মিয়ানমারে অভ্যুত্থান অভ্যন্তরীণ ব্যাপার: জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে রাশিয়া ও চীন

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের ব্যাপারে চীন ও রাশিয়া এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনীকেই সমর্থন দিয়েছে। তারা এটিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে না।
শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) অধিবেশনে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডের নিন্দা জানিয়েছে অধিকাংশ সদস্য।
১ ফেব্রুয়ারির মিয়ানমারে নির্বাচিত ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি পার্টির প্রথম সংসদ অধিবেশন বসার কথা থাকলেও তার কয়েক ঘন্টা আগেই সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী (তাতমাদাও) ক্ষমতা দখল করে। সেনাবাহিনী অং সান সু চিসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি দেশটিতে কারফিউ জারি করে ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ করে দেয় কিছু সময়ের জন্য।
সেনা অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার জুড়ে বিভিন্ন প্রতিবাদী মিছিল, ধর্মঘট হয়েছে। সেই সাথে সেনাবাহিনী দেশব্যাপী ব্যাপক ধরপাকড় চালায় এবং মিছিলে গুলিবর্ষণ করে ও জলকামান ব্যবহার করে। ন্যাপিতাও শহরে ২০ বছর বয়সী এক আন্দোলনকারী পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ইউএনএইচআরসি তাদের ২৯তম অধিবেশনে মিয়ানমার সংকট এবং সেখানে মানবাধিকার রক্ষার তাৎপর্য নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হিউম্যান রাইটস এর ডেপুটি কমিশনার নাদা আল-আশিফ এর মতে, এক দশক ধরে সংগ্রাম এর পর মিয়ানমারে যে কষ্টার্জিত গণতান্ত্রিক রূপান্তর এসেছিল, সেনাবাহিনীর এই কর্মকান্ড তাকে একটি জঘন্য অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদাহরণ তৈরি করেছে।
অন্যদিকে মিয়ানমারের প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীন এটিকে সম্পূর্ণ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করেছে। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলে দেওয়া বক্তব্যে এ অবস্থান নিয়েছে চীন। কাউন্সিলে চীন ও রাশিয়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডের নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানায়।
চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে বরাবরই মিয়ানমার সেনাবাহিনী সুসম্পর্ক ছিল। বর্তমানে তাদের এ অবস্থানের ফলে মিয়ানমারের নাগরিকরা অনলাইন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে চীন ও রাশিয়াকে বর্জন করার প্রচারণা চালাচ্ছে। এছাড়াও আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সামনে গিয়ে সেনাবাহিনীকে সমর্থন না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
ইয়াঙ্গুনে চীন ও রাশিয়ার দূতাবাসের সামনে আন্দোলনরত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশগুলো যেন তাদের দেশের নির্বাচিত সরকারকে সমর্থন দেয় এবং সাধারণ জনতার কথা শোনে এই দাবি জানিয়েছেন তারা।
কিন্তু রাশিয়ার প্রতিনিধি জানিয়েছেন যে একটি দেশের মধ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে চলমান সমস্যার সমাধান করতে যাওয়া মানে একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা।
রাশিয়া আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সমালোচনা না করে বরং মিয়ানমারের এই নতুন নেতৃত্বকে সমর্থন দিতে। সেনাবাহিনী যেন বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন না করে সেদিকে নজর দিতে বলেছে রাশিয়া।
মিয়ানমারের আরেক প্রতিবেশী রাষ্ট্র জাপানও মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা আশাবাদী যে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকার খুব শীঘ্রই ফিরে আসবে। মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট নিয়ে জাপান উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বহু পশ্চিমা দেশ ইতোমধ্যেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সকল বন্দী নেতাকর্মীকে মুক্তি দিয়ে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূত হিসেবে নিয়োজিত টম অ্যান্ড্রুস বলেছেন যে নির্বাচনে জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও কোনো পরিস্থিতিতেই একটি দেশে সেনাবাহিনী জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেনা এবং বেসামরিক নাগরিকদের গ্রেপ্তার করতে পারেনা। তিনি মিয়ানমারের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যাত্রায় মিয়ানমারের জনগণের পাশে থাকার আহ্বান জানান।
- সূত্র: দ্য ইরাওয়াড্ডি