অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ৭.১৫% প্রবৃদ্ধি

দেশের বৃহৎ শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৬,৪৮৪.৬৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ১৫৩৮৪.৮৭ কোটি টাকা।
অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০৯৯.৭৯ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ২০২৩-২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭.১৫ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আমদানি মূল্য আগের তুলনায় বেড়েছে। আমদানি মূল্য বাড়ায় শুল্কও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কিছু পণ্যের এসেসমেন্ট ভ্যালু বৃদ্ধি করেছে। তাছাড়া কাস্টমস এর এআইআর শাখার নজরদারি বৃদ্ধির কারণে ধরা পড়ছে শুল্ক ফাঁকি ও জালিয়াতির ঘটনা। এসব খাতে বেড়েছে জরিমানা সহ অতিরিক্ত রাজস্ব আয়। এসব পদক্ষেপের কারণে রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৭৮৬৬ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭.৭৩ শতাংশ কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই মাসে ৫৪৭২.৭৭ কোটি টাকা, আগস্ট মাসে ৫৭১১.৬৮ কোটি টাকা এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৫৩০০.২১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে ১৪.৪৬ শতাংশ, আগস্ট মাসে ৩.৮৮ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৩.৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। অর্থাৎ প্রথম তিন মাসেই তার আগের অর্থবছরের তুলনায় বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পেস্তা, শাহী জিরা, কাঠবাদাম, আলুবোখারা, জিরা, মিষ্টি তেঁতুল, দারচিনি, চিয়াসিড ইত্যাদি পণ্যের উপর ১৮৯ শতাংশ থেকে ৯৩৩ শতাংশ পর্যন্ত এসেসমেন্ট ভ্যালু বৃদ্ধি করে কাস্টম। এতে চলতি অর্থবছরে কাস্টমসের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া অনিয়ম ও জালিয়াতি রোধে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে নজরদারি বাড়িয়েছে কাস্টমস। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি, পণ্য রপ্তানি না করে অর্থ পাচার, শুল্ক ফাঁকি ও নানা অনৈতিক কাজে যুক্ত রয়েছে এমন ৭০০ প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। কাস্টমসের তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে শতাধিক সিএন্ডএফ (ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং) এজেন্ট, এবং প্রায় ৬০০ আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র এবং ডেপুটি কমিশনার মোঃ বদরুজ্জামান মুনশি টিবিএসকে বলেন, "বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়েও কাস্টম হাউসের রাজস্ব আয়ে পজিটিভ গ্রোথ দেশের অর্থনীতির জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক খবর। চোরাচালান বন্ধ, জালিয়াতি রোধসহ শুল্ক ফাঁকি রোধে নানামুখী উদ্যোগের কারণে রাজস্ব আদায় বেড়েছে।"
তিনি আরো বলেন, "শুল্ক ফাঁকি রোধে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছি। এই প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম এবং মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।"
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ১২৯১৮.৪৫ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ১৫৩৮৪.৮৭ কোটি টাকা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ১৬৪৮৪.৬৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ওমর হাজ্জাজ টিবিএসকে বলেন, "বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্দা পরিস্থিতির ক্রমশ উন্নতি ঘটছে। চলমান ডলার সংকটও কাটতে শুরু করেছে। বেড়েছে আমদানির পরিমাণও। আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে যেমন সাপ্লাই চেইনে উন্নতি ঘটেছে, তেমনি কাস্টমসের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে।"
বেড়েছে অনিয়মের বিপরীতে জরিমানা ও রাজস্ব আয়
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে আমদানি রপ্তানি পণ্য চালানে জালিয়াতি রোধে কাজ করে অডিট ইনভেস্টিগেশন এন্ড রিসার্চ (এআইআর) ইউনিট। সন্দেহজনক চালান আটক করে পণ্যের কায়িক পরীক্ষা করে এই শাখা। জালিয়াতি ধরা পড়লে ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব এবং জালিয়াতির জন্য জরিমানা আদায় করে এই শাখা।
এআইআর শাখার তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অনিয়মের বিপরীতে জরিমানা আদায় হয়েছে ২৩.৪৪ কোটি টাকা। ১৪.৬৪ কোটি টাকা অনিয়মের বিপরীতে অতিরিক্ত রাজস্ব সহ এই তিন মাসে ৩৮.০৮ কোটি আদায় করে এআইআর শাখা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে জরিমানা সহ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ১৭.৬৮ কোটি টাকা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় অনিয়মের বিপরীতে রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় ৫৪ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে অনিয়মের বিপরীতে জরিমানা সহ রাজস্ব আয় হয় ২৪.০২ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৯.৫৪ কোটি টাকা, এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬০.৪৬ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। গত তিন অর্থবছরে অনিয়মের বিপরীতে জরিমানা সহ রাজস্ব আয় বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি।
কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৭৭৬১৬ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ৬১৬৩২.৬৬ কোটি টাকা, যা তার আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪.১৮ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছিলো ৫৯১৬৯.৮৩ কোটি টাকা।