টাকায় লোকাল এলসি পেমেন্ট নিয়ে রপ্তানিকারকদের সাথে আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠক

টাকায় লোকাল ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলা ও সেটেলমেন্ট করা সম্ভব হবে কিনা তা নির্ধারণে পোশাক রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আজ সভায় বসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জানিয়েছেন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা।
আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে এ সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) নেতারা অংশ নেবেন।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, লোকাল ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলা ও সেটেলমেন্টের ক্ষেত্রে ডলারে পেমেন্ট করতে হয়।
এর আগে, গত ৬ নভেম্বর স্থানীয় পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে টাকায় এলসি খোলা এবং মূল্য পরিশোধের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় বিকেএমইএ। মূলত এ চিঠির প্রেক্ষিতেই সিদ্ধান্ত নিতে রপ্তানিকারকদের সংগঠনগুলোকে ডেকেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চিঠিতে বলা হয়েছিল, নীট সেক্টরের শতকরা ৮০% কাঁচামাল দেশীয় পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। সুতরাং বর্তমান ডলার সংকট মোকাবেলায় স্থানীয় পর্যায়ে এলসি খোলা ও মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের পরিবর্তে বাংলাদেশি টাকায় এলসি খোলা হলে এ সংকট মোকাবেলা করা কিছুটা হলেও সহজতর হবে।
এলসি কেনা এবং মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ডলারপ্রতি ৭-৮ টাকা করে ডলার কনভার্সন ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ডলারের বদলে বাংলাদেশি টাকায় পরিশোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এই ক্ষতি থেকে ব্যবসায়ীরা মুক্তি পাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "টাকায় লোকাল এলসি খোলা ও সেটেলমেন্ট করা গেলে অবশ্যই দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমবে। তাই, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবসায়ীদের এই প্রস্তাবটি বিবেচনা করছে। সভায় সবার সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান টিবিএসকে বলেন, "আমরা যেসব কাঁচামাল ব্যবহার করে রপ্তানিপণ্য তৈরি করি, তার একটা বড় অংশ স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়। এসব পণ্যের জন্য ডলারে লোকাল ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খুলতে হয়। সেটেলমেন্টও করতে হয় ডলারে।"
"যেহেতু স্থানীয় বাজার, এসব এলসির একটা অংশ টাকায় খোলা ও সেটেলমেন্ট করা সম্ভব। এজন্য আমরা চাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের এ সুযোগ দিক। মূলত এ বিষয়টিই নির্ধারণে সভায় আলোচনা হবে।"
এমব্রয়ডারির মতো কিছু সার্ভিসের জন্য ডলার খরচ করতে হয় না উল্লেখ করে এ রপ্তানিকারকদের নেতা বলেন, "এগুলোর জন্যও আমাদের ডলারে পেমেন্ট করতে হয়। অথচ এর জন্য অল্পকিছু সুতা আমদানি করতে হয়। অনেকসময় স্থানীয় বাজার থেকে টাকায়ও সুতা কেনা যায়। এসব ক্ষেত্রে টাকায় এলসি খোলা ও সেটেলমেন্ট সম্ভব।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ চাচ্ছে টাকায় লোকাল এলসি খোলা ও সেটেলমেন্ট করতে। এতে রপ্তানিকারকদের আলাদা করে ডলার ম্যানেজ করতে হবে না। বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখলে এটি দেশের জন্যও ভালো হবে।
তবে, বিটিএমএ নেতারা এ বিষয়ে দ্বিমত করছেন। তাদের বক্তব্য, যেসব পণ্য তারা বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এর সদস্য গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রির জন্য লোকাল এলসি নেন, সেসব পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। যেমন: লোকাল এলসির মাধ্যমে যে সুতা বিক্রি করা হয়, তার জন্য তুলা বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হয়।
ফলে টাকায় লোকাল এলসি খোলা হলে তুলা আমদানির জন্য তাদের আলাদা করে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার খুঁজতে হবে। বর্তমানে লোকাল এলসিতে ডলারে পেমেন্ট পাওয়ার কারণে তাদের এই ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না।
বিকেএমইএ এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম জানান, "লোকাল এলসি খোলা ও সেটেলমেন্টে ডলার প্রয়োজন হওয়ায় এসব ডলারের কনভার্সনের জন্য আমাদের ক্ষতির পাশাপাশি ব্যাংক চ্যানেলে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়।"
তিনি আরো বলেন, লোকাল সব এলসি খোলা ও সেটেলমেন্ট টাকায় সম্ভব নয়, কারণ তাদের তৈরি করা অনেক পণ্যের কাঁচামালও আমদানি করে আনতে হয়। তবে, কাঁচামাল আনতে যে পরিমাণ খরচ হয়, স্থানীয় বাজারে ওই কাঁচামাল থেকে তৈরি পণ্য কিনতে তার চেয়েও অনেক বেশি ডলারের প্রয়োজন হয়।
এ বিষয়টিকে কীভাবে সমাধান করা যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা করতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আমাদের ডাকা হয়েছে।
বিটিএমএ এর ডিরেক্টর ইস্তাহাক আহমেদ সৈকত টিবিএসকে বলেন, "বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বিশ্ববাজারে দ্বিতীয় স্থানে আসার পেছনের স্থানীয় টেক্সটাইল শিল্প বড় ভূমিকা ছিল। ডলার সংকটের কারণে আমরা এখনই তুলার জন্য ব্যাংকগুলোতে এলসি খুলতে গিয়ে সমস্যার সম্মূখীন হচ্ছি।"
"লোকাল ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির পেমেন্টে যদি টাকায় দেওয়া হয় তখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমাদেরকে জিম্মি করবে। যার প্রভাব পড়বে রপ্তানিতে," বলেন তিনি।