হামলায় তিন আফগান ক্রিকেটার নিহত, পাকিস্তানে ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়াল আফগানিস্তান

আগামী মাসে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আফগানিস্তান। দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উরগুন জেলায় সীমান্তে এক বিমান হামলায় তিন স্থানীয় ক্রিকেটার নিহত হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)।
আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলায় তিন ক্রিকেটারসহ অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। তালেবান কর্মকর্তাদের দাবি, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পাকিস্তান পাকতিকা প্রদেশের তিনটি স্থানে বোমা বর্ষণ করেছে।
পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে এই টি-টোয়েন্টি সিরিজটি আয়োজন করেছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। সিরিজটি ১৭ থেকে ২৯ নভেম্বর রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে এসিবি বলে, 'এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় উরগুন জেলার তিন ক্রিকেটার কবির, সিবঘাতুল্লাহ, হারুনসহসহ আরও পাঁচজন আফগান নাগরিক শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন সাতজন। তারা পাকতিকা প্রদেশের রাজধানী শারানায় একটি প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচে অংশ নিতে গিয়েছিলেন। খেলা শেষে বাড়ি ফেরার পর এক সমাবেশে তাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়।'
এসিবির বিবৃতিতে বলা হয়, 'আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড পাকতিকা প্রদেশের আরগুন জেলার সাহসী ক্রিকেটারদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছে, যারা সন্ধ্যায় পাকিস্তানি বাহিনীর কাপুরুষোচিত হামলার শিকার হয়েছেন।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'এটিকে আমরা একটি মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে দেখছি। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড আসন্ন ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'
এটি হতে যাচ্ছিল চলতি বছরে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান অংশগ্রহণে দ্বিতীয় ত্রিদেশীয় সিরিজ। এর আগে আগস্টে এশিয়া কাপের আগে দুটি দল মুখোমুখি হয়েছিল। তবে পাকিস্তানের মাটিতে এটি হতে যাচ্ছিল আফগানিস্তানের প্রথম ত্রিদেশীয় সিরিজ।
হামলার নিন্দা জানিয়ে আফগান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আফগানিস্তানের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক রশিদ খান।
এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, 'পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় নিরীহ নাগরিকদের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। নারী, শিশু ও সেই তরুণ ক্রিকেটারদের প্রাণহানি, যারা বিশ্ব মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখেছিল, তা এক মর্মান্তিক ঘটনা।'
রশিদ খান আরও বলেন, 'মূল্যবান নিরীহ প্রাণহানির আলোকে, আফগান ক্রিকেট বোর্ডের পাকিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন ম্যাচ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই। এই কঠিন সময়ে আমি আমাদের জনগণের পাশে আছি; জাতীয় মর্যাদা সবকিছুর উপরে থাকতে হবে।'
শোক জানিয়ে আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী ফেসবুকে লিখেছেন, 'উরগুন জেলার সেই সাহসী ক্রিকেটারদের মৃত্যুর খবর শুনে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হামলার শিকার হওয়া এই ঘটনাটি শুধু পাকতিকার নয়, বরং পুরো আফগান ক্রিকেট পরিবার ও জাতির জন্য এক বিশাল বেদনা। এই নিরীহ খেলোয়াড়দের পরিবার, বন্ধু ও পাকতিকার জনগণের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা রইল।'
আফগানিস্তান এর আগে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ ও চলতি বছরের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলেছিল, যদিও সেসব টুর্নামেন্টে তারা স্বাগতিক দলের বিপক্ষে খেলেনি।
সিরিজে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে দুইবার মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল—১৭ নভেম্বর উদ্বোধনী ম্যাচে এবং ২৩ নভেম্বর পুনরায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের মধ্যে সিরিজটি আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, এর আগে সীমান্তে কয়েক দিনের সংঘর্ষের পর পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। তবে শুক্রবারের হামলার পর আফগান কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, পাকিস্তান স্পষ্টভাবে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেছে।
এক জ্যেষ্ঠ তালেবান কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, 'পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে পাকতিকা প্রদেশের তিনটি স্থানে বোমা বর্ষণ করেছে। আফগানিস্তান প্রতিশোধ নেবে।'
গত সপ্তাহে কাবুলের আবদুল হক স্কয়ারে এক বিস্ফোরণের পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে। ওই সময় ভারতের সফরে ছিলেন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি।