মহামারির মধ্যেও সৌদি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে

২০২০ সালের প্রথম ১০ মাসে সৌদি আরবে বসবাসকারী প্রবাসী শ্রমিকরা ৩২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন নিজ নিজ দেশে। ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় এ সংখ্যা ১৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পরিবারকে সাহায্য করার জন্য নিজ দেশে অর্থ পাঠানোর কারণেই রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত এপ্রিলে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছিল, মহামারির কারণে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ কমে যেতে পারে।
সৌদি আরবের ১ কোটি ৩৬ লাখ শ্রমিকের তিন চতুর্থাংশই প্রবাসী শ্রমিক। প্রবাসী শ্রমিকদের বেশিরভাগই সিরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার।
সৌদি সেন্ট্রাল ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, জানুয়ারি- অক্টোবর মাসের মধ্যে রেমিট্যান্স প্রবাহ সবচেয়ে বেশি ছিল গত জুনে। গত বছরের একই মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পায় ৬০ শতাংশ। জুলাইতে বৃদ্ধি পায় ৩২ শতাংশ। আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪ দশমিক ৭, ২৮ দশমিক ৫ ও ১৯ দশমিক ২ শতাংশ।
রিয়াদ ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিসেবা প্রতিষ্ঠান আল রাজি ক্যাপিটালের প্রধান গবেষক মাজেন আল-সুদাইরি আরব নিউজকে জানান, "সম্প্রতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় ঋণের পরিমাণ ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত, ফিলিপাইনের মতো দেশগুলোতে কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বেকারত্বের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে।"
"তাই আমাদের বিশ্বাস প্রবাসীদের নিজ দেশে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক অবস্থার কারণেই রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।"
কোভিড-১৯ এর কারণে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতির তুলনায় খরচ কমে আসায় প্রবাসীদের উদ্ধৃত আয় বেড়েছে। ফলে নিজ দেশে আগের তুলনায় বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন তারা। এটিও রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির আরেকটি কারণ বলে জানান তিনি।
"সৌদিতে প্রবাসীদের বেকারত্বের আশঙ্কা এবং তাদের নিজ দেশেও বেকারত্বের হার কমে এলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে বলে মনে করি।" বলেন আল-সুদাইরি।
১০ মাস সময়কালে সৌদির প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেলেও দেশটির নাগরিকদের বিদেশে অর্থ পাঠানোর হার কমেছে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
গত মার্চে সৌদিতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় এবছর সৌদি নাগরিকদের বিদেশে অর্থ পাঠানোর হার কমেছে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ। মে-তে দেশের অভ্যন্তরের চলাচল চালু হওয়ার পরও এ সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৫২ শতাংশ কম ছিল।
গত জুনে সৌদিতে পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও পরবর্তী মাসগুলোতে আবারও কমে আসে। মহামারি এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণেই এমনটা হয়েছে বলে জানান আল-সুদাইরি।
"মহামারির কারণে ভ্রমণ এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত রেমিট্যান্স কমেছে। এমনকি লকডাউনের শুরুর দিকে ব্যবসা সংক্রান্ত রেমিট্যান্সও কমেছে।" বলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলে আগামী বছরই এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
- সূত্র: আরব নিউজ