প্রণোদনা প্যাকেজের আকার ও মেয়াদ বাড়ছে, জানুয়ারিতে ঘোষণা

কোভিডের সেকেন্ড ওয়েবের প্রভাব মোকাবেলায় তৈরি পোষাকসহ রপ্তানিখাতের শ্রমিকদের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধে ১০,০০০ কোটি টাকার আরেকটি তহবিল গঠন হতে পারে।
এছাড়াও কোভিডে সৃষ্ট ক্ষতি কাটাতে সরকারের ঘোষিত আগের প্রণোদনা প্যাকেজগুলো পর্যালোচনা করে সেগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধি ও অর্থের পরিমাণ বাড়াতে কাজ শুরু করেছে অর্থমন্ত্রণালয়।
কোভিডের সেকেন্ড ওয়েবের প্রভাব মোকাবেলায় নতুন প্রণোদনার পরিকল্পনা তৈরি করতে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সামষ্টিক অর্থনীতি) মো. আজিজুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা কাজ শুরু করেছি। আলোচনা চলছে। তবে নতুন পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।'
জানুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা।
গত মার্চে দেশে কোভিড সংক্রমণ শুরুর পর কৃষক, শ্রমিক ও ছোট-বড় শিল্পোদ্যাক্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য সরকার আর্থিক প্রণোদনার ২১টি প্যাকেজ ঘোষণা করে। এসব প্যাকেজের মোট অর্থের পরিমাণ ১,২১,৩৫৩ কোটি টাকা।
অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেকেন্ড ওয়েবের প্রভাবে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় তৈরি পোশাক খাতসহ রপ্তানিখাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার যে তহবিল বরাদ্দের পরিকল্পনা করা হচ্ছে তার টার্মস এন্ড কন্ডিশন আগের তহবিলের মতোই হবে।
৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ রাখা এবং এ সময়ে কোনো ঋণকে শ্রেণিকরণ না করার সিদ্ধান্ত আরেক দফা বাড়িয়ে মার্চ পর্যন্ত করা হতে পারে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সুবিধা পরে আরো বাড়ানো হতে পারে। এই সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বকেয়া ঋণ পরিশোধের জন্য সহজশর্তের রিশিডিউলিং সুবিধা দেয়া হবে।
বৃহৎ শিল্প ও সেবাখাতের জন্য ঘোষিত আগের ৩০,০০০ কোটি টাকার প্যাকেজে দু'দফায় আরো ১০ হাজার কোটি টাকা যুক্ত করা হয়। অক্টোবর শেষে এই তহবিল থেকে ২৮,৩৩৮ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে।
বৃহৎ কিছু শিল্পগ্রুপ এই তহবিল থেকে স্বল্পসুদে মোটা অংকের ঋণ পেলেও অনেক প্রতিষ্ঠান সহায়তা পায়নি। রপ্তানি অর্ডার বাতিল ও স্থগিত হওয়ার কারণে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিবেচনায় এ তহবিলের আকার বাড়াতে হতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ব্যাংকের মাধ্যমে কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) জন্য ঘোষিত ২০,০০০ কোটি টাকার প্যাকেজের বাস্তবায়ন পরিস্থিতি সন্তোষজনক না হওয়ায় এর আকার না বাড়িয়ে মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।
পাশাপাশি মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির সনদপ্রাপ্ত মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বিতরণের জন্য ৮,০০০ কোটি টাকার পৃথক একটি প্যাকেজ ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে।
তৃণমূলের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল যোগান নিশ্চিত করতে মাইক্রো ফাইন্যান্স নিয়ে কাজ করা রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান পিকেএসএফ, বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে নতুন করে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হতে পারে। গ্রাম পর্যায়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ওই অর্থ ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হবে।
অর্থবিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, নতুন ধরণের কোন প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়া হবে না। কোভিডের প্রভাব কাটাতে আগের ঘোষিত প্যাকেজগুলোতে অর্থের পরিমাণ ও মেয়াদ বাড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া হবে।
এই কর্মকর্তা জানান, বিজিএমইএ গত সপ্তাহে রপ্তানিখাতের শ্রমিকদের আগামি চার মাসের বেতন-ভাতার জন্য তহবিল চেয়ে আবেদন করেছে। এজন্য নতুন অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলে তা আগের তহবিলেই দেয়া হবে। অর্থ পরিশোধের নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে।
নতুন করে প্রণোদনার পরিকল্পনা তৈরি করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের প্রয়োজনীয়তার তথ্য তুলে ধরে নানা সহায়তা চাচ্ছে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কোভিড সংক্রমণ শুরুর পর ব্যবসা, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা প্রদান নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ আসছে।
তিনি বলেন, মোরাটোরিয়াম সুবিধার মেয়াদ আরো বাড়বে। আগামী বছরের পুরোটা জুড়েই ব্যবসায়ীদের এ সুবিধার প্রয়োজন হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে কোভিড পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তার উপর।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রুবানা হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে চার মাসের জন্য নতুন মজুরি সহায়তা প্যাকেজের প্রয়োজন হবে আমাদের। ১২ মাসের স্থগিত রাখার সুযোগসহ ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জের ৬০ মাসের মধ্যে পে ব্যাকে সুযোগ থাকতে হবে।"
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, 'শুধু ঘোষিত প্যাকেজের আকার ও মেয়াদ বাড়ালেই হবে না। আমরা চাই, সরকার প্রণোদনার শর্তগুলো এমনভাবে নির্ধারণ করুক, যাতে তা সত্যিকারের প্রণোদনা দেয়।'