প্রাইজমানির টাকা কীভাবে খরচ করেন অলিম্পিক পদকজয়ীরা?

রোববার পর্দা নেমেছে টোকিও অলিম্পিক ২০২০-এর। করোনাভাইরাস মহামারিকালে অলিম্পিক আয়োজন নিয়ে চলেছে নানা সমালোচনা-বিতর্ক। কিন্তু এর মধ্য দিয়েও ৩৩৯ সেট পদক জয় করে বাড়ি ফিরেছেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা অ্যাথলেটরা।
দেশে ফেরার পর তাদের কারও কারও জন্য বেশ বড় অংকের প্রাইজমানি অপেক্ষা করছে।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি এবং প্রতিটি দেশের জাতীয় অলিম্পিক কমিটি তাদের খেলোয়াড়দের জন্য আলাদা কোনো পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখে না। কিন্তু দেশগুলোর বিভিন্ন কোম্পানি ঠিকই বিজয়ী খেলোয়াড়দের টাকা বা অন্যান্য বস্তুর মাধ্যমে পুরস্কৃত করে।
অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী যেসব দেশ সচরাচর পদক জিততে পারে না বা খুব কমই জিতে, সাধারণত তারাই তাদের খেলোয়াড়দের জন্য আকর্ষণীয় সব সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। আর সেসব যে শুধু ক্ষণিকের জন্য, তা নয়। আজীবন সাবওয়েতে বিনা ভাড়ায় ভ্রমণ, জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টগুলোতে বিনে পয়সায় খাওয়া ইত্যাদি সুবিধাও দেওয়া হয় পদকজয়ীদের।

ফিলিপাইনের কথাই যদি ধরা হয়, দেশটি তাদের প্রথম স্বর্ণজয়ী অলিম্পিয়ান হিদিলিন দিয়াজকে বিনামূল্যে দুটি বাড়ি এবং দুটি ফ্লাইট উপহার দিয়েছে।
হংকংকে ১৯৯৬ সালে প্রথম অলিম্পিক সোনা এনে দিয়েছিলেন উইন্ডসার্ফার লি-লাই শান। দীর্ঘ ৪৪ বছরের প্রচেষ্টায় আটলান্টা গেমসে তার সেই বিজয়ের পর থেকে হংকং খুব বেশি সাফল্যের মুখ দেখেনি। চলতি গ্রীষ্মের আগে তাদের অর্জন ছিল এথেন্সে টেবিল টেনিসে একটি রুপা এবং লন্ডন অলিম্পিকে ট্র্যাক সাইক্লিংয়ে ব্রোঞ্জ পদক জয়।

তবে টোকিওতে এসে হংকং যেন পদকের বাম্পার ফলন দেখেছে! তাই দেশে ফিরে বড় অংকের টাকা ও পুরস্কার অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। শহরের অন্যতম অ্যাথলেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হং কং স্পোর্টস ইনস্টিটিউট এবং প্রপার্টি ডেভলপার হেন্ডারসন ল্যান্ড গ্রুপ ইতোমধ্যেই একটি নতুন স্কিম চালু করেছে। এই স্কিমের অধীনে ফেন্সিংয়ে সোনাজয়ী এডগার চিউং কা-লং'কে ৫ মিলিয়ন হংকং ডলার পুরস্কার দেওয়া হবে। জোড়া রুপা জয়ের জন্য সাঁতারু সিওভান হগে পাবেন ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন হংকং ডলার।
এছাড়াও কারাতেতে ব্রোঞ্জ পদকজয়ী গ্রেস লাউ মো-শিউং এবং ট্র্যাক সাইক্লিংয়ে ব্রোঞ্জ জয়ী সারাহ লি ওয়াই-জে দুজনেই ১ দশমিক ২৫ মিলিয়ন হংকং ডলার করে পাবেন। অন্যদিকে, নারীদের টেবিল টেনিস দল তাদের ব্রোঞ্জ জয়ের পুরস্কারস্বরূপ ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন হংকং ডলার পাবে।

নিজেদের প্রথম সফল অলিম্পিক উদযাপন করতে হংকংয়ের এই এলাহী কারবার কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ক্রীড়াভিত্তিক স্কুল লাম তাই ফাই কলেজ তাদের নিজ অর্থায়নে কারাতেকা অ্যাথলেট লাউ এবং ফেন্সার চিউংকে যথাক্রমে ৬,২৫,০০ হংকং ডলার এবং ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন হংকং ডলার উপহার দেবে।
হংকংয়ের পরেই নিজেদের অলিম্পিক বিজয়ীদের নিয়ে একই উন্মাদনা দেখা গেছে সিঙ্গাপুরে। দেশটির অলিম্পিক অর্জন হিসেবে মাত্র পাঁচটি পদক থাকলেও বিজয়ীদের পুরস্কৃত করতে তারা বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে প্রস্তুত ছিল। টোকিও অলিম্পিকে সোনাজয়ীদের হাতে ১০ লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার বরাদ্দ রেখেছিল তারা। অন্যদিকে, রূপা জয়ীদের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫ লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার; ব্রোঞ্জজয়ীদের জন্য ছিল তার অর্ধেক পরিমাণ অর্থ।
নিজ নিজ দেশে এমন অভ্যর্থনা ও পুরস্কার প্রাপ্তি যে অ্যাথলেটদের আনন্দিত করবে, তাতে সন্দেহ নেই। অধিকাংশ সময়ই অলিম্পিকের স্বপ্নকে তাড়া করতে যেসব অ্যাথলেটদের শুধুমাত্র সরকারি বরাদ্দের ওপর নির্ভর করতে হয়, তারা দীর্ঘদিন ধরে ভালো পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারেন না বলে জানান ক্রীড়া বিষয়ক অধ্যাপক চুং পাক-কং।
ব্যাপটিস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক মনে করেন, 'পুরস্কার দেওয়া ভালো। কিন্তু এই সবই হচ্ছে কোম্পানির প্রচারণা চালানো। গত অলিম্পিকে তারা এক টাকাও খরচ করেনি, কারণ সেবার কেউ কোনো পদক জিতেনি। এবার যদিও অনেক পদক এসেছে, তাই কোম্পানিগুলো এমনিতেই রমরমা ব্যবসা করেছে। অবশ্য কিছু অ্যাথলেটের কাছে পুরস্কারের এই টাকা তাদের খেলা ও নিজের পরিবারের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বেশ দরকারি।'
চীন তাদের অলিম্পিক সোনাজয়ী অ্যাথলেটদের ৩ লাখ ইউয়ান করে পুরস্কৃত করেছে। দেশটির ১৪ বছর বয়সী ডাইভিং সেনসেশান কুয়ান হংচ্যান এই টাকা তার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য ব্যয় করতে আগ্রহী।

ঝেনজিয়াং প্রদেশের মাঝাং জেলার দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা কুয়ানকে একটি বাড়ি, দোকান ও ২ লাখ ইউয়ান দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে তার নিজ জেলার একটি কোম্পানি। কিন্তু কুয়ান ও তার বাবা ধন্যবাদ জানিয়ে সেই উপহার নিতে অস্বীকার করেছেন।
কাজাখস্তানের হয়ে ব্রোঞ্জ জয়ী অ্যাথলেট ইগোর সনের চিত্রটাও প্রায় একই রকম। পুরস্কারের টাকা তিনি ব্যয় করবেন তার ছোটভাইয়ের চিকিৎসার কাজে। ইগোর সনের ভাই ছেলেবেলা থেকেই সেরেব্রাল পালসিতে ভুগছেন।
অলিম্পিকের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল যুক্তরাষ্ট্রের। এবারও তারা সোনাজয়ীদের জন্য ৩৭,৫০০ ডলার, রুপা জয়ীদের জন্য ২২,৫০০ ডলার এবং ব্রোঞ্জ জয়ীদের জন্য ১৫,০০০ ডলার করে বরাদ্দ রেখেছে।

রেসলিংয়ে সোনাজয়ী আমেরিকান অ্যাথলেট টামায়রা মেনসাহ-স্টক তার পুরস্কারের টাকা দিয়ে মায়ের জন্য ফুড-ট্রাক কিনবেন। মায়ের রান্নাবান্নার শখকে নতুন রূপ দিয়ে মাকে স্বাবলম্বী করতেই তার এই উদ্যোগ।
-
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট