মাত্র ২০টি প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর অর্ধেক প্লাস্টিক দূষণের জন্য দায়ী

শুধু ২০১৯ সালে পৃথিবীজুড়ে ১৩০ মিলিয়নেরও বেশি প্লাস্টিক সামগ্রী একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া হয়। এদের বেশিরভাগই পরে পুড়িয়ে ফেলা হয়, মাটিচাপা দেয়া হয় কিংবা সরাসরি সাগর বা কোনো শুকনো স্থানে ফেলে দেয়া হয়। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে যে, বিশ্বের অর্ধেক প্লাস্টিক দূষণের পেছনে মাত্র ২০টি প্রতিষ্ঠানই দায়ী।
মঙ্গলবার (১৮ মে) অস্ট্রেলিয়ার মিন্ডারু ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর মোট গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের ১০ শতাংশের জন্য দায়ী হবে।
এসব প্লাস্টিক একবার ব্যবহারের পরই ফেলে দিতে হয়। এসবের মধ্যে রয়েছে ব্যাগ, পানির বোতল, পান করার স্ট্র এবং বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক।
গবেষণায় এমন ২০টি কোম্পানির নাম উল্লেখ করা হয়েছে যারা বিশ্বের একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দূষণের ৫৫ শতাংশের জন্য দায়ী। অন্যদিকে শীর্ষ ১০০টি কোম্পানি মোট দূষণের ৯০ শতাংশেরও বেশির জন্য দায়ী।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ৯৮ ভাগই পুনঃব্যবহারযোগ্য উপকরণের পরিবর্তে 'ভার্জিন (জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক) ফিডস্টকস' দিয়ে তৈরি হয়।
'প্লাস্টিক বর্জ্য প্রস্তুতকারক সূচক' নামের যে সূচক ফাউন্ডেশনটি তৈরি করেছে, তার শীর্ষে রয়েছে শক্তি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এক্সন মোবিল। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডও কেমিক্যাল কোম্পানি এবং চীনের সিনোপেক কোম্পানি। প্রতিবেদনের অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে, এক্সন মোবিল ২০১৯ সালে ৫ দশমিক ৯ মিলিয়ন প্লাস্টিক দূষণের জন্য দায়ী। অন্যদিকে ডও এবং সিনোপেক যথাক্রমে ৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন এবং ৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন দূষণ করেছে। শুধু এই তিনটি কোম্পানি মিলেই বোতল, ব্যাগ ও খাদ্যের মোড়কের মতো একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দ্বারা মোট দূষণের ১৬ শতাংশের জন্য দায়ী।
তবে এক বিবৃতিতে এক্সন মোবিল দাবি করে যে, তারাও সমাজে প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে চিন্তিত এবং তারা প্লাস্টিক দূষণ কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও জানায়। কিন্তু এক্সন মোবিল এও জানায় যে এই ধরনের সমস্যা সমাধানে শিল্পখাত, সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও ভোক্তাদের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদনের পেছনে ব্যয়ের পরিমাণও বের করা হয়েছে প্রতিবেদনে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফাউন্ডেশনের র্যাংকিংয়ে শীর্ষে থাকা মূল কোম্পানিগুলোতে এই ২০টি প্রতিষ্ঠানের ৩০০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের শেয়ার রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শীর্ষ তিন বিনিয়োগকারীর মধ্যে রয়েছে ভ্যানগার্ড গ্রুপ, ব্ল্যাকরক এবং ক্যাপিটাল গ্রুপ। এই তিনটি কোম্পানি মিলে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদনে ৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বলে প্রতিবেদনে লেখা হয়।
সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর একটি বিবৃতিতে বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্লাস্টিক দূষণের ফলে ক্ষতির মাত্রা এখন প্রায় একই রকম বিপদজনক এবং এদের মিলিতভাবে ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'যেহেতু বেশিরভাগ প্লাস্টিকই তেল ও গ্যাস দ্বারা তৈরি, বিশেষত ফ্র্যাকড গ্যাস; তাই প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার এখন জলবায়ু সংকটের একটি মূল চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে এর দ্বারা অতিমাত্রায় গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হচ্ছে এবং প্লাস্টিক থেকে অন্যান্য ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদান পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়ার পেছনেও এটি কাজ করছে। বিশেষ করে কালো এবং নিম্ন আয়ের মানুষেরা এসব প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করায় বা আশেপাশে বসতি গড়ে তোলায়, তারা সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।'
প্রতিবেদনে আরও সতর্ক করা হয়েছে যে আগামী পাঁচ বছরে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ উৎপাদনের ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে উন্নত দেশগুলোতেও অধিক হারে দূষণ হতে পারে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
প্রতিবেদনটির লেখক জানান, প্লাস্টিক দূষণের সমস্যা সমাধানে উৎপাদনকারী, বিনিয়োগকারী ও ব্যাংকগুলোর প্রয়োজন বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসা। প্লাস্টিক ব্লক বা পলিমার উৎপাদনকারীদের উচিত তাদের একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্যের ফুটপ্রিন্ট সবাইকে জানানো। সেই সাথে ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীদের উচিত হবে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক উৎপাদনের পেছনে কোনো রকম বিনিয়োগ না করা।
কিন্তু এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছাও প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রতিবেদনটির এই লেখক। কারণ বাজারমূল্যের দিক থেকে এই খাতের প্রায় ৩০ শতাংশের মালিকানাই রাষ্ট্রায়ত্ত।
- সূত্র- এনপিআর