খাগড়াছড়িতে বিজিবির সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে নিহত ৫

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর সঙ্গে বিজিবির সংঘর্ষে এক বিজিবি সদস্যসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত তিনজন।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার আলুটিলা বটতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- ৪০ বিজিবির সিপাহী শাওন, আলুটিলা বটতলী গ্রামের সাহাব মিয়া (৭০), সাহাব মিয়ার ছেলে আহাম্মদ আলী ও আকবর আলী এবং মো. মফিজ মিয়া।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে বৈদ্যুতিক তার টানার জন্য কয়েকটি গাছ কাটা হয়। এ সময় একটি ট্রাক্টরে করে সাহাব মিয়া ও তার ছেলে আহাম্মদ আলী কয়েক টুকরা গাছ গাজিনগর বাজারের একটি কাঠের মিলে নিয়ে যাওয়ার পথে বাঁধা দেয় বিজিবি। এ সময় বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন সাহাব মিয়া ও তার ছেলে আলী আকবর। এক পর্যায়ে তারাসহ স্থানীয়রা বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় বিজিবি সদস্যরা গুলি করলে ঘটনাস্থলেই মারা যান সাহাব মিয়া ও তার ছেলে আকবর আলী।
স্থানীয়রা আরও জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিজিবি সদস্য শাওন, স্থানীয় আহাম্মদ আলী, মফিজ মিয়া এবং মো. হানিফ মিয়াকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা যান বিজিবি সদস্য শাওন ও আহাম্মদ আলী। অন্যদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান মো. মফিজ মিয়া।

এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দু'জনকে আটক করেছে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ। ওসি শামছুদ্দিন ভুঁইয়া জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে আটক করা হয়েছে।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খায়রুল আলম বলেন, হাসপাতালে এখন পর্যন্ত দুইটি লাশ এসেছে। তাদের শরীরেও গুলির চিহ্ন রয়েছে।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মাটিরাঙ্গা সার্কেল) খোরশেদ আলম বলেন, সংঘর্ষের কারণ এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তদন্তের পর সঠিক কারণ জানানো যাবে। আহত চারজনের মধ্যে দুই জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করবে পুলিশ।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
বেলা তিনটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস ও গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার। তাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার আবদুল আজিজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম সারাহ উদ্দিন, মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিভীষণ কান্তি দাশ, মাটিরাঙ্গা পৌর মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম হুমায়ুন মোরশেদ খান প্রমুখ। এ সময় জেলা প্রশাসক স্থানীয়দের সঙ্গেও কথা বলেন।
দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে জানিয়ে সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহরিয়ার জামান সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। বিষয়টি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।'
স্থানীয়রা বিজিবি ক্যাম্প প্রত্যাহারের দাবি জানালে তিনি বলেন, 'গুটি কয়েক খারাপ লোকের জন্য একটি বাহিনীকে দোষারোপ করা যাবে না।'