সন্তানের লিঙ্গ পরিচয় জানার জন্য গর্ভবতী স্ত্রীর পেট কেটে গ্রেপ্তার স্বামী

এমন নৃশংস ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের বরেলিতে। গর্ভবতী স্ত্রী'র পেট কেটে সন্তানের লিঙ্গ জানার চেষ্টা করে এই রাজ্যের অধিবাসী পান্নালাল। এতে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে মারা যায় গর্ভের শিশুপুত্রটি। আর আশংকাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে পান্নালালের স্ত্রী।
পান্নালালের স্ত্রীর ভাই রয়টার্সকে জানায়, বরেলির সিভিল লাইন পুলিশ স্টেশন এলাকার নেকপুরে স্ত্রী ও পাঁচ মেয়েকে নিয়ে থাকে পান্নালাল। পরপর পাঁচটি কন্যাসন্তান হবার পর ষষ্ঠবার স্ত্রী অন্তঃস্বত্ত্বা হলে গর্ভস্থ সন্তান ছেলে না মেয়ে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে পারেনি সে। অবশেষে শনিবার সন্ধ্যায় ৬ থেকে ৭ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রীর পেট ধারাল কাস্তে দিয়ে চিরে ফেলে পান্নালাল। এরপর দুই হাত দিয়ে ছিঁড়ে দেখার চেষ্টা করে গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে। এই ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন পান্নালালের স্ত্রী।
পুলিশ জানায়, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই নারীর চিৎকারে সেখানে এসে উপস্থিত হন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই ঘটনা দেখে শিউরে ওঠেন তারা। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে যান স্থানীয় হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে বরেলি হাসপাতালে পাঠানো হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেখানে এখন ভর্তি রয়েছেন তিনি।
খবর পেয়েই হাসপাতালে যান নারীটির পরিবারের লোকেরা। তারা অভিযোগ করেন, পরপর পাঁচ মেয়ে হওয়ার পর স্ত্রীর সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করত পান্নালাল। উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা প্রবীণ সিং চৌহান রয়টার্সকে জানান, এই ঘটনার পরে পান্নালালের নামে একটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুধুই কি সন্তানের লিঙ্গ জানার চেষ্টা, নাকি এই কাজের পিছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল পান্নালালের তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
কন্যা ভ্রূণহত্যা
ভারতের জনসংখ্যা গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিসংখ্যা অনুযায়ী, অপরিণত ভ্রূণের লিঙ্গ যাচাই করার কারণে ১৯৯০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভারতে ১৫৮ কোটি কন্যাশিশু হারিয়ে গেছে।
জুলাই মাসে ভারত সরকারের এক জরিপের তথ্য বলছে, প্রতিবছর কন্যা শিশুর সংখ্যা কমছে সেখানে। ২০১৩-২০১৫ সালে প্রতি এক হাজার পুরুষের বিপরীতে ভারতে নারীর সংখ্যা ছিল ৯০০। ২০১৪- ২০১৬ সালে তা কমে এসেছে ৮৯৮ জনে। ২০১৫-২০১৭ তে তা আরও কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৮৯৬ জনে।
গর্ভের সন্তানের লিঙ্গ জানা ভারতে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি শুধুমাত্র কিছু নিবন্ধিত সরকারি ডাক্তাররাই গর্ভপাত করানোর অনুমতি পান। তবু সমাজকর্মীরা বলছেন, দেশটিতে লিঙ্গ বৈষম্য ও ভ্রূণহত্যা এখনও ভয়াবহ রূপে বিরাজ করছে।
ব্রিটিশ চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেট এ ২০১১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, গত তিন দশকে ভারতে ১২০ কোটি কন্যা শিশু ভ্রূণহত্যা করা হয়েছে।
২০১৪ সালে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন বলছে, ভারতে নারী-পুরুষের অনুপাত বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে। যা নারীদের সঙ্গে হওয়া বিভিন্ন অন্যায়ের অন্যতম কারণ বলেও উল্লেখ করা হয় এই প্রতিবেদনে।