নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রতিবেশী আফগানিস্তানকে নিয়ে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান

মার্কিন ও অন্যান্য বিদেশী বাহিনীর দেশত্যাগের পর আফগানিস্তানে সরকার গঠনের চেষ্টায় রয়েছে তালেবান। এ অবস্থায় দেশটির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের মধ্যে।
বিগত দুই দশকে জিহাদি সহিংসতায় হাজারো পাকিস্তানি নিহত হয়েছে।
গত কয়েক দিনে আফগানিস্তানে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা হুমকির ব্যাপারটি সকলের নজরে এসেছে। সম্প্রতি কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে ইসলামিক স্টেটের একটি আফগান শাখার (আইসিস-কে) আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩ জন মার্কিন সেনাসহ শতাধিক মানুষ নিহত হয়। পরবর্তীতে বিমানবন্দরে একটি রকেট হামলা হয় এবং রোববার আফগানিস্তানের সীমান্তের ওপার থেকে তালেবানের ছোঁড়া গুলিতে দুই পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।
এ বিষয়ে পাকিস্তানের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "আগামী দুই- তিন মাস সংকটপূর্ণ হতে চলেছে।" আফগান বাহিনী এবং পশ্চিমা সমর্থিত প্রশাসনের পতনের পর আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে ইসলামাবাদ।
ইসলামিক স্টেট সহ তাদের পুনরুত্থানকারী প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর হুমকির কথা উল্লেখ করে এ সূত্র জানায়, "আমাদের (আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়) তালেবানদের তাদের সেনাবাহিনী পুনর্গঠনে সহায়তা করতে হবে যাতে তারা তাদের এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।"
১৯৯৬ সালে প্রায় এক দশকের গৃহযুদ্ধ শেষে আফগান তালেবান ক্ষমতায় আসলে তাদেরকে পাকিস্তান সমর্থন করে বলে বরাবরই অভিযোগ করে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। তবে, মার্কিন কর্মকর্তাদের এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ।
এছাড়া, পাকিস্তান সরকার বলেছে যে বর্তমান আন্দোলনের উপর দেশটির প্রভাব হ্রাস পেয়েছে। মূলত, মার্কিন এবং অন্যান্য বিদেশী সৈন্যদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের তারিখ ঘোষণার পর থেকে তালেবানদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাওয়ায় এটি হ্রাস পেয়েছে বলে জানায় তারা।
এদিকে আফগান সামরিক বাহিনীর পুনর্গঠনে তালেবানকে সাহায্য করার জন্য পাকিস্তান নিজেদের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা, এমনকি শক্তিশালী ইন্টার-সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স (আইএসআই) প্রধানকে পাঠানোর পরিকল্পনাও করেছে।
তবে, পাকিস্তানের সঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করার জন্য রয়টার্সের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি আফগান তালেবানের এক মুখপাত্র।
তালেবানদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে পাকিস্তান
এখনো তালেবানের নতুন সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি বাকি, তবে এই কর্মকর্তা বলেন, আফগানিস্তানকে পরিত্যাগ করা উচিত নয় বিশ্বের।
তিনি বলেন, "আমরা তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেই বা না দেই, আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"
এর আগে, ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, সিরিয়া ও ইরাকে ইসলামিক স্টেটের একটি শাখা ইসলামিক স্টেট খোরাসান (আইসিস-কে) সক্রিয়ভাবে হামলা চালাতে এবং নতুন যোদ্ধাদের নিয়োগ দিতে চাইছে। তাদেরকে যদি কোনো প্রকারের বাঁধা না দেওয়া হয়, তাহলে তাদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইসিস-কে জঙ্গিদেরকে লক্ষ্য করে দু'টি ড্রোন হামলা চালায়। এর মধ্যে একটি চালানো হয়েছিল কাবুলে, এবং অপরটি পাকিস্তানের পূর্ব সীমান্তের কাছে।
যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কিছুদিন আগেই প্রতিশ্রুতি দেন যে আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক আত্মঘাতী বোমা হামলার পেছনে জড়িতদের খুঁজে বের করবেন- এ ঘোষণার প্রেক্ষিতেই উল্লেখ্য হামলাগুলো চালানো হয়।
তবে তালেবান এ হামলাগুলোকে 'আফগান ভূখণ্ডে স্পষ্ট আক্রমণ' বলে বর্ণনা করেছে।
পাকিস্তানের সে কর্মকর্তা জানান, তাদের সশস্ত্র বাহিনীর কাছে ড্রোন এবং এয়ারক্রাফট থাকা সত্ত্বেও তারা আফগানিস্তানে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকবেন।
তবে আফগান তালেবানরা তাদের প্রতিবেশীকে আশ্বস্ত করেছে যে তারা নিজেদের ভূখণ্ডকে পাকিস্তান বা অন্য কোনো দেশে হামলার পরিকল্পনার জন্য ব্যবহার করতে দেবে না।
কিন্তু, যেসকল জঙ্গিরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা করছে তাদেরকে আফগান তালেবানরা তাদের হাতে তুলে দেবে, অথবা তাদের পারস্পরিক সীমান্ত থেকে সরিয়ে দেবে বলে আশা করেছিল ইসলামাবাদ। এ অবস্থায়, আকস্মিক হামলার আশঙ্কায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানি সৈন্যরা।
- সূত্র- রয়টার্স