Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Tuesday
December 23, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
TUESDAY, DECEMBER 23, 2025
গানে স্বৈরাচারের পতন: বিপ্লবের গান

ইজেল

সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন
20 December, 2025, 03:50 pm
Last modified: 20 December, 2025, 03:52 pm

Related News

  • যে কারণে গান গাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
  • ১৯৭১ সালে জনগণ তাদের দেখেছে: জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে তারেক
  • গান ছেড়ে ভিক্ষা করার ‘হুকুম’, আতঙ্কে রোজগার বন্ধ অন্ধ হেলালের পরিবারের
  • পেপারব্যাক বিপ্লব ও প্রচ্ছদশিল্পে কাজী আনোয়ার হোসেন: রঙে আঁকা এক যুগ
  • একজন গায়কের মৃত্যু, ৩৮ হাজার গান ও একটি প্রশ্ন—রেখে যাওয়া গানগুলো এখন কার?

গানে স্বৈরাচারের পতন: বিপ্লবের গান

সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন
20 December, 2025, 03:50 pm
Last modified: 20 December, 2025, 03:52 pm
মুক্তির গান

এই তো সেদিন, ২০২৪-এর উত্তাল গ্রীষ্মে যখন ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত হচ্ছিল স্বৈরাচার পতনের দাবিতে, তখন হাজারো স্লোগানের ভিড়ে একটি বিষয় ছিল স্পষ্ট—তারুণ্যের মুখে গান। আধুনিক হিপহপ, র‍্যাপ থেকে শুরু করে শতবর্ষ পুরোনো দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান—সব যেন একসূত্রে গেঁথেছিল আন্দোলনকারীদের। তবে বাঙালির এই সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ নতুন কোনো ঘটনা নয়, বাঙালির প্রতিটি বিজয়ের নেপথ্যে ছিল গানের এক বিশাল ক্যানভাস। 

১৯০৫ সালে ভারতের তৎকালীন ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড কার্জন বাংলা প্রদেশকে দুই ভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। আপাতদৃষ্টিতে একে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত মনে হলেও এর নেপথ্যে ছিল গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। ভাষা দিয়ে এক হওয়া একটি ভূখণ্ডকে ধর্ম দিয়ে দ্বিখণ্ডিত করাই ছিল এর লক্ষ্য; যার এক অংশ প্রধানত মুসলিম, অন্যটি হিন্দু।

এর বিরোধিতায় বাঙালিরা একতাবদ্ধ হয়ে জেগে ওঠে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রভুরা ধর্মের ভিত্তিতে আলাদা করতে চাইলেও, তারা বুঝতে পারে বাঙ্গালির সংস্কৃতি ও ভাষার বন্ধন তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। সেই সময়ে অখণ্ড বাংলার আহ্বানের প্রতীক হয়ে উঠেছিল ডিএল রায়ের একটি গান—'ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা'।

২০২৪-এও যখন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল ছাত্র-জনতা, তখন তার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অন্যতম প্রতিরোধ হয়ে উঠে একই গান। এবারও ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা, শোনো মহাজন, আওয়াজ উডায় সুর মেলান রাজপথে থাকা আন্দোলনকারীরা। 

সঙ্গীতপ্রিয় বাঙালি জাতি ভাষার দাবি থেকে শুরু করে গণঅভ্যুত্থান হয়ে স্বাধীনতা পর্যন্ত সব সংগ্রামেই সঙ্গীতকে ব্যবহার করেছে প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে। রাজপথের স্লোগান গানের ভেতর যুক্ত হয়ে অনুরণিত হয়েছে।

একাত্তর আমাদের অস্বিত্ব। মুক্তিযুদ্ধ কেবল একটি ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব অর্জনের লড়াই ছিল না; এটি ছিল একই সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির সংগ্রাম। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বন্দুক-কামান যেমন গর্জে উঠেছিল, তেমনি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল বাঙালির কণ্ঠ, কলম আর সুর। আর এই সুরের যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু ছিল 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র', যাকে বলা হতো মুক্তিযুদ্ধের 'দ্বিতীয় ফ্রন্ট'। 

২৫ মার্চ কালরাতের পর চট্টগ্রাম বেতারের কয়েকজন অকুতোভয় শব্দসৈনিক কালুরঘাট থেকে এই বেতার কেন্দ্রের সূচনা করেন। পরে পাকিস্তানি বিমান হামলার মুখে ট্রান্সমিটারটি ভারতের ত্রিপুরা হয়ে শেষ পর্যন্ত কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের একটি দোতলা বাড়িতে স্থাপিত হয়। কোনো সাউন্ডপ্রুফ স্টুডিও ছিল না, ছিল না আধুনিক যন্ত্রপাতি, ছিল না কোনো শব্দ প্রকৌশলীও। একটি মাত্র মাইক্রোফোন ঘিরে দাঁড়িয়ে সমর দাস, অজিত রায়, আপেল মাহমুদ, আব্দুল জব্বার, রথীন্দ্রনাথ রায়ের মতো শিল্পীরা দিবা-রাত্রি কাজ করে গেছেন। ক্লান্তিহীন এই শব্দসৈনিকদের সম্বল ছিল কেবল মনোবল আর বিজয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। শুধু তাই নয়, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচিত গানের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন সংকেত পাঠানো হতো—কখন শত্রুদের আক্রমণ করতে হবে বা কখন সরে যেতে হবে।

রণাঙ্গনে যখন গুলি আর বারুদের গন্ধ, তখন ইথার আর রেডিওতে ভেসে আসত গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ও আনোয়ার পারভেজের সুরে 'জয় বাংলা, বাংলার জয়'। গানটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, রাজপথের স্লোগান গানের সুরে মিশে মুক্তিযোদ্ধাদের ধমনীতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিত। গোবিন্দ হালদারের লেখা 'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি' কিংবা 'পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে' গানগুলো হয়ে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অঘোষিত শপথবাক্য। অনিশ্চিত যাত্রাপথে আপেল মাহমুদের কণ্ঠে 'তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে' কিংবা 'নোঙর তোল তোল সময়' শুনে বুক বাঁধতেন ঘরছাড়া তরুণরা।

গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা ও অংশুমান রায়ের সুরে 'শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি' গানটি যখন বাজত, তখন মনে হতো বঙ্গবন্ধু সশরীরে উপস্থিত থেকে সাত কোটি মানুষকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। গানটি বুঝিয়ে দিত, মুজিব মানেই বাংলাদেশ, মুজিব মানেই স্বাধীনতা।

মুক্তিযুদ্ধের এই সুরের আগুন কেবল দেশের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, ছড়িয়ে পড়েছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। ১ আগস্ট ১৯৭১, নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে পন্ডিত রবিশঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসনের উদ্যোগে আয়োজিত হয় ঐতিহাসিক 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ'। প্রায় ৪০ হাজার দর্শকের সামনে জর্জ হ্যারিসন গেয়ে শোনান 'বাংলাদেশ, বাংলাদেশ'। অন্যদিকে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি জোয়ান বায়েজ গেয়েছিলেন 'সং অব বাংলাদেশ', কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ লিখেছিলেন 'সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড', পরবর্তীতে শিল্পী মৌসুমী ভৌমিক এর বাংলা সংস্করণটাও করেছিলেন বেশ চমৎকারভাবে। শরণার্থী শিবিরগুলোর জরাজীর্ণ দশা আর মানবিক বিপর্যয় বিশ্ববিবেকের কাছে তুলে ধরতে এই গানগুলো রেখেছিল অসামান্য ভূমিকা।

একই সময়ে ওয়াহিদুল হক, সনজীদা খাতুন ও মুস্তফা মনোয়ারের নেতৃত্বে 'মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী সংস্থা'র কর্মীরা ট্রাকে ঘুরে ঘুরে ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোতে গান, নাটক ও পুতুল নাচ পরিবেশন করতেন। এক কোটি ঘরহারা মানুষের হাহাকারের মাঝে শাহ আব্দুল করিম কিংবা লোকমান হোসেন ফকিরের মতো চারণকবিদের গান জোগাত বেঁচে থাকার সাহস।

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। কিন্তু বিজয়ের আনন্দেই গানের ভূমিকা শেষ হয়ে যায়নি। স্বজন হারানো বেদনার সাক্ষী হয়ে খান আতাউর রহমান লিখলেন, 'হয়তো বা ইতিহাসে তোমাদের নাম লেখা রবে না'। গোবিন্দ হালদারের কথায় ও আপেল মাহমুদের সুরে ধ্বনিত হলো, 'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনল যারা'। আর নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা 'সব কটা জানালা খুলে দাও না' আজও আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই সব বীর শহীদদের কথা, যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে প্রাণ দিয়ে গেছেন।

একাত্তরের সেই রণাঙ্গনের পর কেটে গেছে পাঁচ দশকেরও বেশি সময়। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং পরবর্তীতে স্বৈরাচার পতনের এক দফার ডাক এল, তখন দেখা গেল—বাঙালির প্রতিবাদের হাতিয়ার বদলায়নি। রাজপথে স্লোগান আর গ্রাফিতির পাশাপাশি বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে 'গান'। পুরোনো দিনের কালজয়ী সুর থেকে শুরু করে জেন-জি প্রজন্মের র‌্যাপ—সবই একসূত্রে গেঁথেছিল বিপ্লবীদের।

জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে দেশের পরিস্থিতি যখন ক্রমশ উত্তাল, তখন হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে শূন্য ব্যান্ডের এক দশক আগের গান 'শোন মহাজন'। ২০১৪ সালে প্রকাশিত গানটি ২০২৪-এর বাস্তবতায় যেন নতুন জীবন পায়। দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে গানটির লাইনগুলো আন্দোলনকারীদের স্লোগান হয়ে ওঠে:

"আমার বিচার তুমি কর, তোমার বিচার করবে কে?
কবে তোমার দখল থেকে মুক্তি আমায় দেবে?"

শূন্য ব্যান্ডের সদস্যরাও কেবল গানেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না; আন্দোলনের সময় লাল রঙ দিয়ে প্রোফাইল ছবি বদলে সংহতি জানিয়েছেন, টরন্টোতে কনসার্ট করে বিশ্বমঞ্চে দেশের সংকট তুলে ধরেছেন।

একইভাবে ফিরে আসে মোহিনী চৌধুরীর লেখা ও কৃষ্ণচন্দ্র দে'র সুর করা কালজয়ী গান 'মুক্তির মন্দির সোপানতলে'। যখন মিছিলে লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছিল, তখন শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে গাওয়া হয়েছে— "কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে।"

রাজনৈতিক বা সামাজিক প্রতিবাদে শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ বা সায়ান সবসময়ই সোচ্চার। আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর লেখা তার 'ভয় বাংলায়' গানটি জুলাই আন্দোলনের সময় ফেসবুক ও ইউটিউবে পুনরায় ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও তার 'আমার সূর্য' গানে তিনি হারানো প্রাণদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। গানের কথায় উঠে আসে— "ভাগ্যিস তুমি তবু এসেছিলে তাই/ আমার রক্তে তোমার সূর্য প্রতিদিন জ্বলে যাই।"

অন্যদিকে, বেকারত্ব ও কোটা সংস্কারের দাবির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল গগন সাকিবের গান। তার 'একটা চাকরি' গানে বেকার যুবকের আর্তনাদ ও স্বজনপ্রীতির চিত্র ফুটে উঠেছে নির্মম সত্য হয়ে:

"কর্তা মামা হলে চাকরিটা যেতো মিলে,
ইচ্ছে হয় সার্টিফিকেট আমি খাই গিলে।"

