রোনালদো-জর্জিনার বাগদান ঘিরে সৌদি আরবে সমালোচনা-হাসিঠাট্টা, কেন?

ফুটবল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী জর্জিনা রদ্রিগেজের বাগদান সম্পন্ন হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে গত সোমবার (১১ আগস্ট) একটি ছবি পোস্ট করে বাগদানের খবর জানান জর্জিনা নিজেই ।
তবে জর্জিনার আঙুলের বাগদানের সেই বড় হীরার আংটির চেয়ে বেশি নজর কেড়েছে পোস্টের লোকেশন ট্যাগ। ন'বছরের সম্পর্কের এই জুটি প্যারিস, বোরা বোরা বা দুবাই থেকে নয়—ছবিটি পোস্ট করেছেন বরং সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে।
রক্ষণশীল ইসলামিক রাষ্ট্র সৌদি আরবের রাজধানী সাধারণত এমন শহর হিসেবে পরিচিত নয় যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যুগলরা প্রেম উদযাপন করতে আসে। এক দশক আগেও ধর্মীয় পুলিশ রাস্তায় ঘুরে অবিবাহিত যুগলদের খুঁজে বের করত এবং নারীদের চুল ঢাকার জন্য চাপ দিত। বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কও শাস্তিযোগ্য ছিল।
ভক্তরা যখন রোনালদো ও জর্জিনার বাগদানের খবর উদযাপন করছিলেন, তখন এটিও জানা যায় যে এই যুগল এখনও বিবাহিত নয়। ২০২২ সালে রোনালদো সৌদি ফুটবল ক্লাব আল নাসরের সঙ্গে বড় চুক্তি করার পর তিনি এখানেই চলে আসেন সঙ্গী জর্জিনা এবং সন্তানদের নিয়ে।
একদিকে রোনালদো পরিবার রিয়াদে তাদের বিলাসবহুল জীবন উপভোগ করছেন, অন্যদিকে তা যেন সৌদি আরবের দ্রুত পরিবর্তিত সামাজিক সীমারেখাকে পরীক্ষা করছে।

২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান নানান নীতিগত পরিবর্তনের তদারকি করেছেন। এর ফলে এক সময়ের অত্যন্ত সংরক্ষিত দেশটিতে আজ সামাজিক নানা বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে, তবে রাজনৈতিক দমন বাড়ানো হয়েছে।
কয়েক বছর আগে, নারীরা পুরুষ ড্রাইভারের সঙ্গে গাড়িতে বসলেই পুলিশ চেকপয়েন্টে তাদের প্রশ্ন করা হতো। এমনকি ২০১৮ সালের আগে নারীরা গাড়ি চালাতে পারতেন না।
আজও পুরোপুরি স্পষ্ট নয় যে সৌদি আরবে বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক এবং একসঙ্গে বসবাস বা অবিবাহিত গর্ভধারণ অনুমোদিত কি না। এসবের লিখিত কোনো দণ্ডবিধি নেই, আবার বিভিন্ন বিচারক এসব ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রধান আইনগত নীতি—ইসলামী আইনকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন।
তবে নারীরা এখন মাঝে মাঝে শর্টস ও ক্রপ টপ পরে রাস্তায় বের হন, যদিও প্রকাশ্য পোশাকের নিয়ম অনুযায়ী এটি অনুমোদিত নয়। মদ নিষিদ্ধ থাকলেও কালোবাজারে এটি জোরালোভাবে পাওয়া যায়, আর মাঝে মাঝে শহরের 'ড্রাই' নাইট ক্লাবের বাইরে প্রকাশ্যে মদ্যপ তরুণদের লড়াই করতে দেখা যায়।
সৌদি সরকারের রোনালদোর জন্য বিশেষ কোনো ছাড় দিয়েছে কি না, অথবা অবিবাহিত যৌন সম্পর্ক ও একসঙ্গে বসবাস বর্তমানে অনুমোদিত কি না—এই বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেননি। ৪০ বছর বয়সী রোনালদো বর্তমানে পর্তুগালের নাগরিক।

রোনালদোর সঙ্গী জর্জিনা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লাল গালিচায় হাজির হয়েছেন, তাদের আধুনিক বাংলোর বাইরে বিকিনিতে সূর্যস্নানের ছবিও ছেড়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে; সন্তানদের সঙ্গে পাঁচ-তারকা রিসর্টে ঘুরেছেন।
অন্যদিকে, সৌদিতে কম সুবিধাপ্রাপ্ত নারীরা, যারা বিবাহ সনদ দিতে পারে না, সাধারণত চিকিৎসা, শিক্ষা বা সন্তানদের জন্য বৈধ বসবাসের অনুমতি পায় না এবং তাদের শিশুদের জন্ম নিবন্ধন করতেও নানা অসুবিধার সম্মুখীন হন।
রোনালদো-জর্জিনা জুটির বাগদানের পোস্টে আরব অনুসারীরা নানা হাস্যরসাত্মক মন্তব্য করেছেন। একজন লিখেছেন, 'ওহ, এটা তো সত্যিই বেশ দ্রুত বাগদান!'
এছাড়া, বাগদানকে কেন্দ্র করে আরব মিমগুলো দ্রুত ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি মিমে বলা হয়েছে, রোনালদোকে বিয়ের খরচ যোগাড় করতে সৌদি আরবে দুই বছর কাজ করতে হয়েছে।
অন্য একটি মিমে ছবির সঙ্গে লেখা ছিল, 'এটা কেবল 'পরিচিত হওয়ার সময়কাল' ছিল,'—যা তাচ্ছিল্যের সুরে বোঝাচ্ছে যে কিছু সৌদি আরব পরিবারে সংক্ষিপ্ত অনুমোদিত সময় পার করে তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন।
গত জুনে, রোনালদো সৌদি আরবে তার চুক্তি আরও দুই বছর বাড়িয়েছেন।
ক্লাব দ্বারা প্রকাশিত একটি ভিডিওতে তিনি বলেন, 'আমার পরিবার সবসময় আমার সিদ্ধান্তে আমাকে সমর্থন করে। তাছাড়া সৌদির মানুষ অত্যন্ত আন্তরিক। এজন্য আমরা সেখানে বসবাস করতে চাই এবং এখানেই আমাদের জীবন চালিয়ে যেতে চাই।'