আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব: গুঁড়াদুধের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ টাকা
খাদ্যপণ্যের বাজারে প্যাকেটজাত গুঁড়াদুধের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশীয় বাজারে ফুলক্রিম পাউডার মিল্কের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাবে দেশীয় বাজারেও আমদানি নির্ভর খাদ্য পণ্যটির দাম বেড়েছে বলে মন্তব্য দুধ প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পানিগুলোর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে মানভেদে বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিকেজি প্যাকেটজাত ফুলক্রিম গুঁড়াদুধ বিক্রি হচ্ছে ৬৯০-৯২৫ টাকার মধ্যে। যা দুই সপ্তাহ আগে সর্বোচ্চ ৬৫০-৯০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতো। সেই হিসেবে, গত পনের দিনে গুঁড়াদুধের দাম বেড়েছে ৪০ টাকা পর্যন্ত।
বর্তমানে বাজারে থাকা নিডো ব্রান্ডের প্রতি কেজি গুঁড়াদুধ ৯২৫ টাকা, ডানো ৭৪০ টাকা, মার্কস ৬৯০ টাকা, ডিপ্লোমা ৬৯০ টাকা এবং ডিপ্লোমিল্ক ৭১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও এসব দুধের মধ্যে ডানো ৭২০ টাকা, মার্কস ৬৫০ টাকা এবং এবং ডিপ্লোমিল্ক ৬৮০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।
৫০০ গ্রাম প্যাকেটজাত দুধের মধ্যে আগে নিডো ৩৭০ টাকা, ডানো ৩৫০ টাকা, মার্কস ৩২০ টাকা, ডিপ্লোমা ৩৫০ টাকা এবং ডিপ্লোমিল্ক ৩৩০ টাকা দামে বিক্রি হতো। প্রতি ৫০০ গ্রামে ৩০ টাকা বেড়ে বর্তমানে নিডো ৩৯০ টাকা, ডানো ৩৭৫ টাকা, মার্কস ৩৫০ টাকা, ডিপ্লোমা ৩৬০ টাকা এবং ডিপ্লোমিল্ক ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে ছোট প্যাকেটের ৪০০ গ্রাম, ২০০ গ্রাম এবং ১০০ গ্রাম দুধেও কোম্পানিভেদে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
চট্টগ্রামের জামালখানের বাসিন্দা ফাহমিদা সুলতানা বলেন, "দিনদিন সব ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ইতোমধ্যে তেল, চিনি, আটা-ময়দাসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে জীবন চালানো কঠিন হয়ে উঠেছে। কাল দুধ কিনতে গিয়ে দেখি, আধাকেজি দুধে আগের চেয়ে ৩০ টাকা বেড়ে গেছে। এভাবে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়লে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।"
কাজীর দেউড়ি সিডিএ মার্কেটের জীবন গ্রোসারীর স্বত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, "গত দুই সপ্তাহে প্রতিটি কোম্পানি প্রতি কেজি দুধের দাম ৩০-৪০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে আমরাও বাড়তি দামে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।"
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সানোয়ারা গ্রুপের (ডিপ্লোমিল্ক) জিএম সেলস মকবুল আহমেদ বলেন, "দেশের গুঁড়াদুধের বাজার আমদানি নির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে গুঁড়াদুধের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় বাজারেও পণ্যটির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।"
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের সব কোম্পানি দুধের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুল ইসলাম বলেন, "গত দুই মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে গুঁড়াদুধের দাম প্রতি টনে প্রায় এক হাজার ডলার বেড়েছে। একই সময়ে দুধ আমদানিতে জাহাজ ভাড়া ও আনুষঙ্গিক খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। যে কারণে দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে বেড়েছে দেশীয় বাজারে সেই পরিমাণে বাড়ে নি। ফলে দেশীয় বাজারে দুধের দাম আরো বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।"
গ্লোবাল ডেইরি ট্রেড ডট ইনফোর তথ্যমতে, গত ৪ জানুয়ারি থেকে টানা দুই মাস আন্তর্জাতিক বাজারে গুঁড়াদুধের দাম বৃদ্ধি। এই সময়ের মধ্যে টানা বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি টন গুঁড়াদুধের দাম ৩ হাজার ৮৮৬ ডলার থেকে ৪ হাজার ৭৫৭ ডলার হয়েছে। সেই হিসেবে, গত দুই মাসে প্রতি টন গুঁড়াদুধের দাম ৮৭১ ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে।"
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে দুধ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এমএইচ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন মিন্টু বলেন, "গত দুই বছরে করোনার কারণে সারা বিশ্বে ডেইরি খাতে বড় ক্ষতি হয়েছে। করোনার সময় লকডাউনের কারণে খামার মালিকরা গাভীকে পর্যাপ্ত খাবার দিতে পারেনি। খাদ্য সংকটের কারণে অনেক উদ্যোক্তা গাভী জবাই করে মাংস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে দুধের সংকট তৈরি হয়েছে। এতে দুধের দাম টনে এক হাজার ডলার পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
দেশে স্কিমড ও ফুলক্রিম দুই ধরণের দুধ আমদানি হয়। এর মধ্যে আবার ফুলক্রিম দুধ বাজারে আসে দুইভাবে। একটি হলো আন্তর্জাতিক কোম্পানির এজেন্ট বা ডিলাররা সরাসরি পণ্য আমদানি করে বিক্রি করে; অপরটি ব্যাগেজ রুলে বিমানের যাত্রীদের মাধ্যমে আনা পণ্য বাজারে প্রবেশ। ফুলক্রিম পাউডার মিল্ক চা সহ সরাসরি খাদ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। অন্যদিকে আমদানি হওয়া স্কিমড মিল্ক পাউডার মিষ্টি, আইসক্রিম ও বেকারি পণ্যতে বেশি ব্যবহৃত হয়।
