শখ থেকে সফল উদ্যোক্তা জয়

লেখাপড়ার পাশাপাশি বিদেশি মুরগির খামার করেন সুজন হাসান জয় (২৫)। চার বছর আগে শখের বশে বাড়ির ছাদে দু’টি বিদেশি মুরগি পালন শুরু করেন তিনি। দুইটি মুরগি থেকে এখন তার খামারে শতাধিক বিদেশি মুরগি রয়েছে। এই মুরগি পালন করেই মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করছেন এই তরুণ।
সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর এলাকার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলামের ছেলে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুজন হাসান জয়। বাড়ির ছাদে তার গড়ে তোলা মুরগির খামারে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দেড় শতাধিক বিদেশি মুরগি। স্বল্প ব্যয় ও অধিক লাভজনক হওয়ায় জয় ঝুঁকেছেন মুরগি পালনে। মুরগির খামারটি দেখার জন্য প্রায়ই বিভিন্ন এলাকার বেকার তরুণরা ছুটে আসেন।
খামারি সুজন হাসান জয় জানান, সখের বশে চার বছর আগে বগুড়া থেকে দু’টি আমেরিকান সিল্কি মুরগি কিনে বাড়ির ছাদে পালন শুরু করি। দুইটি মুরগি থেকে ডিম ও বাচ্চা দিলে মুরগির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে অন্যজাতের বিদেশি মুরগি সংগ্রহ করতে থাকি। এভাবেই বাড়ির ছাদে গড়ে তুলি ছোট একটি মুরগির খামার।

নয় প্রজাতির বিদেশি মুরগি সংগ্রহে রয়েছে জানিয়ে জয় বলেন, বর্তমানে খামারে রয়েছে বিভিন্ন দেশের ৯ প্রজাতির শতাধিক মুরগি। ইউরোপিয়ান ব্রামা, কচিং, আমেরিকান সেভ রাইট, সিল্কি ও ফিজেল, নেদারল্যান্ডের পলিশক্যাপ ও সেরমা, ভারতীয় কাদারনাথ ও বেনটাম প্রজাতির মুরগি রয়েছে তার। সংগ্রহে থাকা এ মুরগিরগুলোর দাম বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকারও বেশি। সৌখিনতার জন্যই মূলত এসব মুরগি পালন করেন সৌখিন খামারিরা।
তিনি জানান, ইউরোপিয়ান ব্রামা মুরগি এক জোড়া বিক্রি হয় ২০ হাজার টাকায়, বাচ্চা মুরগি ৭-৮ হাজার টাকায়। ইউরোপিয়ান কচিং মুরগির দাম এক জোড়ার ১০ হাজার টাকা, বাচ্চা ৪ হাজার টাকা। আমেরিকান সেভরাইট এক জোড়া ১২ হাজার টাকা ও বাচ্চা ৫ হাজার টাকা, সিল্কি এক জোড়া ৭ হাজার টাকা ও বাচ্চা দেড় হাজার টাকা। ফিজেল এক জোড়া ১০ হাজার টাকা ও বাচ্চা মুরগি ৪ হাজার টাকা, নেদারল্যান্ডসের পলিশক্যাপ এক জোড়া ১৫ হাজার টাকা ও বাচ্চা ৫ হাজার। সেরমা এক জোড়া ৮ হাজার টাকা ও বাচ্চা দুই হাজার টাকা, ভারতীয় কাদারনাথ এক জোড়া ৩ হাজার টাকা ও বাচ্চা ৫শ’ টাকা এবং বেনটাম এক জোড়া ৫ হাজার টাকা ও বাচ্চা দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে এসব মুরগির বাচ্চা বিক্রি হয় জানিয়ে জয় বলেন, ঢাকা, বগুড়া, বরিশাল, খুলনা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামের সৌখিন খামারিরা এসব মুরগি কিনে থাকেন। পরিবহণের মাধ্যমে আমি এসব মুরগি তাদের কাছে পাঠিয়ে দেই। এছাড়া স্থানীয়রা দুই একজন মাঝে মধ্যে কিনে থাকেন।
তিনি বলেন, প্রতি মাসে মুরগির খাবারসহ আনুসাঙ্গিক খরচ হয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি মাসে আয় হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এসব মুরগি পালনে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। সখের এই মুরগি পালন করে আমি আজ স্বাবলম্বী হয়েছি।
জয়ের মা গৃহিনী লিলি বেগম জানান, মুরগি পালন করে নিজের খরচ নিজেই জোগাড় করে জয়। এছাড়া সংসারে খরচও দেয়। অনেক সময় ছেলে বাড়িতে না থাকলে মুরগিগুলোর খাবার আমি সরবরাহ করি। অনেক সময় বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক তরুণ এই খামার দেখতে আসে।
পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একজোড়া আমেরিকান সেভরাইট মুরগি কিনেছিলেন মুনজিতপুর এলাকার গৃহিনী সাকিলা বেগম। তিনি বলেন, জয়ের বিদেশি মুরগি পালন দেখে সখ করেই একজোড়া কিনেছিলাম। আমিও খামার গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।
সাতক্ষীরা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, জয় নামের ওই তরুণ কখনো আমাদের কাছে আসেনি। তবে এ ধরনের উদ্যোক্তা তরুণদের জন্য আমাদের সহায়তা করার সুযোগ রয়েছে। ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম নামে আমাদের একটি প্রজেক্ট রয়েছে। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তা তরুণদের সহায়তা করার সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, লাইভস্টক এন্ড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট নামে নতুন আরেকটি মেগা প্রকল্প চালু হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমেও সহযোগিতা করা যাবে। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ছাড়াও খামারটি আরও উন্নত ও সম্প্রসারণের জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করবো।