চীনের জরুরি টিকাদান কর্মসূচির কী কারণ?

বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। জরুরি ব্যবহার অনুমোদনের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচিও শুরু করেছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।
চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান জরুরি ব্যবহার অনুমোদনের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে।
ভ্যাকসিন অনুমোদনের আগেই এই কর্মসূচির বেশ কিছু ঝুঁকির ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা, অননুমোদিত এই ভ্যাকসিন গ্রহণের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই ধরে নিয়েই অনেকে অসতর্ক থাকতে পারেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউটের সাধারণ পরিচালক জিরোম কিম এ ব্যাপারে জানান, 'কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন গ্রহণের পরও সম্পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত হবে না, এমন আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি ভ্যাকসিন গ্রহণের পরও সংক্রমিত হতে পারেন এবং অসতর্ক থাকার কারণে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারেন।'
চায়না রেলওয়ে গ্রুপের নির্মাণ শ্রমিক গুও পেয়ু বলেন, 'আমাদের অনেক সহকর্মী অনেক আগেই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন, অনেকে গত জুলাইয়ে ভ্যাকসিন নিয়েছেন।'
চীনের একটি নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করতে কঙ্গোতে যাবেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা, এ কারণে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে জরুরি ব্যবহার অনুমোদনের আওতায় ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, চীনের তিনটি প্রতিষ্ঠানের চারটি ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। স্বাস্থ্যকর্মীসহ সম্মুখ সারির কর্মীদের জন্য ইতোমধ্যেই সিনোফার্ম জরুরি ব্যবহার অনুমোদনের মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে। সিনোভ্যাকের সঙ্গে ৯০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি করেছে ফিলিপাইন। অন্যদিকে, এক স্বেচ্ছাসেবীর মৃত্যুর কারণে ব্রাজিলে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল স্থগিত করা হয়। পরবর্তীকালে জানা যায়, ওই স্বেচ্ছাসেবী আত্মহত্যা করেছেন। তারপরই ট্রায়াল পুনরায় শুরু করার ঘোষণা আসে।
চীনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) পরিচালক ঝেন ঝংওয়েই বলেন, 'জরুরি ব্যবহার অনুমোদনের মাধ্যমে টিকাদান একটি জরুরি পদক্ষেপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনেই জরুরি পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এই অনুমোদন দেওয়া হয়।'
তবে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। হংকং ইউনিভার্সিটির মলিকিউলার ভাইরোলজির গবেষক জিন দং-ইয়ান বলেন, 'চীনে এখন জরুরি অবস্থা নেই। বেশ কয়েক মাস ধরেই দেশটির নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা শূন্য।'
এখন পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হলেও সিনোফার্ম জানিয়েছে, এদেরমধ্যে মাত্র ৫৬ হাজার ব্যক্তি চীনের বাইরে গিয়েছেন।
নতুন ভ্যাকসিনের কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকিও দেখা যায় কিছু ক্ষেত্রে। জিরোম কিম জানান,
'আরেকটি ঝুঁকি হলো, এনহ্যান্সড রেসপিরেটরি ডিজিজ (ইআরডি)।' ইআরডি শ্বাসযন্ত্রের এক ধরনের রোগ; ২০০২-২০০৪ সালে ছড়িয়ে পড়া সার্সের ভ্যাকসিন প্রদানের পর অনেক প্রাণী এই রোগে আক্রান্ত হয়।
জরুরি ব্যবহার অনুমোদনের ফলে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে চীনের তৈরি ওষুধের ব্যাপারে প্রচলিত অনাস্থা আরও বদ্ধমূল হবে।
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ইয়ানঝং হুয়ান বলেন, 'এই অনুমোদনের পেছনে জনস্বাস্থ্যজনিত চিন্তার চেয়ে বাণিজ্যিক চিন্তাই বেশি।' ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার পর সিনোফার্মের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তবে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নির্ধারিত দামেই টিকাদান কর্মসূচি চালাতে পারবে।
কারা পাবেন এই ভ্যাকসিন?
জরুরি ব্যবহার অনুমোদনের ভিত্তিতে কারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারবেন এবং বিষয়টি কীভাবে নির্ধারিত হবে, এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি চীন সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলো। সিনোফার্মও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।
একটি স্বাস্থ্য কনফারেন্সে সিনোফার্মের চেয়ারম্যান লিউ জানান, 'রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মী, যারা দেশের বাহিরে কাজ করতে যাবেন, বিভিন্ন দেশে কর্মরত হুয়াওয়ের কর্মকর্তা ও চীনের কূটনীতিকরা টিকাদান কর্মসূচির আওতায় পড়বেন।'
বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টের সামনে ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য অপেক্ষারতদের সাক্ষাৎকার নেন এনপিআরের প্রতিবেদক। অনেকেই জানান, তারা বেল্ট অ্যান্ড রোডসহ বিভিন্ন দেশে চীনের অবকাঠামোগত প্রকল্পে কাজ করেন। তবে দেশের বাইরে যাবার প্রয়োজন নেই, এমন অনেক সরকারি কর্মকর্তাও ভ্যাকসিন পাচ্ছেন বলে জানানো হয় এনপিআরের প্রতিবেদনে।
চীনের বাইরে পড়াশোনা করছেন, এমন শিক্ষার্থীদের জন্য সিনোফার্মের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয় গত অক্টোবরে। উহান ও বেইজিংয়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনের কাজও শুরু হয়। তবে মাত্র একদিন পরই নিবন্ধন বন্ধ করে দিয়ে সিনোফার্ম ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে না জানানো হয়।
- সূত্র: এনপিআর