নিরাপত্তা পর্যালোচনা শেষে কাশ্মীরের অর্ধেকেরও বেশি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করে দিল ভারত

ভারতের কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে অঞ্চলটির ৮৭টি পর্যটনস্থলের মধ্যে ৪৮টি মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এক সরকারি আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
গত সপ্তাহে কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শী ও কর্মকর্তাদের বরাতে জানানো হয়েছে, হামলাকারীরা পুরুষদের আলাদা করে তাদের নাম জিজ্ঞাসা করে এবং হিন্দু পরিচয় পাওয়া ব্যক্তিদের খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে।
ভারত জানিয়েছে, তিন হামলাকারীর মধ্যে দুই জন পাকিস্তানি নাগরিক, যারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরে চলমান সশস্ত্র বিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত। তবে পাকিস্তান এ ঘটনায় সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানকে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ও উসকানির অভিযোগে দায়ী করে আসছে। অন্যদিকে ইসলামাবাদ বলছে, তারা কেবল কাশ্মীরিদের অধিকার রক্ষার দাবিতে নৈতিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
হামলার পর দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। ভারতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জোরালো হয়েছে।

দুই দেশ এরই মধ্যে একাধিক পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারত সিন্ধু নদী চুক্তি (পানি বণ্টন চুক্তি) স্থগিত করেছে, পাকিস্তান ভারতের বিমানগুলোর জন্য আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে।
কাশ্মীর অঞ্চলের ৪৮টি পর্যটনস্থল বন্ধের পাশাপাশি বাকি ৩৯টি স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে ভারত সরকারের নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কতদিন এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে তা জানানো হয়নি। সরকারি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহিংসতা কমে আসায় উচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, মনোরম উপত্যকা ও মোগল আমলের বাগানসমৃদ্ধ হিমালয়ের কোলে অবস্থিত কাশ্মীর ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হচ্ছিল।
কিন্তু পেহেলগামে হামলার পর আতঙ্কিত পর্যটকরা গ্রীষ্ম-মৌসুমের শুরুতেই এই এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন।
এছাড়া, ভারত ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীর সীমান্তে ৭৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গোলাগুলি বেড়েছে।
মঙ্গলবার টানা পঞ্চম দিনের মতো ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একাধিক চৌকি থেকে 'উসকানিমূলক' গুলিবর্ষণের জবাব দিয়েছে তারা।
তবে কোনো হতাহতের খবর জানানো হয়নি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ সোমবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ভারতের একটি সামরিক অভিযান আসন্ন এবং সে জন্য পাকিস্তান সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে।