এনবিআর সংকট: কোভিডের পর সবচেয়ে কম রাজস্ব প্রবৃদ্ধি দেখছে বাংলাদেশ

কোভিডের পর গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে কম রাজস্ব প্রবৃদ্ধির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা এই পরিস্থিতির জন্য সরকার ঘোষিত এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক আন্দোলনকে দায়ী করেছেন।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩.২৪ শতাংশ, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের পর সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশ।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ দশকে গড় রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশের বেশি। কেবল ২০১৯-২০ অর্থবছরে কোভিড পরিস্থিতির কারণে প্রবৃদ্ধি নেমে যায় ১.৯৬ শতাংশে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৫.৪৪ শতাংশ।
এনবিআরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মে ও জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের চাপ বেশি থাকে। কিন্তু কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে মে মাসের রাজস্ব আদায়ে বড় ধাক্কার আশঙ্কা রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "ফলে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ২০১৯-২০ অর্থবছরের পর সবচেয়ে কম হতে পারে।"
চলতি অর্থবছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, পরে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে রাজস্ব আদায়ে ধীরগতি দেখা দেয়। ডিসেম্বর থেকে রাজস্ব আদায়ে কিছুটা গতি ফিরলেও এপ্রিলে আবারও ভাটা পড়েছে।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এনবিআর বিলুপ্তির দাবিতে সাম্প্রতিক আন্দোলনের কারণে মে মাসের রাজস্ব আদায়ে বড় ধাক্কা আসতে পারে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আন্দোলন যত দীর্ঘায়িত হবে, রাজস্ব আদায়ে তত নেতিবাচক প্রভাব পড়বে—যা ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে।
এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৩,৫৮,৭৩২ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২,৮৭,২৫৭ কোটি টাকা। এই সময়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭১,৪৭৬ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের শুরুতে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪,৮০,০০০ কোটি টাকা। পরে তা কমিয়ে ৪,৬৩,৫০০ কোটি টাকা করা হয়।
গত এপ্রিল মাসে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ৭.৪০ শতাংশ হলেও, ওই মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫,৮১০ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে।
এদিকে, গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ১,০৫,০০০ কোটি টাকা।
সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মে মাসে এনবিআরের কর্মকর্তাদের আন্দোলনের কারণে রাজস্ব ঘাটতি আরও বাড়তে পারে এবং তা মূল্যস্ফীতির তুলনায়ও কম হবে।"
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশামতো না হলে ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত (ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও) আরও কমতে পারে, যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ বাড়াবে।