মার্চে ব্যাংক থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ১৭,৭৭০ কোটি টাকা; নন-ব্যাংকিং খাত থেকে নিয়েছে ১,৪০৯ কোটি টাকা।
ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় ৬ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা এবং মার্চে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক থেকে ৫২,৩৬০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫০,৩৮০ কোটি টাকা (৯৬.২১%) নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গ্রাহকরা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে বরং ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বেশি টাকা তুলে নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি মেয়াদে গ্রাহকরা সঞ্চয়পত্রে ৫৫,৮৬২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন, কিন্তু উত্তোলন করেছেন ৫৯,৩৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সঞ্চয়ের তুলনায় ৩,৫১০ কোটি টাকা বেশি তুলে নিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, টাকার প্রচলন যত বাড়বে, মুদ্রাস্ফীতি তত বাড়বে। নন-ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকারের ঋণ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর কারণ হলো, এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের টাকা সরাসরি সরকারের কাছে যাবে, এতে অর্থের সঞ্চালন কমবে এবং একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতিও কমবে।
তিনি বলেন, "তফসিল ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিলেও মানি সার্কুলেশন নতুন করে বাড়েনা। আমাদের পরামর্শ ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থেকে যেন ঋণ কমিয়ে আনে। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ দিতে হলে নতুন করে মানি সার্কুলেশন বাড়াতে হবে এবং এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।
সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ কমার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার এই খাতের বিনিয়োগের সুদহার কমিয়েছে। একইসঙ্গে সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে ট্যাক্স রশিদের কপি জমা দিতে হয়- তাই এতে বিনিয়োগ কমেছে।
সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ কমার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার এই খাতের বিনিয়োগের সুদহার কমিয়েছে। একইসঙ্গে সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে ট্যাক্স রশিদের কপি জমা দিতে হয়- তাই এতে বিনিয়োগ কমেছে।
সরকার চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং সোর্স থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১,০৬,৩৩৪ কোটি টাকা।
সরকার তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে গত ২০২২ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ না নিয়ে উল্টো আগের ঋণ বেশি পরিশোধ করেছে। ডিসেম্বরে সরকারের পরিশোধের পরিমাণ ছিল প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকা।
যদিও ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। ব্যাংকগুলো ২০২৩ এর জানুয়ারিতে সরকারের (ট্রেজারি বিল-বন্ড) কিনে ঋণ দিয়েছে ৫৭২২ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে কিনেছে ৭৮৪৪ কোটি টাকা এবং মার্চে ৬,০২৪ কোটি টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিবিএসকে বলেন, "ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটের কারণে গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধ করেছে বেশি।"
এ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন টিবিএসকে বলেন, "সরকারের উচিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার না করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ রাজস্বসহ অন্যান্য উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করা।"
২০২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ২.৫৬ লাখ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। ২০২২ এর জুলাই থেকে ২০২৩ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।