গগন সাকিব গানটি কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদকে উৎসর্গ করেছিলেন।

আন্দোলনের মাঝেই ইউকেলেলে হাতে পারশা মাহজাবীনের গাওয়া 'চলো ভুলে যাই' গানটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তোলে। মাত্র ১০ মিনিটে লেখা এই গানে তিনি সব বিভেদ ভুলে সাহসীদের স্মরণ করার আহ্বান জানান।

কারাগার থেকে রাজপথে নেমে আসে ব্যান্ড 'কাকতালের' গান। আন্দোলনের সময় ব্যান্ড 'কাকতাল'-এর 'রক্ত গরম মাথা ঠান্ডা' গানটি তরুণদের ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। ২০১৮ সালে কারাগারে থাকাকালীন সৃজনশীল চর্চার অংশ হিসেবে এই ব্যান্ডের জন্ম। তাদের গানে উঠে আসে শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ:

"দেশটা কারো বাপের না/ সরকার পরিবারের না/ দেশের মালিক সব জনগণ –তার মধ্যে তুমি।"

রাষ্ট্রের মালিকানা কার—এই প্রশ্নটি বাউল সুরেও প্রতিধ্বনিত হয়েছে। বাউল শিল্পী ইথুন বাবু ও মৌসুমী চৌধুরীর গাওয়া 'দেশটা তোমার বাপের নাকি' গানটির সোজাসাপ্টা প্রশ্ন সাবেক সরকারের শাসন ব্যবস্থাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল।

জুলাই অভ্যুত্থানের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো বাংলা র‍্যাপ বা হিপহপের অভাবনীয় উত্থান। একসময় যা কেবল নির্দিষ্ট শ্রেণির শ্রোতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, এই আন্দোলনে তা হয়ে ওঠে গণমানুষের কণ্ঠস্বর। র‍্যাপের সরাসরি ও তীক্ষ্ণ ভাষা ক্ষোভ প্রকাশের প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।

র‍্যাপার হান্নান হোসেন শিমুলের 'আওয়াজ উডা' গানটি বিপ্লবের অন্যতম 'অ্যান্থেম' হয়ে ওঠে। গানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের অংশবিশেষ ব্যবহার করে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানান। 

"আবু সাঈদরে গুল্লি করল অর্ডার দিল কেডা?
এবার রাস্তায় লাখো সাঈদ কইলজা থাকলে ঠেকগা!"

এই গানের জেরে হান্নানকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়, কিন্তু তার গান আন্দোলনকারীদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি মুক্তি পান।
সেজানের 'কথা ক' গানটিতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে ২০২৪-এর তুলনা করা হয়। গানে তিনি বলেন: "৫২'র তে ২৪-এ তফাত কই রে? কথা ক... আমার ভাই বইন মরে রাস্তায় তোর চেষ্টা কই রে? কথা ক।" গানে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, লাল-সবুজের পতাকার পুরোটা আজ লালে লাল হয়ে গেছে।
সরকার আন্দোলনকারীদের 'রাজাকার' বলায় ক্ষুব্ধ হয়ে '২৪-এর গেরিলা' ব্যান্ড তাদের গানে জবাব দেয়:

"আমি কে? তুমি কে? রাজাকার, রাজাকার
কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার!"

এছাড়া ক্রাউন ইঞ্জিনের 'দাম দে', এমসি মাগজ ও জি.কে. কিবরিয়ার 'স্লোগান' এবং গোল্ড কিউবের 'দেশ সংস্কার' গানগুলো আন্দোলনের সময় তরুণদের উজ্জীবিত করেছে। র‍্যাপাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, কখনো আত্মগোপনে থেকে গানগুলো প্রকাশ করেছেন। লুনাকিক্স বীর ও রিদমস্টারের 'দেশ কার?' গানটিতে রাষ্ট্রের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যা হাজারো তরুণের মনের কথা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

তাহরির স্কয়ার থেকে শাহবাগ

বাঙালির এই যে গানের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদের ঐতিহ্য, তা আসলে বিশ্বজনীন। প্রাচীনকাল থেকেই গান নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংহতি প্রকাশের মাধ্যম। গত পঞ্চাশ বছরে বব ডিলান থেকে শুরু করে কেন্ড্রিক লামার—বিশ্বের বাঘা বাঘা শিল্পীরা গানের সুরে যুদ্ধ, শান্তি, প্রতিবাদ আর সাম্যের কথা বলেছেন।

ষাটের দশকে যুক্তরাষ্ট্রে সিভিল রাইটস মুভমেন্ট বা কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বব ডিলানের 'ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড' হয়ে উঠেছিল শান্তির 'অ্যান্থেম'। স্যাম কুকের 'আ চেঞ্জ ইজ গনা কাম' গানে উঠে এসেছিল পরিবর্তনের অদম্য প্রত্যাশা। 

ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় বাফেলো স্প্রিংফিল্ড বা পিট সিগারের গানগুলো তরুণদের মনে যুদ্ধের বিরুদ্ধে ঘৃণা জাগিয়েছিল। ১৯৬৯ সালে ক্রিডেন্স ক্লিয়ারওয়াটার রিভাইভালের 'ফর্চুনেট সন' হয়ে উঠেছিল এক তীব্র চপেটাঘাত। গানে উঠে আসে, কীভাবে ক্ষমতাবানদের সন্তানেরা যুদ্ধ এড়িয়ে যায়, আর সাধারণ ঘরের ছেলেদের বাধ্য করা হয় যুদ্ধে যেতে। 

একই বছর উডস্টক ফেস্টিভ্যালে গিটার জাদুকর জিমি হ্যান্ডরিক্স আমেরিকার জাতীয় সংগীত 'দ্য স্টার স্প্যাঙ্গল্ড ব্যানার' বাজিয়েছিলেন এক অদ্ভুত, কর্কশ ও বিদ্রূপাত্মক সুরে। গিটারের সেই আর্তনাদ যেন ভিয়েতনামে মারা যাওয়া হাজারো মানুষের চিৎকার হয়ে বেজেছিল। আর মারভিন গে যখন গেয়েছিলেন 'হোয়াট'স গোয়িং অন', তখন তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন—যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়, কেবল ভালোবাসাই পারে ঘৃণা জয় করতে।

ল্যাটিন আমেরিকায় ভিক্টর জারার মতো শিল্পীরা গিটার হাতে দাঁড়িয়েছিলেন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে—যার মূল্য হিসেবে তাকে জীবন দিতে হয়েছিল। আশির দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে হিউ মাসেকেলার 'সোয়েটো ব্লুজ' কিংবা মিরিয়াম মাকেবার গান হয়ে উঠেছিল নিপীড়িত মানুষের সাহসের ভাষা।

আর আরব বসন্তের সময় মিশরের তাহরির স্কয়ারে রামি এসাম যখন 'ইরহাল' (সরে যাও) গেয়ে শাসকের বিরুদ্ধে জনতার কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন, ২০২৪ সালে শাহবাগসহ দেশের নানা প্রান্তে গিটার হাতে তরুণদের সরকারের দমন–পীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়ার দৃশ্য যেন তারই পুনরাবৃত্তি।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনে কেন্ড্রিক লামারের 'অলরাইট' কিংবা বিয়ন্সের 'ফর্মেশন' আবারও দেখিয়ে দিয়েছে—সময় বদলালেও, প্রযুক্তি এগোলেও, অন্যায়ের বিরুদ্ধে গানের শক্তি ফুরোয় না।

সংগীত কেবল বিনোদনের অনুষঙ্গ নয়; এটি নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক প্রভাবশালী ভাষা। গবেষক ড. অসিত গোস্বামী ও তার সহগবেষকদের মতে, হিপহপ বা র‍্যাপ বিশ্বজুড়েই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। ছন্দের ভেতর দিয়ে গল্প বলার ক্ষমতাই এই সংগীতের মূল শক্তি। ২০২৪-এর জুলাইয়ে বাংলা র‍্যাপের জনপ্রিয়তার নেপথ্যেও ছিল এই শক্তি। হান্নান বা সেজানের গানে উঠে আসা কাঠামোগত বৈষম্যের কথা হিপহপের সেই বৈশ্বিক প্রতিবাদেরই অংশ। 

গান তৈরি করে 'কালেক্টিভ মেমোরি'—সামষ্টিক স্মৃতি। এই স্মৃতিই মানুষকে একত্র করে, ভয়কে অতিক্রম করার সাহস জোগায়। জ্যাজ কিংবদন্তি উইনটন মার্সালিসের কথায়, 'সংগীত মানুষকে নিরাময় করে, কারণ সংগীত হলো স্পন্দন—আর সঠিক স্পন্দনই পারে সমাজকে সুস্থ করতে।'

১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ২০২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থান—সবই মনে করিয়ে দেয়, গান কখনোই কেবল বিনোদন ছিল না। এটি এমন এক হাতিয়ার, যা ক্ষমতার ভিত কাঁপিয়ে দেয়—যা বুলেটের আগেই মানুষের হৃদয়ে পৌঁছায়। 

Related Topics

টপ নিউজ

গান / স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র / স্বৈরাচার / বিপ্লব

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • সালমান এফ রহমান (বামে) ও আনিসুল হক।  ছবি: সংগৃহীত
    ট্রাইব্যুনালে নিজেদের কল রেকর্ড শুনে হাসলেন সালমান-আনিসুল
  • মোতালেব শিকদার। ছবি: সংগৃহীত
    এনসিপির খুলনা বিভাগীয় প্রধান গুলিবিদ্ধ
  • নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ। ফাইল ছবি: ইউএনবি
    জানুয়ারিতে মহাসমাবেশের ঘোষণা নোয়াব সভাপতির
  • ছবি: টিবিএস
    খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধ: ‘মাদক’ ও ‘নারীঘটিত’ বিরোধের জেরে হামলার ধারণা পুলিশের
  • ছবি: সংগৃহীত
    লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ; প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে যা জানাল পুলিশ
  • ছবি: সংগৃহীত
    ‘প্রথম আলো–ডেইলি স্টারে হামলায় পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, ২-৪ জন মারা যেতেন’

Related News

  • যে কারণে গান গাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
  • ১৯৭১ সালে জনগণ তাদের দেখেছে: জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে তারেক
  • গান ছেড়ে ভিক্ষা করার ‘হুকুম’, আতঙ্কে রোজগার বন্ধ অন্ধ হেলালের পরিবারের
  • পেপারব্যাক বিপ্লব ও প্রচ্ছদশিল্পে কাজী আনোয়ার হোসেন: রঙে আঁকা এক যুগ
  • একজন গায়কের মৃত্যু, ৩৮ হাজার গান ও একটি প্রশ্ন—রেখে যাওয়া গানগুলো এখন কার?

Most Read

1
সালমান এফ রহমান (বামে) ও আনিসুল হক।  ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

ট্রাইব্যুনালে নিজেদের কল রেকর্ড শুনে হাসলেন সালমান-আনিসুল

2
মোতালেব শিকদার। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

এনসিপির খুলনা বিভাগীয় প্রধান গুলিবিদ্ধ

3
নোয়াব সভাপতি এ. কে. আজাদ। ফাইল ছবি: ইউএনবি
বাংলাদেশ

জানুয়ারিতে মহাসমাবেশের ঘোষণা নোয়াব সভাপতির

4
ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধ: ‘মাদক’ ও ‘নারীঘটিত’ বিরোধের জেরে হামলার ধারণা পুলিশের

5
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

লুটের টাকায় টিভি-ফ্রিজ; প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে যা জানাল পুলিশ

6
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

‘প্রথম আলো–ডেইলি স্টারে হামলায় পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, ২-৪ জন মারা যেতেন’

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net