২০টি পেইনকিলার নিয়ে মুশফিকের খেলার গল্প শোনালেন স্ত্রী

সবার আগে মাঠে এসেছেন, অনুশীলন সেরে সবার পরে মাঠ ছেড়েছেন; এমন ঘটনা মুশফিকুর রহিমের বেলায় পরিচিত দৃশ্য। দলের প্রতি নিবেদন, পরিশ্রম, ত্যাগ, প্রতিশ্রুতিতে তিনি রীতিমতো উদাহরণ। এসব ঠিক কোন পর্যায়ের, মুশফিকের ওয়ানডে ঘোষণার পরদিন সেটা জানালেন তার স্ত্রী জান্নাতুল কিফায়াত মন্ডি। সমালোচকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে রাখলেন, সমালোচনাতে যেন লাগাম থাকে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দলের অনেক বড় স্বপ্নে বড় আশা ছিল মুশফিকের প্রতি। কিন্তু দলের পারফরম্যান্সের মতো তিনিও থেকে গেছেন বিবর্ণ। ২ ম্যাচে মাত্র ২ রান করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। সাম্প্রতিক ফর্ম ও এমন সফরের পর এই ফরম্যাটে নিজের পথটা বেশি দেখেননি তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন মুশফিক। বুধবার রাত সোয়া ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি।
যে ফরম্যাট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন, রাত পোহাতে সেই ফরম্যাটেই আবার মাঠে নামতে হয় মুশফিককে। ৫০ ওভারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের পক্ষে আজ রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে মাঠে নামেন। তিনি যখন মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলছেন, স্ত্রী মন্ডি তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুশফিকের পরিশ্রম, নিষ্ঠা, একাগ্রতার কথা তুলে ধরেন।
আবেগী এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, 'ওয়ানডে থেকে অবসরের জন্য দারুণ সন্তুষ্টি নিয়ে গর্বের সঙ্গে তোমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি প্রিয়! দারুণ ওয়ানডে ক্যারিয়ার ছিল তোমার আলহামদুলিল্লাহ…। তোমাকে দেখেছি নিজে সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে, ভাঙা পাঁজর নিয়ে খেলতে এবং গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের জন্য একসঙ্গে ২০টি পেইনকিলার নিয়ে খেলতে!'
দেশের প্রতি কতোটা নিবেদিত প্রাণ মুশফিক, নিজের পোস্টে সেটা তুলে ধরেন মন্ডি। নিজের জন্য কখনও মুশফিক খেলেননি, এটা উল্লেখ করেন তিনি। ওযু না করে তিনি ব্যাট ও বল স্পর্শ করতেন না জানিয়ে মুশফিকের স্ত্রীয় লেখেন, 'কখনোই নিজের জন্য খেলোনি তুমি, বরং খেলেছো দল ও দেশপ্রেমের জন্য। ওযু না করে কখনও ব্যাট ও বল স্পর্শ করতো না, এমন সৎ একজনকে নিজের পাশে পেয়ে আমি ধন্য।'
নিজেদের সন্তান মুশফিকের আদর্শ পাবে, এমন আশা মন্ডির। তিনি লিখেছেন, 'তুমি পারিবারিক একজন মানুষ, আমাদের বাচ্চারা তোমার দারুণ পছন্দ করে। আশা করি শাহরোজ তোমার গুণ পাবে এবং তোমাকে জীবনের আদর্শ মানবে। জানি, এটা ছিল কঠিন সিদ্ধান্ত। তবে আরও উজ্জ্বল পথচলা তোমার অপেক্ষায়। আমাদের জন্য এখনও পর্যন্ত যা করেছো, আমাদের পরিবার তাতে সবটুকু তৃপ্ত এবং এটুকুই যথেষ্ট। বাকি দুনিয়া নেতিবাচক কথা বলতে থাকুক…।
১৯ বছরের দীর্ঘ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে অনেক সাফল্যই পেয়েছেন মুশফিক। দেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরির মালিক তিনি। অনেক ম্যাচ জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান, খেলেছেন দারুণ সব ইনিংস। তবে আছে ব্যর্থতাও। শেষ দিকে এসে সমালোচনাও হজম করতে হয়েছে তাকে। এসব সমালোচকদের জন্য মুশফিকের স্ত্রীর বার্তা, 'সবশেষে, দুনিয়াকে আমি এটা বলব, কাউকে এতোটা সমালোচনা করবেন না যে, প্রার্থনার আসরে বসে কাঁদতে হয় আপনাদের জন্য। আমরাও মানুষ।'