যা করার এখনই করতে হবে: বরিস

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে এখনো বিভিন্ন দেশ যথেষ্ট প্রতিশ্রুতিশীল নয়। ফলে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শুরু হওয়া জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৬ ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি দেখছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
তার কাছে এ সম্মেলন সফল হওয়ার সম্ভাবনা 'দশের মধ্যে ছয়' ভাগ।
"কোন সন্দেহ নেই আমরা এখনো একে অতিক্রম করতে পারিনি। এখন পর্যন্ত যেসব অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, তার কোনটিই ক্রমাগত বাড়তে থাকা বৈশ্বিক উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়নি"।
পাশাপাশি বিশ্ব নেতাদের সতর্ক করে বরিস জনসন বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ব্যর্থতার ক্ষেত্রে কোন অজুহাত খাটবে না।
ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত বিশ্বের ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট জি-২০ সম্মেলনের সমাপনীতে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন বরিস। তিনি আরও উল্লেখ করেন, "গত কয়েক দিনে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে- তবে এখনও অনেকটা পথই বাকি"।
এবারের সম্মেলনে প্রধান দুই এজেন্ডা হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা মহামারি ইস্যু দুটিই গুরুত্ব পায়।
গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৬ এর প্রাক্কালে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে করণীয় সম্পর্কে রোমে জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।
রোববার (৩১ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া দুই সপ্তাহের কপ-২৬ শীর্ষ সম্মেলন আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে; ২০৩০ সালের মধ্যে কীভাবে কার্বন নির্গমন কমানো যায়, তাই নিয়ে এ সম্মেলনে যোগ দেওয়া প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা করবেন।
গত বছরই এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল কিন্তু মহামারির কারণে এক বছর পিছিয়ে যায়।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন অর্ধেকে নামিয়ে আনতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
জি-২০ এর সদস্য ১৯টি দেশের এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের দ্বারা গৃহীত 'অর্থপূর্ণ এবং কার্যকর' পদক্ষেপের মাধ্যমে বৈশ্বিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন বরিস।
তিনি বলেন, "আমাদের বিলম্বের জন্য কার্যত কোন অজুহাত হতে পারেনা"।
"আমরা শুধু এই বিপর্যয়টি চিহ্নিতই করিনি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে তাপপ্রবাহ থেকে খরা, দাবানল এবং হারিকেনের মতো যেসব দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে ইতিমধ্যেই তার প্রভাব আমরা দেখতে পেয়েছি"।
এদিকে ২০৫০ সালের মধ্যে 'নেট জিরো' কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্য ঘোষণা করেছে সম্মেলনে অংশ নেয়া ১২টি দেশ। তবে চীন এবং সৌদি আরব একই লক্ষ্যে পোঁছাতে ২০৬০ সালের সময়সীমা চেয়েছে।
বৈশ্বিক নির্গমনের হার কমাতে দেশগুলোর কাছ থেকে আরও শক্তিশালী প্রতিশ্রুতির আশা করছেন বরিস।
বিশেষজ্ঞদেরও মতে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিটি দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যেই অর্থপূর্ণ অঙ্গীকার করতে হবে।
কপ-২৬ এর আয়োজক দেশ হিসেবে অংশগ্রহণকারী ২০০টি দেশের কাছ থেকে এসব প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে উৎসাহ দিতে ও আলোচনার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দেশগুলো তাদের করণীয় সম্পর্কে যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না বলে অভিমত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর।
"আমরা যদি কপ-২৬ সম্মেলন ব্যর্থ হওয়া ঠেকাতে চাই, তবে অবশ্যই এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে; আর আমাদের অনুধাবন করতে হবে, এবারের গ্লাসগো সম্মেলন সফল না হলে এতদিনের সমস্ত উদ্যোগই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে"।
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে নেতারা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি্র হার দেড় থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনতে চুক্তিবদ্ধ হন। জনসনের মতে, সেই চুক্তি এখন এক টুকরো কাগজ ছাড়া আর কিছুই নয়।
শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ইতিমধ্যেই ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শুধুমাত্র কঠোরভাবে কার্বন নির্গমন হ্রাসই এই বৃদ্ধিকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে বাধা দেবে।
এবারের কপ-২৬ সম্মেলনে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নিচ্ছেন।
বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল, গাছ কাটা কমানো এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে যত বেশি সম্ভব মানুষকে রক্ষার বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে এবারের সম্মেলনে।
দরিদ্র দেশগুলো এই মুহূর্তে জলবায়ু বিপর্যয়ের ফলে সৃষ্ট সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অনুন্নত এসব দেশকে গ্রিন টেকনোলজি বা পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি করেছিল ধনী দেশগুলো। কিন্তু এ জন্য যে অর্থ সহায়তা প্রয়োজন, ধনী দেশগুলো তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
- সূত্র- বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান