ক্ষমতার শেষ সপ্তাহে এসেও টিকে থাকার লড়াইয়ে নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেষ সপ্তাহ যেমনই কাটুক না কেন, শেষ মুহূর্তে এসেও ক্ষমতায় থাকার জন্য লড়ে যাচ্ছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নিজের দীর্ঘ এক যুগের শাসনামলের প্রসার ঘটাতে এখনো তিনি তৎপর।
বিগত এক সপ্তাহ ধরে নেতানিয়াহু তার ভাবী উত্তরসূরি নাফতালি বেনেটের বিরুদ্ধে 'দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভোট জালিয়াতি'র অভিযোগ এনেছেন। তার এই দাবি অনেকটা ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের বিরুদ্ধে করা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিথ্যা দাবির মতোই। যদিও গেল বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি এই মিথ্যা অভিযোগের সুর খানিকটা নরম করেছে।
ভোট গণনায় ভুল হয়েছে বা ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি হয়েছে-এমনটা বলার পরিবর্তে নেতানিয়াহুর দল টুইটারে লিখেছে, 'বেনেট ডানপন্থীদের কাছ থেকে ভোট হাইজ্যাক করেছেন এবং সেগুলো বামপন্থীদের দিয়ে দিয়েছেন যা তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। এটা যদি জালিয়াতি না হয়, তাহলে জালিয়াতি আর কাকে বলে আমরা জানিনা।'
নেতানিয়াহুর শেয়ার করা আরেকটি টুইটার থ্রেডে তার দল লিকুদ পার্টি জানায়, 'শান্তিপূর্ণভাবেই নতুন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে এবং ইসরায়েলে সবসময় এমনটাই হয়ে এসেছে।' নেতানিয়াহুর কথাকে বিকৃতভাবে প্রচার করা হচ্ছে এমন দাবি জানিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের দোষারোপ করে তার দল।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে নেতানিয়াহু হার মেনে নিচ্ছেন কিংবা নীরবে জেরুজালেমের বাফুর স্ট্রিটের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ত্যাগ করছেন। নেতানিয়াহু বরাবরই নিজেকে ইসরায়েলের ত্রাণকর্তা হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি মনে করেন, ইরাক, গাজা ও লেবাননের শত্রুদের হাত থেকে একমাত্র তিনিই ইসরায়েলকে রক্ষা করতে পারবেন।
ইসরায়েলের এককক্ষবিশিষ্ট সংসদ 'নিসেট' এর ১২০ টি আসনের মধ্যে ৬১ আসন নিয়ে খুব সামান্য ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন বেনেট।
নেতানিয়াহু ও তার মিত্ররা এখনো ডানপন্থী 'ইয়ামিনা' ও 'নিউ হোপ পার্টি'র নেতাদের চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন যেন তারা রবিবার বিকেলে অনুষ্ঠিতব্য 'কনফিডেন্স ভোট'-এ বেনেটের নতুন সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেন।
বেনেট যদি সেই ভোটে হেরে যান, তাহলে ইসরায়েলে আবারও পঞ্চমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বেনেটের এই ব্যর্থতা নেতানিয়াহুকে আবার অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দিবে, যা তিনি ইসরায়েলের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক হাঙ্গামার সময়েও পালন করেছেন।
গত রবিবার বেনেট টুইটারে ইসরায়েলের দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানিয়েছেন সুশৃঙ্গলভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে এবং কোনো দগ্ধ বা তিক্ত পরিস্থিতি পেছনে না ফেলে যেতে।
রবিবার রাতে ১২০ আসনবিশিষ্ট সংসদ নিসেটে এক বৈঠকে বেনেট বলেন, 'এটা কোনো দুর্যোগ নয়, বিপর্যয় নয়। শুধুমাত্র একটা সরকার পরিবর্তন যা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে খুব সাধারণ বিষয়। ইসরায়েলের শাসনব্যবস্থা রাজতান্ত্রিক নয়, এখানে কারো একচেটিয়া ক্ষমতা চলবে না।'
তবে নিজের দলেরই সাবেক কর্মী বেনেটের কাছে এখনো পরাজয় স্বীকার করেননি নেতানিয়াহু। তিনি খুব ভালো করেই জানেন যে এখনো বেনেটের সরকারের মধ্যে চিড় ধরানোর মতো সুযোগ আছে। বর্তমান জোট সরকার ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচাইতে বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি জোট।
কিন্তু জোটের আটটি আলাদা দলের প্রত্যেকেরই নিজ নিজ সুবিধা প্রাপ্তির মনোবাসনা আছে। তাই নেতানিয়াহুর পতন চাওয়া ছাড়া একত্রে জুড়ে থাকার মতো সাধারণ বিষয় তাদের মধ্যে খুব কম।
আগামী রবিবার বিকেলেই বেনেটের জোটের সামনে আসবে প্রথম পরীক্ষা, যেখানে ভোট আরম্ভের আগে জোট সরকারের অগ্রাধিকার ও নীতিসমূহ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আহ্বান করবে সংসদ। ধারণা করা হচ্ছে কয়েক ঘন্টার এই বিতর্কে নেতানিয়াহু ও তার মিত্ররা অন্য দলের ক্ষমতার জোর কমানোর চেষ্টা করবেন। তখন নিসেটের স্পীকার 'কনফিডেন্স ভোট' ডাকবেন। উল্লেখ্য যে সংসদের স্পীকার নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির একজন সদস্য।
তাই ইসরায়েলের জন্য রবিবার বিকেল হতে যাচ্ছে এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত যেখানে শুধু যে ইসরায়েলের ভবিষ্যত নেতা নির্ধারণ হবে তা নয়, নেতানিয়াহুর আরো কোনো কৌশল প্রয়োগ করার আছে কিনা সেটিও প্রতীয়মান হবে।
সূত্র- সিএনএন