কানাডায় মুসলিম পরিবারের ৪ জনকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা

কানাডায় গাড়িচাপা দিয়ে একটি মুসলিম পরিবারের চার সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার কানাডার অন্টারিও প্রদেশের লন্ডন শহরে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ একে একটি 'হেইট ক্রাইম' বা বিদ্বেষমূলক অপরাধ হিসেবে দেখছে।
এ ঘটনায় নাথানিয়াল ভেল্টম্যান নামের এক যুবককে (২০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাস্তা পার হওয়ার জন্য ওই মুসলিম পরিবারের পাঁচজন সদস্য সড়কের পাশে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় তাদের ওপর নিজের গাড়ি চালিয়ে দেন ভেল্টম্যান।
ঘটনাস্থল থেকেই ভেল্টম্যানকে গ্রেপ্তার করা হয়; তার বিরুদ্ধে চারজনকে হত্যা ও একজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। সোমবার তাকে রিমান্ডে নেওয়ার পর আগামী বৃহস্পতিবার আদালতে তোলার কথা রয়েছে।
লন্ডন পুলিশ বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশ সুপার পল ওয়েট রয়টার্সকে বলেন, "সন্দেহ নেই এটি একটি পরিকল্পিত এবং পূর্বনির্ধারিত বিদ্বেষমূলক অপরাধ"।
তিনি বলেন, "হামলার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা তাদের ইসলামিক মূল্যবোধের জন্যই এ ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে আমরা মনে করছি"।
তবে আটককৃত অভিযুক্তের কোন পূর্ব অপরাধের রেকর্ড নেই এবং সে কোন 'হেইট গ্রুপে'র সদস্য কিনা তাও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই তাকে পাশের একটি শপিংমলের পার্কিং লট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে পুলিশ এখনও হতাহতের নাম প্রকাশ করেনি, তবে লন্ডন ফ্রি প্রেস জানিয়েছে যে নিহতদের মধ্যে সৈয়দ আফজাল (৪৬), তার স্ত্রী মাদিহা সালমান (৪৪) এবং তাদের ১৫ বছর বয়সী কন্যা ইয়ুমনাহ আফজাল রয়েছেন। সৈয়দ আফজালের ৭৪ বছর বয়স্ক মাও, এ হামলায় নিহত হয়েছেন।
পরিবারটির বেঁচে যাওয়া একমাত্র সদস্য তাদের ৯ বছরের ছেলে ফয়েজ আফজাল। সে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিবারটি প্রায় ১৪ বছর আগে পাকিস্তান থেকে কানাডায় আসে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পেইজ মার্টিন সাংবাদিকদের জানান, একটি কালো ট্রাক তীব্র গতিতে তাকে পাশ কাটিয়ে যায়। এরপর তিনি ঘটনাস্থলে এসে যা দেখতে পান 'সেটি এমন কিছু যা কেউ কখনোই দেখতে চাইবে না'।
২০১৭ সালে কানাডার কুইবেক সিটির একটি মসজিদে গুলি করে ছয় মুসলিমকে হত্যার ঘটনার পর দেশটিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা।
লন্ডনের মেয়র এড হোল্ডার বলেন, এটি তার শহরে সংঘটিত হওয়া এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নিকৃষ্টতম হত্যার ঘটনা। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, "আমরা পরিবারটির জন্য শোক প্রকাশ করছি যার এক সাথে তিনটি প্রজন্মের প্রয়াণ হয়েছে'।
তিনি বলেন, "এটি গণ হত্যার সামিল, মুসলমানদের বিরুদ্ধে, লন্ডনবাসীদের বিরুদ্ধে এবং এ হত্যাকাণ্ডের মূল অনির্বচনীয় বিদ্বেষে প্রোথিত"।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এক টুইটে তিনি বলেন, এ ঘটনায় তিনি অত্যন্ত মর্মাহত। প্রধানমন্ত্রী লেখেন, "আমাদের সম্প্রদায়ে ইসলামবিদ্বেষের কোনো স্থান নেই। এটি জঘন্য এবং ঘৃণ্য- অবিলম্বে এর চর্চা বন্ধ করতে হবে"।
এছাড়া এ ঘৃণ্য ঘটনার ন্যায়বিচার স্থাপন করা হবে বলে টুইটে নিশ্চিত করেছেন অন্টারিও প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ডগ ফোর্ড।
- সূত্র-রয়টার্স