যশোরাঞ্চলে বাড়ছে তুলার আবাদ

ধানসহ অন্যান্য ফসলে অব্যাহত লোকসানের কারণে যশোরাঞ্চলের ছয় জেলার কৃষকরা গত কয়েক বছর ধরে তুলা চাষে ঝুঁকছেন। শুধু এ অঞ্চল থেকে প্রতি বছর গড়ে ১৯ হাজার বেল (১৮২ কেজিতে এক বেল) তুলা উৎপাদন হচ্ছে। টাকার অংকে এই তুলার দাম ৪১ কোটি ৪৯ লাখ টাকারও বেশি।
কৃষকরা বলছেন, তুলা দেরিতে ফলন দিলেও লোকসানের আশঙ্কা থাকে না। তাই তারা এই ফসলের আবাদ বাড়াচ্ছেন।
দেশীয় বীজ
অন্যদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি তারা এই অঞ্চলের কৃষকদের দেশীয় তুলার বীজ সরবরাহ করছেন। অন্য ফসল চাষে লোকসান থাকায় কৃষকরা তুলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
যশোরাঞ্চলের ছয় জেলার মধ্যে রয়েছে- গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ, বরিশাল ও ঝালকাঠি জেলা।
উৎপাদন
যশোর তুলা উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যশোরাঞ্চলের ছয় জেলায় তুলা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৪৬৫ হেক্টর, আবাদ হয়েছিল তিন হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন হয় ১৮ হাজার ২৬৫ বেল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তুলা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তিন হাজার ৫০০ হেক্টর, আবাদ হয়েছিল তিন হাজার ১০৫ হেক্টর। যা থেকে তুলা উৎপাদিত হয় ১৮ হাজার ৬৯৮ বেল।
২০১৯-২০ অর্থবছরে তুলার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় তিন হাজার ৫০০ হেক্টর। আবাদ করা হয় তিন হাজার ১২৫ হেক্টর। তুলা উৎপাদন হয়েছিল ১৯ হাজার ২৩০ বেল। আর চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে।
ইতোমধ্যে চাষিরা বীজ বপন শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ধান ও পাটের বদলে তুলা
যশোরের সুজলপুর গ্রামের মোজাফর হোসেন জানান, গত বছর তিনি তুলার চাষ করেছিলেন। সেবার মোটামুটি ভালোই লাভ ছিল। কিন্তু একই জমিতে তার আগের বছর ধানের চাষ করে তাকে লোকসান গুনতে হয়েছিল।
'এবার আমি দুই বিঘা জমিতে তুলার আবাদ করব। ইতোমধ্যে বীজ বপন শুরু করেছি। আশা করছি ফলন ভালো হবে,' যোগ করেন তিনি।
ঝিনাইদহের বারোবাজার এলাকার চাষি আসাদুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে তিনি তিন বিঘা জমিতে তুলা আবাদের যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন। গতবছর তিনি একই পরিমাণ জমিতে তুলার আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছিলেন।
যশোরের খাজুরার রেজাউল ইসলাম এবার পাঁচ বিঘা জমিতে তুলার আবাদ করছেন। গত বছর তিনি দুই বিঘা জমিতে আবাদ করে তুলার ফলন পেয়েছিলেন ৩২ মণ। মাত্র ৯ হাজার টাকা খরচ করে তিনি তুলার মণ আড়াই হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন।
ঝিকরগাছা উপজেলার শিওরদা গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, গত বছর তিন বিঘা জমিতে তুলার আবাদ করে ১৪ মণ ফলন পেয়েছিলেন। খরচ পড়েছিল প্রায় ১২ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমেও একই পরিমান জমিতে আবাদ করেবেন।
তিনি বলেন, ধান ও পাট আবাদ করে লাভের মুখ দেখা যায় না। কষ্ট করেও উৎপাদন করলেও মহাজনরা সব লাভ খেয়ে নেয়। তাই তিনি তুলার আবাদে ঝুঁকেছেন।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড যশোর জোনাল অফিসের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. কুতুব উদ্দিন জানান, গত ৫-৬ বছর ধরে যশোরাঞ্চলে তুলার আবাদ বাড়ছে। ধানসহ অন্য ফসলে চাষিরা তেমন লাভ না পাওয়ায় তারা তুলা চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
'এখানকার চাষিদের দেশি বীজ সরবরাহ করেছি। এই বীজে বিঘায় ২১ মণ তুলা উৎপাদন হয়ে থাকে। আমাদের দেশে উৎপাদিত তুলা বিশ্বমানের' বলে জানান তিনি।
'আমরা চাষিদের ঋণ দিয়ে থাকি। গত পাঁচ বছরে আমরা এক কোটি পাঁচ লাখ টাকার ঋণ দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের ৯৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা আদায় হয়েছে। চাষিরা ঋণ সুবিধা পেয়ে আবাদ বাড়াচ্ছেন,' বললেন কুতুব উদ্দিন।