহজে ভাষার ক্ষতি করতে পারে না। এই পাখিরা বাসা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে চিকন ঘাস, পাটের আশ, তুলো, মাকড়শার জাল ইত্যাদি। 

ছবি- রাকিব হাসান

আমাদের দেশে বেশ কয়েক প্রজাতির শালিক পাখি রয়েছে। এদের মধ্যে গো শালিক, ভাত শালিক আর ঝুটি শালিকের দেশের প্রায় সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়। শালিখের নিজের দেহ আর ডিম-বাচ্চার তুলনায় এদের বাসার আকৃতি বেশ বড় হয়ে থাকে। গো শালিক আর ভাতশালিক গাছের ডাল, বিদ্যুতের খুঁটির মাথা, দালানের ফাঁকফোকরে বাসা তৈরি করে থাকে। বাসা তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে থাকে লম্বা ধরনের ঘাস, খড়, পুরোনো রশি, চিকন কাঠ ইত্যাদি। বাসা তৈরিতে ঝুটি শালিক প্রায় একই ধরনের বস্তু ব্যবহার করে থাকে। তবে এরা বাসা তৈরি করে গাছের কোটরে। ওখানেই ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা বড় করে তোলে। এ জন্য অনেকের কাছে তারা 'কোটর ময়না' নামে পরিচিত।

দোয়েল হচ্ছে আমাদের জাতীয় পাখি। গ্রাম থেকে শুরু করে শহর- সব জায়গাতেই ওর কমবেশি উপস্থিতি রয়েছে। গ্রামের দোয়েল সাধারণত গাছের ফোকরে বাসা তৈরি করে থাকে। শহরাঞ্চলে গাছের সংখ্যা কম থাকায় দোয়েল পাখিরা সেখানে দালানের ফাঁকফোকর বৈদ্যুতিক পাইপের খোলা মাথা, রাস্তার পাশে টাঙানো সাইনবোর্ডের পেছনের খোলা অংশ ইত্যাদি স্থানে বাসা তৈরি করে থাকে। এদের বাসার আকৃতি গোল বাটির মতো। বাসা তৈরির সম্পূর্ণ কাজটি স্ত্রী পাখি একা করে।

তিতির, গাংচিল, জল কবুতর, হট-টি-টি ইত্যাদি পাখি বাসা তৈরি করে মাটির ওপর। হালতি আর দিনেকানা পাখিরা মাটির ওপরের ছোট ছোট ঝোপে বাসা বানাতে পছন্দ করে। বাসাগুলো প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে।

ছবি- রাকিব হাসান

কাঠঠোকরা, টিয়া, বসন্তবৌরি, পেঁচা ইত্যাদি পাখি বাসা তৈরি করে থাকে গাছের কোটরে। এসব পাখির মধ্যে একমাত্র কাঠঠোকরাই গাছের কা- কিংবা ডালে গর্ত সৃষ্টি করে বাসা বানায়।

এ দেশে বসবাসকারী জলচর পাখিরা সাধারণত জলজ উদ্ভিদের ফাঁকে বাসা করে। কখনো জলার ধারের ঝোপেও বাসা তৈরি করে। কোড়া পাখি বাসা তৈরিতে উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে ধানগাছের পাতা। ঠিক যে স্থান থেকে পাতাগুলো কাটা হয়, সেখানেই ওরা বাসা তৈরি বানায়। তবে কালিম পাখির ধানের পাতা দূরে নিয়েও বাসা তৈরি করার প্রমাণ আছে। ডাহুক পাখি জলার বুকে ঝোপের ধারে কিংবা বাঁশঝাড়ে বাসা তৈরি করে। 

জলচর পাখিদের মধ্যে বাসা তৈরিতে সবচেয়ে পারদর্শী হচ্ছে সরালি, এদের বাসা দেখা যায় কচুরিপানার বুকে, নারকেলগাছের কোটরে, পুরোনো দালানের ফাঁকফোকেরে, নারকেল কিংবা খেজুরগাছের মাথায়। বালিহাঁসের বাসা তৈরির সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হচ্ছে মড়া তালগাছের মাথা; তবে অন্যান্য গাছের কোটরেও বাসা বানায় তারা।

মাছরাঙ্গা, সুইচোরা আর গান শালিক বাসা তৈরির ক্ষেত্রে অন্যান্য পাখির চাইতে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এরা গাছের ডালে ঝোপের ফাঁকে কিংবা গাছের কোটরে বাসা তৈরি করে না। এসব পাখি মাটিতে গর্ত খুঁড়ে গর্তের মধ্যে বাসা তৈরি করে। 

মাটির গর্তে পাখির বাসা, বিষয়টা সত্যি এক অবাক বিস্ময় বটে। এসব পাখির বাসা তৈরির স্থান হিসেবে নদী বা পুকুরের খাড়া পাড়কে বেছে নেয়। পাড়ের ঠিক এমন পয়েন্টে ওরা বাসা তৈরি করে যেখানে সাপ, বেজি বা গুইসাপের মতো শিকারি প্রাণীরা সহজে বেয়ে ওপরে উঠতে পারবে না। বাসা তৈরির প্রথম পর্যায়ে এরা উড়ন্ত অবস্থায় থেকে পাড়ের নির্দিষ্ট স্থানে ঠোট দিয়ে গর্ত খোঁড়া শুরু করে। এভাবে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে একসময় এদের শরীর গর্তের ভেতর চলে যায়। নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত গিয়ে নিজের দেহের মাপ অনুযায়ী একটি গোলাকার জায়গা তৈরি করে। এটাই ওদের বাসা। 

ছবি- রাকিব হাসান

বাসা তৈরির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মেয়ে এবং পুরুষ পাখি উভয় মিলে কাজ করে থাকে। এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার, মাছরাঙাদের মধ্যে একমাত্র মেঘহও মাছরাঙা মাটির গর্তের বদলে গাছের কোটরে বাসা করে।

ধনেশকে বলা হয় নিঝুম অরণ্যের পাখি। আসলে সত্যি তা-ই। গভীর জঙ্গল এলাকায় এদের দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে পাহাড়ি অরণ্যে। বিশাল গর্জন, প্রাচীন উরিআম কিংবা সুউচ্চ সিভিটগাছের প্রাকৃতিক গর্তে এরা বাসা তৈরি করে থাকে। ডিম পাড়ার সময় ঘনিয়ে এলে স্ত্রী পাখিটি বাসার ভেতর গিয়ে বসে এবং ঠোঁট দিয়ে বাসার অভ্যন্তরের জমানো বিষ্ঠার স্তূপের সাহায্যে গর্তের মুখে দেয়াল তোলার কাজ শুরু করে। এ সময় পুরুষ পাখিটি ঠোঁট দিয়ে কাঁদা এনে স্ত্রী পাখিটিকে দেয়। বিষ্ঠা এবং কাঁদার দেয়ালের আড়ালে স্ত্রী পাখিটি একসময় পুরোপুরি বন্দী হয়ে পড়ে। সমস্ত দেয়ালের মধ্যে একটি মাত্র ছিদ্র থাকে। এই ছিত্রের মাধ্যমে পুরুষ পাখিটি স্ত্রী পাখিটিকে খাদ্য সরবরাহ করে থাকে। ডিম ফোটার পরেও প্রায় ১৫ দিন পর্যন্ত পুরুষ ধনেশ স্ত্রী ও বাচ্চাদের খাবার সরবরাহ করে থাকে। বাচ্চাদের বয়স একপক্ষ হওয়ার পর মা পাখি বাসার প্রাচীর ঠোঁট দিয়ে ভেঙে নিজের এবং বাচ্চাদের বন্দিজীবনের অবসান ঘটায়।

ধর্মীয় কারণে মুসলমানদের কাছে আবাবিল অতি পবিত্র এক পাখি। আকারে ছোট হলেও এরা খুবই দ্রুতগামী। দেশের প্রায় সব স্থানে এদের কমবেশি দেখা যায়। এরা মানুষের বসতবাড়ির কার্নিশে বাসা তৈরি করে থাকে। এদের বাসা দেখতে বেশ অদ্ভুত। বাসা তৈরিতে এরা কাদা এবং পালকমিশ্রিত একধরনের মণ্ড ব্যবহার করে।

মৌটুসি পাখিকে কে না চেনে? ফুলে ফুলে উড়ে উড়ে মধু খায় আর মধুর সুরে গান গায়। এই মৌটুসী পাখিরা বাসা তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে। এদের দেহের দৈর্ঘ্য মাত্র ৪ ইঞ্চি হলেও বাসাটির দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে ১৫ ইঞ্চির ওপর।

ছবি- রাকিব হাসান

চড়ুই আমাদের অতি কাছের একটি পাখি। বলতে গেলে যেকোনো দিকে চোখ মেলে তাকাতেই খুব সহজে এরা নজরে পড়ে। এরা মানুষের বসতঘরে বাসা বানাতে পছন্দ করে। ঘরের ছাদ দেয়াল কিংবা কার্নিশের পাশে খড়কুটো দিয়ে বাসা তৈরি করে। মানুষও নিজেদের ঘরে চড়ুই পাখির বাসা বানানোর বিষয়টা মেনে নিয়েছে, এ যেন চড়ুই পাখির এক অলিখিত অধিকার। 

দেখতে অনেকটা চড়ুই পাখির মতো আরেক পাখির নাম হচ্ছে বাবুই। তবে বাসা তৈরিতে চড়ুই পাখির সঙ্গে রয়েছে এর বিস্তর পার্থক্য। এই চড়ুই আর বাবুই পাখির বাসা তৈরি নিয়ে কবি রজনীকান্ত সেনের 'স্বাধীনতার সুখ' নামে বিখ্যাত একটি কবিতা রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে- 'বাবুই পাখিরে ডেকে বলিছে চড়াই/ কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই!' এই ছন্দময় কবিতাংশটির সূত্র ধরে বলা যায়- বাবুই পাখিরা শিল্পের বড়াই করার মতো বাসা তৈরি করে বটে। 

অপূর্ব কৌশলে লম্বা ধরনের ঝুলন্ত বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখি বিখ্যাত। খেজুর, নারকেল, তাল ইত্যাদি গাছের পাতা ঠোঁট দিয়ে সরু করে চিরে তার সাথে দীর্ঘ শুকনো ঘাস মিশিয়ে এরা বাসা বোনে। বাসা তৈরির সময়টাতে বাবুই পাখি ভীষণ ব্যস্ত এবং উদ্বিগ্ন থাকে। এদের বাসার প্রবেশ পথটি লম্বা এবং সরু ধরনের। বাসার ভেতরে যে জায়গায় মেয়ে পাখিটি ডিম পাড়বে, সেখানে পুরুষ পাখিটি সুন্দর করে কাদা লেপন করে দেয়। বাসা তৈরির কাজ অর্ধেক শেষ হওয়ার পর মেয়ে পাখিটি উড়ে এসে যেসব পাতা ও ঘাস দিয়ে বাসা তৈরি করা হচ্ছে, সেগুলোকে ঠোঁট দিয়ে টানতে শুরু করে। তার ঠোঁটের টানে বাসা থেকে ঘাস-পাতা ছুটে গেলে সে অন্যত্র উড়ে যাবে। তার এভাবে চলে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে বাসা বানানোর ধরন তার পছন্দ হয়নি। এই বাসায় সে ডিম পাড়বে না। আর যদি বাসা পছন্দ হয়ে যায়, তাহলে পুরুষ পাখিটি তাকে বাসার কাজ সম্পন্ন করে দেয়। 

স্ত্রী পাখিটি ডিম পাড়ার পর পুরুষ পাখিটি অন্যত্র চলে যায় আরেকটি বাসা তৈরির উদ্দেশ্যে। প্রজনন মৌসুমে একটি পুরুষ বাবুই ৪-৫টি বাসা তৈরি করে থাকে। প্রতিটি বাসারই প্রধান কর্তা থাকে সে।

আমাদের দেশের শত শত পাখি প্রজাতির মধ্যে বাসা তৈরিতে সবচেয়ে পারদর্শী বলা হয় টুনটুনি পাখিকে। ক্ষুদ্র আকৃতির এই পাখিকে ইংরেজিতে বলা হয় টেইলর বার্ড; বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় দরজি পাখি। বাসা তৈরিতে টুনটুনিদের নৈপুণ্য অন্য সব পাখিকে ছাড়িয়ে গেছে। এরা বাসা তৈরি করে গাছের পাতায়। ডুমুর, জল ডুমুর, পাতাবাহার, মেহগনি, আম ইত্যাদি গাছের পাতায় ওরা বাসা করে থাকে। 

বাসা তৈরির প্রথম পর্যায়ে এরা দুটো পাতাকে একত্র করে ঠোঁট দিয়ে তুলোর সাহায্যে সেলাই শুরু করে। বাসার নিরাপত্তার জন্য পাতার দুদিক শক্ত করে সেলাই করে। অপূর্ব নৈপুণ্যের সঙ্গে এরা সেলাইয়ের কাজটি সম্পন্ন করে থাকে। আর সেলাইটিকে দৃঢ় করার জন্য সুতোর শেষ প্রান্তে বিশেষ ধরনের গিঁট দিয়ে থাকে। বাসার ভেতরের অংশ তৈরি করতে এরা ব্যবহার করে চিকন ঘাস, নরম তুলো, মানুষের মাথার চুল ইত্যাদি। এরা সাধারণত মাটি থেকে এক মিটার উঁচুতে বাসা তৈরি করে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ঘাটতি দেখা দিলে আরও উঁচুতে বাসা বানায়।

দেশের প্রকৃতিতে এমন কিছু পাখি রয়েছে, যারা কখনোই বাসা তৈরি করে না। এরা খুবই ফাঁকিবাজ এবং ধূর্ত। ডিম পাড়ে অন্য পাখির বাসায়। 'ব্রুট প্যারাসাইট' বা বাসা পরজীবী এসব পাখি সুযোগ বুঝে অন্য পাখির বাসায় ডিম পেড়ে পালিয়ে যায়। ডিম ফোটানো কিংবা বাচ্চা লালন-পালনের কোনো দায়িত্বই এদের পালন করতে হয় না। দেশে বাসা পরজীবী পাখির মধ্যে কোকিল, বউ কথা কও, চোখ গেল এবং পাপিয়ার নাম উল্লেখযোগ্য।

বর্তমানে দেশের পক্ষীকুল খুবই সংকটময় অবস্থার মধ্যে রয়েছে। প্রকৃতিতে এখন প্রাচীন বৃক্ষ নেই বললেই চলে। তাই বিশাল আকারের পাখিরা বিদ্যুৎ কিংবা মোবাইল টাওয়ারে বাসা বানানোর জায়গা খুঁজে নিচ্ছে। এতে করে তাদের স্বাভাবিক প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। প্রাকৃতিক জলাভূমির জলজ উদ্ভিদ পরিষ্কার করে করা হচ্ছে মাছের চাষ, জলচর পাখিরা তাই মহাবিপদে। মানুষ তাদের প্রয়োজনে একের পর এক বৃক্ষ নিধন করে চলেছে। গ্রামীণ ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করে গড়ে উঠছে বাড়িঘর। 

পাখিরা তাই বাধ্য হয়ে বাসা তৈরির জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রায়ই মানুষের উপস্থিতিতে বিঘ্নিত হচ্ছে ডিম বাচ্চার নিরাপত্তা। একটি প্রাণী যুগের পর যুগ পৃথিবীতে টিকে থাকে প্রজননের মাধ্যমে। তাই প্রজননক্ষেত্রের নিরাপত্তা বিধান না করতে পারলে অচিরেই দেশের বুক থেকে অনেক জাতের পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

পরিত্রাণের একটাই উপায়, দেশের মানুষকে প্রকৃতি, বন্য প্রাণী এবং পরিবেশের ভারসাম্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। আরেকটা কথা সবারই জেনে রাখা দরকার, প্রকৃতি যদি কখনো পাখিশূন্য হয়ে পড়ে, তাহলে এই পৃথিবী মানবশূন্য হতে খুব বেশি দিন সময় লাগবে না। তাই নিজেদের বেঁচে থাকার তাগিদেই পাখিদের বাঁচিয়ে রাখা দরকার।
 

Related Topics

টপ নিউজ

পাখি / পাখি শিকারি / পাখি সংরক্ষণ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের সম্পত্তি জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি
  • ‘পুলিশ যেতে ভয় পেয়েছে’: মুজিবের বাড়ি ভাঙার সময় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার প্রশ্নে ইউনূস
  • দিল্লিতে দাবা টুর্নামেন্ট: রানী হামিদের সঙ্গীকে ঢুকতে দেয়নি ভারত, ঘটনায় ‘বিপর্যস্ত’ ৮০ বছর বয়সি এ দাবাড়ু
  • নেটিজেনদের সমালোচনার মুখে স্টারমার সম্পর্কে প্রেস সচিবের বক্তব্য
  • পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের অংশ হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই: ড. ইউনূস
  • মায়ের মৃত্যুতে প্যারোলে মুক্তি পেলেন সাংবাদিক দম্পতি ফারজানা রুপা-শাকিল আহমেদ

Related News

  • যে বাজারে পা ফেলার জায়গা থাকে না, কিচিরমিচিরে কান পাতা দায়
  • যেসব প্রাণী একে অন্যকে উপহার দেয়
  • সবচেয়ে প্রাচীন বুনোপাখি হিসেবে পরিচিতি তার, ৭৪ বছরে এসে ডিম দিল
  • ব্যালকনিতে ফুলের টবে ঘুঘুর বাসা, ডিম ফুটে বাচ্চা ওঠার অপেক্ষায়
  • গজারি বনের ‘মাছ মুরাল’

Most Read

1
বাংলাদেশ

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের সম্পত্তি জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি

2
বাংলাদেশ

‘পুলিশ যেতে ভয় পেয়েছে’: মুজিবের বাড়ি ভাঙার সময় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার প্রশ্নে ইউনূস

3
খেলা

দিল্লিতে দাবা টুর্নামেন্ট: রানী হামিদের সঙ্গীকে ঢুকতে দেয়নি ভারত, ঘটনায় ‘বিপর্যস্ত’ ৮০ বছর বয়সি এ দাবাড়ু

4
বাংলাদেশ

নেটিজেনদের সমালোচনার মুখে স্টারমার সম্পর্কে প্রেস সচিবের বক্তব্য

5
বাংলাদেশ

পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের অংশ হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই: ড. ইউনূস

6
বাংলাদেশ

মায়ের মৃত্যুতে প্যারোলে মুক্তি পেলেন সাংবাদিক দম্পতি ফারজানা রুপা-শাকিল আহমেদ

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab