ত্রিমুখী বিপর্যয়ের মুখে দক্ষিণ এশিয়ার ৯৬ লাখ মানুষ

দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ; বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির সাথে সাথে মানবিক সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে, বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জোট- আইএফআরসি। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে বন্যা এবং পরিবেশ বিপর্যয় এ অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা ত্রিমুখী হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।
আইএফআরসি মহাসচিব- জাগান চাপাগেইন বলেন, ''মৌসুমি বৃষ্টির প্রভাবে চলমান বন্যায় বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যায় তাদের আবাদি জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে, বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা দেওয়া বন্যার মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহতম।''
চাপাগেইন জানান, ''প্রতিবছরই এ অঞ্চলের দেশগুলো মৌসুমি বৃষ্টির প্রভাবে কমবেশি বন্যা কবলিত হয়। কিন্তু, এবছরের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার কোভিড-১৯ সঙ্কট চলাকালে বন্যা এসেছে। ইতোমধ্যেই, বন্যায় আলোচিত তিন দেশে মোট ৫৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আর পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ১০ লাখ মানুষ।''
বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, দেশের এক-তৃতীয়াংশ এখন বন্যা কবলিত। ভারত এবং নেপালের মতো উজানের দেশগুলো থেকে নেমে আসা পানির ঢলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলমান বন্যায় ইতোমধ্যেই প্রভাবিত হয়েছেন ২৮ লাখ নাগরিক। আর পানিবন্দি হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন ১০ লাখ মানুষ।
প্রতিবেশী ভারতে তীব্র বন্যায় ৬৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার এ প্রভাব বেশি পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং মেঘালয় রাজ্যে। ভারতের জাতীয় জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা কেন্দ্র সূত্রে এ তথ্য জানায় আইএফআরসি।
অন্যদিকে, নেপালে ভারি বৃষ্টিপাত জনিত ভূমিধ্বসে এপর্যন্ত ১১০ জন মারা গেছেন। বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের সরকারি সূত্রে সর্বমোট ৫৫০ জনের মৃত্যুর খবর জনা গেছে।
আইএফআরসি সভাপতি সতর্ক করে বলেন, ''বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মানুষ এখন ব্যাপক বন্যা এবং কোভিড-১৯ এর প্রভাবে কর্মসংস্থান হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ার এক আর্থ-সামাজিক দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তো আছেই। চলমান বন্যায় কৃষিজমি প্লাবিত হওয়া এবং ফসল বিনষ্টের কারণে কোভিড-১৯ এ দরিদ্র হয়ে পড়া লাখ লাখ মানুষ অতি-দরিদ্রে পরিণত হতে পারেন।''
বাংলাদেশে মানবিক সহায়তার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ৮ লাখ সুইস ফ্রাঁ বরাদ্দ দিয়েছে আইএফআরসি। এর মধ্যে গত মাসেই বন্যার তীব্রতা বাড়ার পূর্বাভাস জানার পর দুই লাখ ৩০ হাজার ফ্রাঁ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সংস্থাটির হয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবীরা বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে দুর্যোগ কবলিত মানুষের জন্য তারপুলিন, শুকনো খাবার, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছেন। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এপর্যন্ত ৩৫ হাজার বন্যার্তকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছে।