Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Wednesday
June 11, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
WEDNESDAY, JUNE 11, 2025
অমর্ত্য সেনের ঢাকা

ইজেল

ভাষান্তর: এম এ মোমেন
25 September, 2021, 03:25 pm
Last modified: 27 September, 2021, 01:44 pm

Related News

  • বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমাকে ব্যথিত করেছে, ড. ইউনূসকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে: অমর্ত্য সেন
  • বাবা সুস্থ আছেন, গুজব ছড়াবেন না, জানালেন অমর্ত্য সেনের মেয়ে
  • অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে ‘কড়া পদক্ষেপ’ গ্রহণের হুঁশিয়ারি বিশ্বভারতীর
  • অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের নোটিশ বিশ্বভারতীর, বাড়ির নথিপত্র নিয়ে শুনানিতে হাজিরের পরামর্শ
  • জমি বিতর্কে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে ক্ষমা চাইতে বললেন অমর্ত্য সেন

অমর্ত্য সেনের ঢাকা

অমর্ত্য সেন যে ঢাকার মানুষ এবং বিশ্বেরও মানুষ, তাঁর স্মৃতিকথা 'হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড : এ মেমোয়ার'-এ সে কথা বলেছেন।
ভাষান্তর: এম এ মোমেন
25 September, 2021, 03:25 pm
Last modified: 27 September, 2021, 01:44 pm
অমর্ত্য সেন: ১৯৫৮ সালে ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে। ছবি: সংগৃহীত

একটি ব্যক্তিগত ভূমিকা

[আশির দশকে অমর্ত্য সেনের সাথে যাদের সাক্ষাৎ করার এবং কিছু কথা বলার সুযোগ হয়েছে, আমি তাদের একজন। দুর্ভিক্ষ ও লাগাতার ক্ষুধা নিয়ে তাঁর গবেষণা ও বক্তৃতা যাদের চিন্তা-প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনেছে, আমি তাদেরও একজন।

অমর্ত্য সেন যে ঢাকার মানুষ এবং বিশ্বেরও মানুষ, তাঁর স্মৃতিকথা 'হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড : এ মেমোয়ার'-এ সে কথা বলেছেন। বইটির ইংরেজি আলোচনা লিখতে গিয়ে অশ্বিনী কুমার তাঁর লেখার শিরোনাম করেছেন 'ঘরে বাইরে'। বটেই। অমর্ত্য সেনের যে জীবন, তাতে ঘরে আর বাইরে একাকার।

নব্বইয়ের দশকের প্রথম ভাগে আমার নিজের পিএইচডির সূচনাকালে আমার সুপারভাইজার রিচার্ড কেভিন বুলার্ড একটুখানি ঠাট্টার স্বরে বললেন, অমর্ত্য সেন হচ্ছেন গ্লোবাল পোভার্টির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত তারাপদ রায়ের 'ভাল আছ, গরিব মানুষ' কবিতাটিও অমর্ত্য সেন প্রসঙ্গে তুলে এনেছে। এটি উদ্ধৃতি দিতে ইচ্ছে করছে।

অমর্ত্য সেনের ছবি ক্যালেন্ডারে
গরিব মানুষ,
এবার তোমার হিল্লে হয়ে গেল।
গরিব মানুষ
তোমার কি খিদে পায়, কত ক্যালরির খিদে পায়,
খিদে পেলে তোমার কি খুব কষ্ট হয়?
তোমার কি ছেলেমেয়ে আছে,
তারা কি ইস্কুলে যায়
তারা কি ওষুধ পায় অসুখে-বিসুখে?
তাদের জননী- সে কি তোমার সমান ভাত খায়,
সমান ক্যালরি।
অমর্ত্য সেনের ছবি ক্যালেন্ডারে,
গরিব মানুষ
এবার তোমার দিন এসে গেছে, ক্যালেন্ডার দ্যাখো,
তোমার ঝুপড়িতে কিংবা কুঁড়েঘরে হয়ত মানাবে না।
তবু অমর্ত্য সেনের ছবি ক্যালেন্ডারে,
মন্ত্রিসভা, সচিব ও সাংসদ
সবাই তোমায় খোঁজে, খুঁজে হয়রান।
তুমি কি রকম আছ, ভাল আছ।
গরিব মানুষ।

অমর্ত্য সেন ১৯৯৮ সালে অর্থনীতির  নোবেল পুরস্কার পান। বিধান অনুযায়ী নিজেকে পরিচিত করাতে নিজের জীবনের একটি স্কেচ দাখিল করেছিলেন নোবেল কমিটিতে। সেখান থেকে প্রথম অনুচ্ছেদের খানিকটা তুলে ধরছি :

আমার জন্ম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এবং দেখা যাচ্ছে আমার জীবনের পুরোটাই কোনো না কোনো ক্যাম্পাসে কাটিয়েছি। আমি এখনকার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মানুষ। আমার পরিবারের পূর্বপুরুষ, আমার পিতৃপুরুষের বাড়ি পুরান ঢাকার ওয়ারিতে, রমনার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে দূরে নয়। আমার বাবা আশুতোষ সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন পড়াতেন। আমার জন্ম অবশ্য শান্তিনিকেতনে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে।]

অমর্ত্য সেনের স্মৃতিকথা 'হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড'-এর প্রচ্ছদ। ছবি: সংগৃহীত

অমর্ত্য সেনের স্মৃতিকথার প্রথম অধ্যায়ের নির্বাচিত অংশের বাংলা ভাষান্তর

লন্ডনে বিবিসির সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার বাড়ি কোথায় বলে আপনি মনে করেন? আমরা তখন সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তিনি আমার জীবনী ধরনের কিছু একটাতে চোখ রাখছিলেন। বললেন, 'আপনি কেবলই এক ক্যামব্রিজ থেকে অন্যটাতে গেলেন, হার্ভার্ড থেকে ট্রিনিটিতে; কয়েক দশক ধরে আপনি ইংল্যান্ডে বসবাস করছেন এবং তারপরও আপনি ভারতীয় নাগরিক রয়ে গেছেনÑআমার ধারণা, আপনার পাসপোর্ট ভিসাতে ঠাসা।
বেশ তাহলে আপনার বাড়ি কোথায়?

এটা ১৯৯৮ সালের ঘটনা, শিক্ষক হিসেবে আমি ট্রিনিটি কলেজে পুনরায় যোগদান করেছি (এটাই সাক্ষাৎকারের উপলক্ষ)।

আমি বললাম, 'এখানে তো বেশ নিজের বাড়ির মতোই মনে হচ্ছে।' ব্যাখ্যা করলাম যে ট্রিনিটির সাথে আমার অনেক দিনের সম্পর্ক, এখানে আমি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ছিলাম, এখানেই রিসার্চ স্টুডেন্ট, রিসার্চ ফেলো এবং তারপর শিক্ষক। কিন্তু সাথে আমি এটাও যোগ করলাম যে অপর ক্যামব্রিজে হার্ভার্ড স্কয়ারের পাশে আমাদের পুরোনো বাড়িটাতে থাকতাম, একই রকম মনে হতো। ভারতেও আমি বেশ ভালোই অনুভব করি, বিশেষ করে আমাদের ছোট্ট বাড়িটাতে, যেখানে আমি বেড়ে উঠেছি, সেখানে নিয়মিত ফিরে যেতে আমার ভালো লাগে।
বিবিসির সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী বললেন, তাহলে বাড়ি সম্পর্কে আপনার নিজের কোনো ধারণা নেই।

আমি বললাম, 'আমাকে স্বাগত জানানোর মতো একাধিক বাড়ি রয়েছে। কিন্তু একটি সুনির্দিষ্ট বাড়িই যে থাকতে হবে, আমি তার সাথে একমত নেই।'

বিবিসির সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী আমার কথায় সায় দিচ্ছেন, এটা মোটেও মনে হয়নি।

কেবল সুনির্দিষ্ট উত্তরের জন্য অন্যান্য প্রশ্নে আমি যেভাবে সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছি, তাতে আমার এমনই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমাকে প্রশ্ন করেছে, 'আপনার প্রিয় খাবার কোনটি? এ প্রশ্নের অনেক জবাব হতে পারে, তবে আমি সাধারণত বিড়বিড় করে tagliolini con vongole  বা সিচুয়ান ডাক এবং অবশ্যই ইলিশ মাছের কথা বলে থাকি; ইংরেজরা ভারতে তাদের আকাঙ্ক্ষার স্বাধীনতা নিয়ে এটাকে বলত হিলশা ফিশ। কিন্তু আমি ব্যাখ্যা করতে শুরু করি, এটাকে ঢাকার সঠিক স্টাইলে বাটা সরিষা দিয়ে রান্না করতে হবে। এ ধরনের জবাব প্রশ্নকারীকে সন্তুষ্ট করতে পারে না- যিনি প্রশ্ন করেন: কোনটা সত্যিই আপনার পছন্দের খাবার?

আমি জবাব দিই, আমি সবকটাকেই পছন্দ করি, কিন্তু তাই বলে এগুলোর কোনো একটাকে আমার একমাত্র খাবার বানিয়ে জীবন ধারণ করতে চাই না। আমার সাথে কথোপকথনে অংশগ্রহণকারীরা কখনো মনে করেন না, তাদের সুন্দর প্রশ্নের একটি যুক্তিসংগত উত্তর আমি দিয়েছি। ভাগ্য ভালো থাকলে খাবারের আলোচনায় আমি ধীর সম্মতি জানাই- কিন্তু বাড়ির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যখন, কখনো তা করিনা। 'অবশ্য আপনার নিজস্ব একটি নির্দিষ্ট জায়গা আছে, যাকে আপনি সত্যিই নিজের বাড়ি মনে করেন?' এটাই প্রশ্ন।

১৯৪৮ সালে শান্তিনিকেতনে বোন সুপর্ণা ও চাচাতো বোন মীরার সঙ্গে অমর্ত্য সেন। ছবি: সংগৃহীত

(দুই)
কেবল একটি স্থান কেন? সম্ভবত আমার জবাব অবলীলায় শিথিল হয়ে আসে। ঐতিহ্যগত বাংলায় প্রশ্নটি হচ্ছে, আপনার বাড়ি কোথায়? এর একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ আছে, ইংরেজিতে করা প্রশ্নে যা বোঝায় সম্ভবত তার চেয়ে ভিন্ন। হোম মানে ঘর বা বাড়ি, কয়েক প্রজন্ম আগে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করা আপনার পরিবার কোত্থেকে এসেছে- এমনকি যদিও আপনি বা আপনার ঠিক আগের প্রজন্মের মানুষটি অন্য কোথাও থাকেন, তাতে প্রশ্নের মানের এমন কোনো হেরফের হয় না। উপমহাদেশজুড়েই এ ধরনের কথার প্রচলন রয়েছে, আর যদি তা ইংরেজি কথোপকথনে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা ভারতীয় ইংরেজিতে যে চিত্রটি তুলে ধরবে, 'হোয়ার ডু ইউ হেইল ফ্রম?' আপনার বাড়ি হবে সেটাই, যেখান থেকে কয়েক প্রজন্ম আগে আপনার পূর্বপুরুষেরা উঠে এসেছে, এমনকি সেখানে হয়তো আপনি কখনোই যাননি।

অমর্ত্য সেনের অমিতা সেন

আমার যখন জন্ম হয়, আমার পরিবার তখন ঢাকায় বাস করত, যদিও সেখানে আমার জন্ম হয়নি। সময়টা ছিল ১৯৩৩ সালের শরৎকাল। আমি পরে জেনেছি, বছরটা ছিল ইউরোপে বাড়িঘর ও জীবন হারানোর এক ভয়ংকর বছর। ষাট হাজার পেশাজীবী লেখক, শিল্পী, বৈজ্ঞানিক সংগীতশিল্পী, অভিনেতা, চিত্রশিল্পী জার্মানি থেকে অভিবাসী হয়ে অধিকাংশই ইউরোপের অন্যান্য দেশে এবং আমেরিকায় চলে এসেছেন। ইহুদিদের কেউ কেউ ভারতেও এসেছেন।

বাংলাদেশের এখনকার প্রাণ সঞ্চারক রাজধানী, যা জীবন্ত, ক্রমবর্ধমান এবং অনেকটা হতবাক করে দেওয়া শহর। সে সময় ছিল শান্ত ও ছোট একটি জায়গা, সেখানে জীবন ধীরগতিতে প্রশান্তির মধ্য দিয়ে এগিয়েছে।

আমরা শহরের পুরোনো ঐতিহাসিক অংশে বাস করতাম, সেই জায়গাটির নাম ওয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস রমনা থেকে খুব দূরে নয়, সেখানে আমার বাবা আশুতোষ সেন রসায়ন পড়াতেন। পুরান ঢাকা এতটুকুই, নতুন ঢাকা একে ছাড়িয়ে বহু বহু মাইল বিস্তৃত হয়েছে।

আমার বাবা-মা ঢাকায় খুব সুখী ছিলেন। একইভাবে আমি ও আমার চার বছরের ছোট বোন মঞ্জুও সুখী ছিলাম। বাড়িটা বানিয়েছিলেন আমার পিতামহ সারদা প্রসাদ সেন, তিনি ঢাকা কোর্টের জজ ছিলেন। আমার কাকা, বাবার বড় ভাই জিতেন্দ্র প্রসান সেন কদাচিৎ সেখানে থেকেছেন। সরকারি চাকুরে হিসেবে তিনি তাঁর পদায়নের কারণে বাংলার বিভিন্ন স্থানে বাস করেছেন। কিন্তু তিনি যখন ছুটিতে ঢাকায় আমাদের যৌথ পরিবারে এসে হাজির হতেন (বিশেষ করে যখন তাঁর কন্যা আমার প্রায় সমবয়সী মীরাদিকে নিয়ে), তখনই আমার বালক জীবনের তীব্র আনন্দময় সময়টা শুরু হয়। ঢাকায় আমার অন্য কাজিনরা থাকতেন (চিনিকাকা, ছোট কাকার বাড়ি, মেজদা, বাবুরা এবং অন্যরা)। তাঁদের কাছ থেকে আদর ও আস্কারা পেয়ে আমি আর মঞ্জু বরং বখেই যাচ্ছিলাম।

বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানো আমার এই কাকার বড় ছেলে (তাঁকে ডাকা হতো বাসু, কিন্তু আমি বলতাম দাদামণি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন এবং আমাদের বাড়িতে থাকতেন, আমার জন্য তিনি ছিলেন জ্ঞান ও আনন্দ আহরণের অসীম এক উৎস। বাচ্চাদের ধরে রাখার মতো সিনেমা তিনি খুঁজে বের করতেন এবং তাঁর উদ্যোগেই আমার তখনকার বাস্তব পৃথিবীর দেখা পাই দ্য থিফ অব বাগদাদ-এর মতো ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্রে।

আমার শৈশবস্মৃতির মধ্যে রয়েছে আমার বাবার ল্যাবরেটরিতে যাওয়া এবং প্রবল উত্তেজনা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যে টেস্টটিউবের একধরনের তরল অন্য টেস্টটিউবের অন্য একধরনের তরলের সাথে মিশে সম্পূর্ণ ভিন্ন ও অপ্রত্যাশিত একটা কিছু তৈরি করে। আমার বাবার সহকারী করিম আমাকে অবাক করা এসব পরীক্ষা ল্যাবরেটরিতে করে দেখাতেন, আমি বরাবরই ভেবেছি, তার প্রদর্শনীগুলো সত্যিই বিস্ময়কর।

আমার গর্ব করা সংস্কৃত ভাষার জ্ঞান নিয়ে ১২ বছর বয়সে আমি যখন প্রথম ভারতীয় বস্তুবাদী লোকায়ত দর্শনের খানিকটা পড়তে পারলাম, ল্যাবরেটরির সেই স্মৃতি আমার কাছে ফিরে এল। খ্রিষ্টজন্মের ছয় শ বছর আগে ভারতে লোকায়ত শিক্ষার বিকাশ ঘটে: কেবল বস্তু যখন দেহে রূপান্তরিত হয়, বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টিলাভ করে; বিভিন্ন দ্রব্যের মিশ্রণে যে উন্মত্ত শক্তির সৃষ্টি হয়, যখন তার বিলয় ঘটে, তাৎক্ষণিকভাবে বুদ্ধিসত্তারও বিনাশ ঘটে। এই বিশ্লেষণটি আমার কাছে বেদনাদায়ক মনে হয়Ñআমি রসায়নের চেয়ে বেশি কিছু আমার জীবনে পেতে চাই এবং 'তাৎক্ষণিভাবে বিলয়' ঘটার ধারণাটি আমার মোটেও পছন্দ হয়নি। যখন আমার বয়স বাড়ে এবং জীবনের অনেক তত্ত্ব নিয়ে ভাবতে শুরু করি, তখনই আমার একেবারে শুরুর স্মৃতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরিতে করিমের প্রদর্শন করা পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো তাদের জ্যান্ত ও তাড়া করানো উপস্থিতি ঘোষণা করে।

আমি জানি, আমি ঢাকার, কিন্তু শহুরে অনেক বাঙালির মতো আমিও জানি, আমার বাড়ি গ্রামে, যেখান থেকে আমার পরিবার শহরে উঠে এসেছে- আমার বেলায় দুই প্রজন্ম আগে। আমার গ্রাম, যেখান থেকে আমার বাবার পরিবার উঠে এসেছে, মানিকগঞ্জের একটি ছোট্ট গ্রাম মাত্তো। গ্রামটা ঢাকা শহর থেকে খুব দূরে নয়, আমি যখন শিশু ছিলাম, বিভিন্ন নদীর তন্তুজাল ধরে নৌকায় সেখানে পৌঁছতে দিনের একটি বড় অংশ কেটে যেত। এখনকার দিনে তুলনামূলকভাবে ভালো রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মাত্তো পৌঁছা যায়। আমরা বছরে একবার সেখানে যেতাম, প্রতিবার কয়েক সপ্তাহের জন্য, তখন আমি দারুণ স্বস্তি বোধ করতাম এই ভেবে যে আমি বাড়ি ফিরে এসেছি। উৎসবের সময় দূর শহর থেকে আরও অনেক ছেলেমেয়ে এই গ্রামে এসে ভিড় জমাত, ফলে খেলার সঙ্গীর কোনো অভাব হতো না। আমাদের মধ্যে চমৎকার মৌসুমি বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়; আমাদের যখন শহরে ফেরার সময় এসে যায়, আমরা তাদের এক বছরের জন্য বিদায় জানাই।

পুরান ঢাকায় আমাদের বাড়ির নাম ছিল 'জগৎ কুটীর'- মানে বিশ্বের গৃহ। এতে আমার পিতামহের জাতীয়তাবাদের প্রতি সন্দিহান থাকার প্রবণতা আংশিক প্রকাশ পায়, যদিও বৃটিশ রাজের বিরুদ্ধে লড়াই করা বেশ কজন জাতীয়তাবাদী আমাদের পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। এই নামটি একই সঙ্গে আমার বাড়ির দিদিমার নাম, দাদার প্রয়াত স্ত্রী জগৎলক্ষ্মীর স্মৃতিকেও ধারণ করে। আমার জন্মের আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। জগৎলক্ষ্মীর স্মৃতি ধারণ করা অনেক জ্ঞান বিভিন্নভাবে আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে- যেমন আমি এখনো হেঁচকি ওঠার প্রতিকার হিসেবে ঠান্ডা পানিতে চিনি মিশিয়ে চামচে নেড়ে ধীরে ধীরে পান করি। হেঁচকি থামানোর এবং শ্বাসরুদ্ধ হওয়া নিজের মৃত্যু ঠেকানোর এটি একটি মধুর প্রতিকার।

আমার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন, তাঁর বাবা সারদা প্রসাদ সেন ছিলেন জজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেও তিনিও নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন- আইনগত ও অর্থ ব্যবস্থাপনায় সহায়তার মাধ্যমে। আমাদের ঢাকার বাড়ি থেকে মানুষ বরাবর আসা-যাওয়ার মধ্যেই থাকত। এসব অভ্যাগতরা বিভিন্ন সময় কোথায় কী করেছেন, তা আমাকে বলতেন। এসব স্থান খুব দূরে নয় (এর মধ্যে অবশ্যই কলকাতা, দিল্লি, বোম্বাই, হংকং এবং কুয়ালালামপুরও থাকত) কিন্তু আমার শৈশব-কল্পনায় পৃথিবী এসব স্থানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ওপর তলার বারান্দায় সুঘ্রাণ চাম্পাগাছের নিচে আমি বসে থাকতে পছন্দ করতাম।  সেখানে আমি তাদের ভ্রমণ ও অভিযানের কাহিনি শুনেছি আর ভেবেছি এসব একদিন আমার জীবনেও ঘটবে। যখন আমার মা অমিতা বিয়ে করলেন, তাঁর শেষ নাম (লাস্ট নেইম) বদলাবার কোনো দরকার হলো না, আমার নানা সংস্কৃত ও ভারতীয় দর্শনের পণ্ডিত ক্ষিতি মোহন সেন। আমার মায়ের প্রাক্-বৈবাহিক নাম এবং আমার বাবার শেষ নাম এক হওয়ায় বদলাবার প্রয়োজন হয়নি। এমনকি এখনো পরিচিতি নিশ্চয়নের জন্য যখন নিরাপদ যোগাযোগের কর্তারা মায়ের প্রাক্-বৈবাহিক নাম জিজ্ঞেস করেন, আমাকে বলতে হয়- আমি তাই তো বলেছি।

সাইকেল চালাতে ভালোবাসেন অমর্ত্য সেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী নামের প্রতিষ্ঠানে পড়াতেন ক্ষিতি মোহন সেন। জগতের (বিশ্ব) সাথে জ্ঞানের (ভারতী) সমাহার ঘটিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যও প্রকাশ করা হয়েছে। একটি বিশিষ্ট বিদ্যালয়কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান, এতে উচ্চতর গবেষণার সুযোগও সৃষ্টি করা হয়েছে, এর পরিচিতি ব্যাপক। ১৯০১ সালে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেছেন। ক্ষিতি মোহন কেবল রবীন্দ্রনাথের একজন সহযোগীই ছিলেন না, বিশ্বভারতীকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন, পড়াশোনার জগতে, তিনি বিশেষ করে তাঁর সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দি ও গুজরাটি ভাষায় লিখিত বইয়ের মাধ্যমে বড় অবদান রেখেছেন। 

আমার মায়ের পরিবারের সকলেই রবীন্দ্রনাথের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ট ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুর যে নতুন শৈলী উদ্ভাবন করতে চেয়েছেন, তাতে আমার মা অমিতা দক্ষ মঞ্চ নৃত্যশিল্পী হয়ে উঠেছিলেনÑএই শৈলীকেই বলা যায় আধুনিক নৃত্য (তখন অত্যন্ত আধুনিক মনে হয়ে থাকতে পারে)। কলকাতায় ঠাকুরের বিভিন্ন নৃত্যনাটকে আমার মা মুখ্য চরিত্র মঞ্চায়ন করেছেন- সে সময় 'ভালো পরিবারের' নারীরা কেউ মঞ্চে আসতেন না। শান্তিনিকেতন স্কুলে আমার মা যেমন জুডো শিখেছেন, অন্য নারীরা তা-ও করতে চাননি। শতবর্ষ আগে ঠাকুরের এই স্কুল ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্যই যে সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, সেই সাক্ষ্যই দেয়।

যখন আমার মা-বাবার বিয়ের আয়োজন করা হয়, বাবা খুবই মুগ্ধ ছিলেন। আমি জেনেছি, অমিতা ছিলেন সেকালের মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রথম দিককার একজন নারী, যিনি অত্যন্ত উঁচু মানের সাহিত্যগুণসম্মত নাটকে নৃত্যশিল্পীর ভূমিকা নিয়ে মঞ্চে উঠেছেন। আমার বাবার কাছে অমিতার মঞ্চ ভূমিকার প্রশংসা করা খবরের ক্লিপিংস যেমন ছিল, তেমনি ছিল রক্ষণশীল সমালোচনা, যাতে নারীর জনসমক্ষে মঞ্চারোহণের বিস্তর নিন্দা করা হয়েছে। অমিতার নৃত্যপ্রতিভা এবং নিন্দাকে পাত্তা না দেওয়ার অভিব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব আমার বাবার সাড়া ত্বরান্বিত করেছে।...যখন আমার জন্ম হলো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার মাকে প্রভাবিত করলেন। বললেন, বহুল ব্যবহৃত পুরোনো সব নাম আকড়ে ধরে থাকাটা বিরক্তিকর ব্যাপার হবে।
ছেলের নাম হবে অমর্ত্য সেন।

[এভাবেই তিনি অমর্ত্য সেন। ঢাকা তাঁর প্রিয় ভূমি, শান্তিনিকেতনও। তাঁর বাবা আশুতোষ সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩ বছরের ছুটি নিয়ে ১৯৩৬ সালে বার্মার মান্দালয় ছিল। অমর্ত্য সেনের মনে হয়েছে, মান্দালয়ও তাঁর বাড়ি। তবুও ঢাকার জন্য তাঁর একটি বিশেষ টান অত্যন্ত স্পষ্ট।]

Related Topics

টপ নিউজ

অমর্ত্য সেন

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • বরিশাল রুটের বিলাসবহুল বাসে আগুন কেন লাগছে! 
  • ‘আমাদের সমস্যা তো চীন এসে ঠিক করে দেবে না’: বুয়েট শিক্ষকদের ডিজাইনে নিরাপদ অটোরিকশা
  • ‘আমার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই’: দুবাইতে মেয়ের ফ্ল্যাট নিয়ে জয়ের অভিযোগের জবাবে গভর্নর
  • ফ্রোজেন শোল্ডার: এক বাস্তব শারীরিক সমস্যা, যা বেশি ভোগায় নারীদের
  • ‘অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের’ অভিযোগ: সিলেটে পর্যটকদের বের করে দিয়ে পর্যটনকেন্দ্র 'বন্ধ ঘোষণা' এলাকাবাসীর
  • বর্তমান পরিস্থিতিতে 'টার্নিং পয়েন্ট' হতে পারে লন্ডনে তারেক-ইউনূস বৈঠক: মির্জা ফখরুল

Related News

  • বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমাকে ব্যথিত করেছে, ড. ইউনূসকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে: অমর্ত্য সেন
  • বাবা সুস্থ আছেন, গুজব ছড়াবেন না, জানালেন অমর্ত্য সেনের মেয়ে
  • অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে ‘কড়া পদক্ষেপ’ গ্রহণের হুঁশিয়ারি বিশ্বভারতীর
  • অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের নোটিশ বিশ্বভারতীর, বাড়ির নথিপত্র নিয়ে শুনানিতে হাজিরের পরামর্শ
  • জমি বিতর্কে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে ক্ষমা চাইতে বললেন অমর্ত্য সেন

Most Read

1
বাংলাদেশ

বরিশাল রুটের বিলাসবহুল বাসে আগুন কেন লাগছে! 

2
ফিচার

‘আমাদের সমস্যা তো চীন এসে ঠিক করে দেবে না’: বুয়েট শিক্ষকদের ডিজাইনে নিরাপদ অটোরিকশা

3
বাংলাদেশ

‘আমার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই’: দুবাইতে মেয়ের ফ্ল্যাট নিয়ে জয়ের অভিযোগের জবাবে গভর্নর

4
আন্তর্জাতিক

ফ্রোজেন শোল্ডার: এক বাস্তব শারীরিক সমস্যা, যা বেশি ভোগায় নারীদের

5
বাংলাদেশ

‘অশ্লীলতা ও পরিবেশ নষ্টের’ অভিযোগ: সিলেটে পর্যটকদের বের করে দিয়ে পর্যটনকেন্দ্র 'বন্ধ ঘোষণা' এলাকাবাসীর

6
বাংলাদেশ

বর্তমান পরিস্থিতিতে 'টার্নিং পয়েন্ট' হতে পারে লন্ডনে তারেক-ইউনূস বৈঠক: মির্জা ফখরুল

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net