মিয়ানমার অভ্যুত্থান: সেনাবাহিনীর গুলিতে বাবার কোলেই মৃত্যু ৭ বছরের শিশুর

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মঙ্গলবার মান্দালয় শহরে ৭ বছরের এক শিশু নিহত হয়েছে।
সেনা অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভ দমন কর্মসূচিতে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয়েছে ২৭৫ জন নাগরিকের, যাদের ভেতর সর্বকনিষ্ঠ ৭ বছরের কন্যা শিশু খিন মায়ো।
এডভোকেসি গ্রুপ অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) এবং সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সংবাদ অনুসারে সামরিক অভিযানের সময় নিজ বাড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় শিশুটি।
খিন মায়োর আত্মীয়দের উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাও জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বাড়ির দরজায় লাথি মেরে ঢোকার পর বাবার কোলে বসে থাকা অবস্থায় খিন মায়ো'কে গুলি করা হয়।
খিনের বড় বোনকে উদ্ধৃত করে মিয়ানমার নাও জানিয়েছে, বাড়িতে ঢুকে সৈন্যরা প্রথমেই তার বাবাকে জিজ্ঞেস করে যে পরিবারের সবাই বাড়িতে উপস্থিত আছে কিনা! খিন মায়োর বাবা সবাই বাড়ি আছে বলে জানালেও সৈন্যরা তার কথা বিশ্বাস না করে অতর্কিতে গুলি চালাতে শুরু করে, বাবার কোলে বসে থাকা খিন তখন গুলিবিদ্ধ হয়।
এ ঘটনার পর দৃশ্যত এটাই পরিষ্কার যে, যে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতা এখন আর শুধুমাত্র নিরস্ত্র বিক্ষোভকারী এবং অভ্যুত্থান বিরোধীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নেই।
গত মাসে জেনারেল মিন অং হ্লেইং -এর নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে। অভ্যুত্থানে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করে আটক করা হয় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা এবং নোবেল বিজয়ী অং সান সু চিসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের।
সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ চলছে।
এডভোকেসি গ্রুপ এএপিপি জানাচ্ছে অভ্যুত্থানের পর থেকে অন্তত ২৭৫ জন নিহত হয়েছে, যদিও বিক্ষোভকারীদের দাবী- মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি।মানবাধিকার সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে ২০ শিশুর।
রয়টার্স এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের মতে, এর আগেও সোমবার মান্দালয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতায় ১৫ বছরের এক কিশোরের মৃত্যু ঘটে।
এএপিপির তথ্য অনুসারে, "পানি তোলার জন্য বাড়ির বাইরে আসার সময় সৈন্যদের সামনে পড়ে যাওয়ায় গুলি করা হয় ছেলেটিকে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ৭ বছরের মেয়েটির মৃত্যু নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি।
মঙ্গলবার সামরিক মুখপাত্র জাও মিন তুন টেলিভিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, নাগরিকদের প্রাণহানির জন্য তিনি "দুঃখ" বোধ করেন, যদিও তিনি অস্থিরতা আর সম্পদ সম্পত্তি ধ্বংসের জন্য দোষারোপ করেন বিক্ষোভকারীদের ।
তবে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন যে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর পদক্ষেপ "প্রায় মানবতা বিরোধী অপরাধের পর্যায় পড়ে"।
- সূত্র-সিএনএন