৪ মাসে ৫ সংঘর্ষ: ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের রণক্ষেত্র সায়েন্স ল্যাব

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়। ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এদিনের সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ৩০ জন।
বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলা এ সংঘর্ষে দুই পক্ষের শিক্ষার্থীরা একে অপরের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল ছোড়ে। পুলিশের কয়েকজন সদস্যও এতে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
চলতি বছরে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে পঞ্চম সংঘর্ষ এটি। এর বাইরে সিটি কলেজ শিক্ষার্থীরা একবার আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। সব মিলিয়ে গত চার মাসে এলাকায় বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ছয়বার।
এদিকে, বারবার এমন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও ঠিক কারণে তা ঘটছে—সেটি স্পষ্ট নয়। এমনকি শিক্ষার্থীরাও অনেক সময় জানেন না সংঘর্ষের প্রকৃত কারণ। অনেকে স্বীকার করেছেন, তারা জানেন না বারবার এমন সংঘর্ষ কেন হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১১টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজে হামলা চালায় ও কলেজের সাইনবোর্ড খুলে ফেলে। এরপর সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোটা নিয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়, শুরু হয় ইটপাটকেল নিক্ষেপ।
একপর্যায়ে সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়লে দুপুর ১টার দিকে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা একটি বাস ভাঙচুর করে। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে ফের দুপুর ২টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে।
বিকেল ৩টা ১৫ মিনিট নাগাদ সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোবারক হোসেন শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হয়।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "আজ সকাল ১১টার দিকে ছাত্র পরিচয়ে কিছু দুষ্কৃতকারী সিটি কলেজে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। কলেজের সাইনবোর্ড খুলে ফেলা হয়। অথচ ঘটনাস্থলে ৫০-৬০ জন পুলিশ সদস্য থাকলেও তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেননি। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিলে এত বড় ক্ষতি হতো না।"
এ ঘটনায় ডিএমপির (ঢাকা মহানগর পুলিশ) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, "সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটপাটকেলে আমাদের ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।"
এদিকে, সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি, সংঘর্ষে তাদের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন এবং অনেককে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। অন্যদিকে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাদেরও অন্তত ৫-৬ জন আহত হয়েছেন।
সংঘর্ষের বিষয়ে পুলিশ জানায়, সোমবার সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজের পোশাক পরা এক শিক্ষার্থীকে কয়েকজন মারধর করে, এতে সে গুরুতর আহত হয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, হামলাকারীরা কোনো কলেজের পোশাক পরা ছিল না। তবে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজকেই দায়ী করে। এ অভিযোগে মঙ্গলবার বেলা ১১টার পর তারা সিটি কলেজে হামলা চালায়, যার জেরে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সংঘর্ষ চলে।
চার মাসে পাঁচ সংঘর্ষ
ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বারবার সংঘর্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কলেজ কর্তৃপক্ষও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দুই কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তত পাঁচবার বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছে শতাধিক শিক্ষার্থী।
এসব ঘটনার পেছনে সাধারণত তুচ্ছ বিষয় কিংবা আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা কাজ করে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একবারের সংঘর্ষে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরাও জড়িয়েছিলেন।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর ৯ ফেব্রুয়ারি সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ১৮ জন। ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জেরে ফের সংঘর্ষ হয়। আর ১৮ মার্চের সংঘর্ষে আহত হয় কমপক্ষে ৫০ জন শিক্ষার্থী ও পথচারী।
সর্বশেষ সংঘর্ষের ঘটনার পর উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, "কেন এই সংঘর্ষ হয়, কেউ জানে না—শুধু আল্লাহ জানেন। এভাবে তো চলতে পারে না। স্থায়ী সমাধান দরকার। দুই কলেজ কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বসে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজতে হবে।"