প্রথমবারের মতো গ্রিনল্যান্ডের চূড়ায় বৃষ্টিপাত

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই মাইল উপরে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ডের তুষারে ঘেরা চূড়ায় গত শনিবার রেকর্ডকৃত ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বরফের চাদরে ঢাকা গ্রিনল্যান্ডের শীর্ষ বিন্দুতে এই সপ্তাহান্তে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের উপরে উঠে গিয়েছিল। গত এক দশকের মধ্যে যা তৃতীয়বারের মতো ঘটেছে। উষ্ণ বায়ুর কারণেই এই তীব্র বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বৃষ্টিপাতের ফলে বরফে ঢাকা অঞ্চলটিতে প্রায় ৭০০ কোটি টন পানি নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
মার্কিন ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫০ সালে রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে বরফের চাদরে সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের রেকর্ড এটিই। এই অঞ্চলে বছরের এই সময়ে দৈনিক গড়ে যে পরিমাণ বরফ নষ্ট হয় রোববার তার সাত গুণ বেশি বরফ দ্রবীভূত হয়েছে।
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টারের জ্যেষ্ঠ গবেষণা বিজ্ঞানী টেড স্কাম্বোস বলেন, গ্রিনল্যান্ড কত দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে তার প্রমাণ এটি।
তিনি বলেন, "যা ঘটছে তা কেবল পরিবর্তনশীল জলবায়ুর একটি বা দুটি উষ্ণ দশক না। এটি নজিরবিহীন।"
মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই গ্রহের তাপমাত্রা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বরফের ক্ষয়ও। চলতি মাসে জাতিসংঘের একটি জলবায়ু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলেই গ্রিনল্যান্ডে গত দুই দশক ধরে বরফ গলছে। ক্রায়োস্ফিয়ার জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে পৃথিবী প্রায় ২৮ ট্রিলিয়ন টন বরফ হারিয়েছে, যার একটি বড় অংশ গ্রিনল্যান্ডের বরফের স্তরসহ আর্কটিকের অংশ ছিল।

গত জুলাইয়ে গ্রিনল্যান্ডের বরফ স্তরে বিগত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গলনের ঘটনাটি ঘটেছে। এসময় একদিনে ৮৫০ কোটি টনেরও বেশি বরফ গলেছে, যা পুরো বাংলাদেশকে দুই ইঞ্চি পানির নিচে তলিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
২০১৯ সালে গ্রিনল্যান্ড থেকে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টন বরফ গলে সমুদ্রে জমা হয়েছে। সে বছর জুলাইয়ে একটি অপ্রত্যাশিত হিট ওয়েভের ফলে গ্রিনল্যান্ডের বরফের পুরো স্তরই গলতে শুরু করেছিল। যার কারণে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা স্থায়ীভাবে ১.৫ মিলিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্ক্যাম্বোস বলেন, "সহস্রাব্দেও যে সীমা অতিক্রান্ত হয়নি আগে, সেটা এখন করছি আমরা। এবং সত্যি বলতে, আমরা বাতাসে যা করছি তা ঠিক করার আগ পর্যন্ত এটি পরিবর্তন হবে না।"
বিজ্ঞানীরা বলছে, এমন বৃষ্টি তুষারের বৈশিষ্ট্যের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে। এছাড়া বৃষ্টিপাত ও বরফের গলন পোলার বিয়ারের মতো স্থানীয় প্রাণীদের বাস্তুতন্ত্রকেও বিপর্যস্ত করছে।
- সূত্র: সিএনএন