২০২২ সালে ফোর্বস তালিকায় ভারতের সেরা ১০ বিলিয়নিয়ার

পুঁজিবাজারে আইপিও- ভুক্তিতে সুবর্ণ সময় পার করছে ভারত। পুঁজিবাজারে নতুন উদ্যোগ যুক্ত হয়ে বেড়েছে ভারতীয় অতি-ধনীদের সম্পদ। গেল বছর প্রায় ৬০টি কোম্পানি বাজার থেকে ১ হাজার ৫৬০ কোটি ডলারের তহবিল সংগ্রহ করে।
এতে বিলিয়নিয়ার (শত কোটি কোটি ডলার বা তার বেশি সম্পদের অধিকারীদের) সংখ্যাও বেড়েছে দেশটিতে। গেল বছরের ১৪০ থেকে তাদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৬ জনে। এসময়ে তাদের সম্মিলিত সম্পদ ২৬ শতাংশ বেড়ে ৭৫ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বাজার অর্থনীতি সম্পর্কে এসব তথ্য জানিয়েছে বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন। ২০২২ সালের ফোর্বসের বিলিয়নিয়ার তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন মুকেশ আম্বানি। তার রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ রয়েছে ভারতের শীর্ষ কোম্পানি হিসেবে। আম্বানি এবছরও ফোর্বস বিলিয়নিয়ার তালিকায় এশিয়া সেরা ধনীর স্থান ধরে রেখেছেন। আর পুরো বিশ্বে তিনি হলেন ১০ম ধনী। তার মোট সম্পদ- ৯০.৭ বিলিয়ন ডলার।
আম্বানির পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন অবকাঠামো ও নিত্যপণ্য ব্যবসার টাইকুন গৌতম আদানি। তার সম্পদ প্রায় ৪ হাজার কোটি ডলারে বেড়েছে, আর এশিয়াতেও তিনি দ্বিতীয় সেরা ধনীর আসন দখল করেছেন।
ভারতের শীর্ষ এ দুই ধনাঢ্য ব্যবসায়ী বর্তমানে নবায়নযোগ্য ও সবুজ জ্বালানিতে বিনিয়োগের বৃহৎ উদ্যোগ নিয়ে সামনে আসছেন। তারা দেশটির ভবিষ্যত জ্বালানি খাতে নেতৃত্ব নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। আগামী এক দশক সামনে রেখে দিচ্ছেন মাল্টি-বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা।
ভারতের প্রযুক্তি খাতও তরতর করে বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে এখাত আয় করেছে ২০ হাজার কোটি ডলার। ফলে শিব নাদারের মতো আইটি উদ্যোক্তার সম্পদ ২২ শতাংশ বেড়েছে। তিনি পরিণত হয়েছে ভারতের তৃতীয় সেরা ধনীতে।
মহামারি যাদের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে, তেমন আরেক উদ্যোক্তা হলেন ভারতের করোনার ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সেরাম ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইরাস এস. পুনেওয়ালা। দেশের সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন উৎপাদক হওয়ায় তার সংস্থার রাজস্ব ও আয় দুইই পায় রেকর্ড প্রবৃদ্ধি। উচ্চ মুনাফার রথে চড়ে পুনেওয়ালার সম্পদ দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৩০ কোটি ডলারে। ভারতীয় বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে তিনি এখন চতুর্থ স্থানে।
ইস্পাতের দরস্ফীতিতে সেরা ১০ ভারতীয় ধনকুবেরের কাতারে এবছর আরো উঠে এসেছে সাবিত্রী জিনদাল। বিলিয়নিয়ারদের বৈশ্বিক তালিকায় যে ১৩ জন নারী রয়েছেন, তাদের অন্যতম হলেন ভারতের এই ব্যবসায়ী।
এক নজরে ২০২২ সালে ফোর্বসের তালিকায় শীর্ষ ১০ ভারতীয় বিলিয়নিয়ার: (চলতি বছরের গেল ১১ মার্চ নাগাদ করা সম্পদের হিসাব অনুসারে)
১. মুকেশ আম্বানি
মোট সম্পদ: ৯০.৭ বিলিয়ন ডলার
সম্পদ উৎস: বহুবিধ খাত
বাসস্থান: মুম্বাই, ভারত
তেল,গ্যাস ও পেট্রোকেমিক্যালের ব্যবসা থেকে নিজের প্রাথমিক ঐশ্বর্য অর্জন করেছেন মুকেশ। এখন তিনি জীবাশ্ম জ্বালানির এ খাত থেকে বেরিয়ে সবুজ জ্বালানি খাতে আগামী ১৫ বছরে ৮ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের এক সুবিশাল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছে তার বাবা প্রয়াত শিল্পপতি ধীরুভাই আম্বানির নামে একটি মহাকায় শিল্প কমপ্লেক্স স্থাপনের পরিকল্পনা। গুজরাটের জামনগরে রিলায়েন্সের জ্বালানি শোধনাগারের পাশেই নির্মিতব্য এ কমপ্লেক্সে থাকবে সুবৃহৎ চারটি গিগাফ্যাক্টরি।
২. গৌতম আদানি
মোট সম্পদ: ৯০ বিলিয়ন
সম্পদ উৎস: অবকাঠামো
বাসস্থান: আহমেদাবাদ, ভারত
টানা দ্বিতীয় বছরের মতো বেড়েছে আদানির বিত্ত-বৈভব। আর পেছনে মূল অবদান রেখেছে তার সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদক কোম্পানি- আদানি গ্রিন এনার্জির শেয়ার মূল্যবৃদ্ধি। অবকাঠামো নির্মাণ খাতের এ টাইকুনও এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও শক্তি উৎপাদনে বিনিয়োগে কোমর বেঁধে নেমেছেন। ২০৩০ সাল নাগাদ এখাতে ৭ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।
৩. শিব নাদার
মোট সম্পদ: ২৮.৭ বিলিয়ন
সম্পদ উৎস: সফটওয়্যার পরিষেবা
বাসস্থান: দিল্লী, ভারত
শিব নাদার ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের মহীরুহ কোম্পানি- এইচসিএল টেকনোলজিসের সহপ্রতিষ্ঠাতা। সফটওয়্যার পরিষেবা বিক্রি করে সংস্থাটির এখন বার্ষিক আয় ১১.২ বিলিয়ন ডলার। তিনি এখন কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান এমিরেটাস ও কৌশলগত উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করছেন। কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যান হলেন তার কন্যা রোশনি নাদার। বিশ্বের ৫২টি দেশে এইচসিএল- এর হয়ে কাজ করছেন ১ লাখ ৯৮ হাজারের বেশি কর্মী।
৪. সাইরাস পুনেওয়ালা
মোট সম্পদ: ২৪.৩ বিলিয়ন
সম্পদ উৎস: ভ্যাকসিন
বাসস্থান: পুনে, ভারত
ভারতে মোট ১৮০ কোটি ডোজ কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর অধিকাংশই সরবরাহ করেছে সাইরাস পুনেওয়ালার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। সেরামের সবচেয়ে কাটতির পণ্য অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির আবিষ্কৃত করোনার টিকা। এটি লাইসেন্স নিয়ে কোভিশিল্ড নামে উৎপাদন ও বাজারজাত করছে সেরাম। মহামারিকালে জীবনদায়ী টিকা উৎপাদনে অনবদ্য অবদান রাখায় ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ পদক দিয়েছে, যা দেশটির তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরষ্কার।
৫. রাধাকিশান দামানি
মোট সম্পদ: ২০ বিলিয়ন
সম্পদ উৎস: খুচরা ব্যবসা ও বিনিয়োগ
বাসস্থান: মুম্বাই, ভারত
পুঁজিবাজারের অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী দামানি দুই দশক আগে তার 'ওয়ান স্টোর' মুদিবিপণী নিয়ে খুচরা পণ্য বিক্রির জগতে আসেন। এরপর উদ্যোগটিকে রূপ দেন সুপারমার্কেট চেইন- এভিনিউ সুপারমার্টে। দেশজুড়ে এখন তাদের বিপণীকেন্দ্রের সংখ্যা ২৭১টি।
৬. লক্ষ্মী মিত্তাল
মোট সম্পদ: ১৭.৯ বিলিয়ন
সম্পদ উৎস: ইস্পাত
বাসস্থান: লন্ডন, যুক্তরাজ্য
৭৬.৬ বিলিয়ন ডলারের ইস্পাত প্রস্তুতকারক সংস্থা আরসেলোর-মিত্তালের চেয়ারম্যান হলেন লক্ষ্মী মিত্তাল। গেল বছর বা ২০২১ সালে তার কোম্পানির নিট মুনাফা ছিল ১৫ বিলিয়ন ডলার।
৭. সাবিত্রী জিনদাল
মোট সম্পদ: ১৭.৭ বিলিয়ন
সম্পদ উৎস: ইস্পাত
বাসস্থান: হিসার, ভারত
ও.পি.জিন্দাল গ্রুপের এমিরেটস চেয়ারপার্সন হলেন সাবিত্রী জিনদাল। ইস্পাত ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভারতের অন্যতম বড় এ শিল্পগোষ্ঠীর দুটি কোম্পানি- জেএসডব্লিউ স্টিল ও জেএসডব্লিউ এনার্জির উচ্চ শেয়ার মূল্যায়নে লাভবান হন সাবিত্রী। এরমধ্যে শেষোক্ত কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য গত বছর থেকে প্রায় চারগুণ বেড়েছে।
৮. কুমার বিড়লা
মোট সম্পদ: ১৬.৫ বিলিয়ন
সম্পদ উৎস: কাঁচামাল ও নিত্যপণ্য
বাসস্থান: মুম্বাই, ভারত
প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি ডলার মূল্যায়নের আদিত্য বিড়লা গ্রুপের চেয়ারম্যান হলেন কুমার বিড়লা।
৯. দিলিপ সাংভি
মোট সম্পদ: ১৫.৬ বিলিয়ন
সম্পদ উৎস: ওষুধ
বাসস্থান: মুম্বাই, ভারত
পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানি সান ফার্মাসিউটিক্যালস পৃথিবীর চতুর্থ বৃহৎ জেনেরিক বা লাইসেন্স-ভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুতকারক। সানের মোট বার্ষিক আয় ৪৫০ কোটি ডলার, যার দুই-তৃতীয়াংশ হয় ভারতের বাইরের আন্তর্জাতিক বাজার থেকে।
১০. উদয় কোটাক
মোট সম্পদ: ১৪.৩ বিলিয়ন
সম্পদ উৎস: ব্যাংকিং
বাসস্থান: মুম্বাই, ভারত
নিজ যোগ্যতায় ভারতের সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যাংকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। নিজ অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানকে পরিণত করেছেন ব্যবসা সফল কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংকে।
- সূত্র: ফোর্বস