তাহলে কি পুরোনো বন্দোবস্তই বহাল রইল: ডিআরইউ’র ঘটনা প্রসঙ্গে কামাল আহমেদ

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ন্যূনতম প্রত্যাশা ছিল, তারা এমন কিছু করবে না বা হতে দেবে না, যাতে বিগত স্বৈরশাসকের ফ্যাসিবাদী কাজ জনআলোচনা থেকে হারিয়ে যায়। ২০২৪ এর আগের ১৫ বছরে কতগুলো সভা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী পান্ডারা ভেঙে দিয়েছে তার সঠিক হিসাব মনে রাখা কঠিন।
ওই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রবীণ বুদ্ধিজীবি, রাজনৈতিক নেতা, মুক্তিযোদ্ধা (প্রকৌশলী ইনামুল হক কিম্বা সাদেক খানের কথা বলা যায়), সাংবাদিকদের অনেকেই শারীরিক ও মানসিক লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সন্ত্রাস দমন আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কী চরম অপব্যবহার ঘটেছে, তা ভুক্তভোগীরা কখনোই ভুলতে পারবেন না।
স্বৈরাচারের অবসানে ধারণা করা হচ্ছিল, এগুলোর ইতি ঘটেছে। নতুন বন্দোবস্তে আইনের যথাযথ প্রয়োগ দেখা যাবে। যার যে অপরাধ, তাকে সেই অপরাধের জন্য প্রযোজ্য সাজা দেওয়া হবে।
ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির ঘটনায় সেই পুরোনো রীতির কাজকর্ম দেখে বিস্ময়ে বিমূঢ় হতে হয়। লতিফ সিদ্দিকীর অতীত অপরাধের ফিরিস্তি কিম্বা অধ্যাপক কার্জন বা সাংবাদিক পান্নার কথিত ফ্যাসিস্ট তোষণের অভিযোগ তুলে যাঁরা তাদের সভা ভন্ডুল করে দেওয়া এবং সন্ত্রাস দমনে আইনে জেলে পাঠানোর সাফাই দিচ্ছেন, তাঁরা কি অযথাই এদের মজলুমের আসনে বসিয়ে দিচ্ছেন না? তাঁদের বিরুদ্ধে যেসব অপরাধের অভিযোগ তুলছেন সেগুলোর বিচারে গত এক বছরে কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি - এ প্রশ্ন তো আপনাদের আরো আগেই সরকারের কাছে করার কথা ছিল।
তাঁদের সভা কি আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে যে নিষেধাজ্ঞা আছে তার মধ্যে পড়ে? তাহলে নাহয় পুলিশ ডেকে সেই কাযর্ক্রম বন্ধ করা যৌক্তিক হতো। নাহলে মুক্ত নাগরিক হিসাবে সবারই সরকারের পক্ষে -বিপক্ষে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। সেই স্বাধীনতা হরণ করে শুধু খারাপ দৃষ্টান্তই তৈরি করা হলো, তা নয়; বরং ১৫ বছরের অপকর্মের আলোচনাকে ঠেলে পিছনে পাঠানো হলো।
প্রকাশ্য আলোচনা সভায় অংশ নেওয়া বা বক্তব্য রাখাকে সন্ত্রাস হিসাবে গণ্য করাও কিন্তু অতীতেরই পুনরাবৃত্তি। জামাত-শিবিরের ঘরোয়া বৈঠক থেকে গ্রেপ্তার করে এভাবেই সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অতীতে মামলা দেওয়ার কথা আমরা জানি। তাহলে কি পুরোনো বন্দোবস্তই বহাল রইল?