কর্পোরেট ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল লোনে ইন্টারেস্ট রেটের ক্যাপ তোলা হবে না: বাংলাদেশ ব্যাংক

কর্পোরেট ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল লোনে ৯% ইন্টারেস্ট রেটের ক্যাপ তোলা হবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এছাড়া ব্যবসায়ীরা আমদানি পেমেন্টের জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার চাইলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি এ দাবি মানার ব্যাপারে আশ্বাস দেয়নি। তবে সরকারি এলসি পেমেন্টসহ জরুরি প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে।
সেইসঙ্গে খেলাপী হওয়া এড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা এবং রিজার্ভ থেকে নেওয়া এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) লোন পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব দাবি বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক কনজিউমার লোনে ইন্টারেস্ট রেটের ক্যাপ দেয়নি বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক। তিনি বলেন, ইন্টারেস্ট রেটের ক্যাপ ছিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল লোন, ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন, র ম্যাটেরিয়াল লোনগুলোতে এটি আছে।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এ সভায় গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মো. জসীম উদ্দিন, বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, বিকেএমইএ এর এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেমসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।
ইন্টারেস্ট রেটের ক্যাপ না তোলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বলা হয়েছে জানিয়ে সভা শেষে মো. জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, "ইন্টারেস্ট রেট কম থাকলে ইনভেস্টমেন্ট বেশি হয়। আমেরিকাতে ইন্টারেস্ট রেট বাড়ালে মূল্যস্ফীতি কমলেও আমার মনে হয়, আমাদের দেশের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য না।"
ইন্টারেস্ট রেট বাড়ালে সাধারণ মানুষের জন্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, "গভর্নর মহোদয় বলেছেন ক্যাপ ওঠানো হবে না।"
গ্যাস ও ইলেক্ট্রিসিটির স্বল্পতার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল।
"ডিসেম্বর মাসে আমাদের ব্যাংকগুলোতে (ঋণের) কিস্তি দিতে হবে, অথচ ওয়ার্কারদের বেতন দেওয়াটাই আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ করেছি ডিসেম্বর শেষেই আমাদের ঋণগুলোকে খেলাপী না করে (কিস্তি জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে) আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এক্সটেন্ড করতে," বলেন জসীম উদ্দিন।
সময়সীমা কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে, আবার কেন বাড়াতে হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "র ম্যাটেরিয়াল ও জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে কোভিডের চেয়েও আমাদের অবস্থা এখন বেশি খারাপ। দাম বাড়ায় সরকার জ্বালানি ইমপোর্ট করতে পারছে না, গ্যাস স্বল্পতার কারণে আমরা ফ্যাক্টরি চালাতে পারছি না। এখন আমি ফ্যাক্টরি চালাতে না পারলে, এলসি করে র ম্যাটেরিয়াল নিয়ে আসতে না পারলে ঋণের কিস্তি কীভাবে দেবো?"
এ কারণে কোভিডকালীন সময়ের মতো এখন তাদের পলিসি সাপোর্ট ও ঋণ পরিশোধে সময়সীমা বাড়ানো দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।
"ইন্টারেস্ট রেট তো আমরা পে করি যাচ্ছি। এতে ব্যাংকও ইন্টারেস্ট পেলো এবং ঋণগ্রহীতাও খেলাপী হলো না। আমরা মনে করি, সময়সীমা বাড়ালে ব্যাংকের বা ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে যারা সাফারিংস এ আছে, তাদেরও প্রবলেম হয় না। আমার মনে হয়, গভর্নর মহোদয় এ বিষয়ে পজেটিভ," যোগ করেন তিনি।
ডলারের দাম নিয়েও সভায় কথা হয়েছে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এখন এক্সপোর্টাররা ডলারের দাম পাচ্ছেন ১০১ টাকা; ইমপোর্টাররা ডলার কিনতে খরচ করছেন ১০৫-১০৬ টাকা।
"তাই আমরা বলেছি, ইমপোর্ট ও এক্সপোর্টে ডলারের প্রাইজটা যেন এক করা হয়," বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক যা বলছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
"এফবিসিসিআই কোভিডকালীন সময়ের মতো পলিসিগত সুবিধা চেয়েছে। আমরা বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেখব," বলেন তিনি।
"ইন্ডাস্ট্রিয়াল র ম্যাটেরিয়াল আমদানিতে সহায়তার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কনসিডার করছে। স্পেসিফিক কিছু পণ্য ছাড়া আমরা সব পণ্যই আমদানি অব্যাহত রেখেছি।"
আমদানি-রপ্তানির ডলার রেট এক করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ধীরে ধীরে সেটা বাস্তবায়ন করবে।
"আমদানি-রপ্তানির রেট সবসময় এক থাকে না। এটার সবসময়ই একটা পার্থক্য থাকে। সাধারণত ২ টাকার পার্থক্য থাকে। আমরা সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছি।"
ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে ব্যবসায়ীদের আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, "করোনাকালে নীতি সহায়তা দিয়েছি। বর্তমানে যে পরিস্থিতি রয়েছে, সে অনুযায়ী এমন নীতি সহায়তা আসতে পারে। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিবেচনায় আছে।"
রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তা চাওয়ার বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, "এখন রেমিট্যান্স বাড়ছে, ঈদ উপলক্ষে সেটি আরো বাড়বে। আমদানি কমেছে। আগের চেয়ে ডলার সংকট কমে আসবে। তখন ব্যাংক নিজেই এলসি খুলতে এবং সেটেলমেন্ট করতে পারবে। আমাদের যে নীতি-সহায়তা প্রয়োজন হবে, সেটিই দিয়ে যাবো।"
"এরপরও যদি সরকারি এলসি সেটেলমেন্টসহ জরুরি কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করবে। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে ঋণপত্র খোলার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হবে," বলেন তিনি।