সেই ছাগল ফিরিয়ে দিলেন ইউএনও

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা পরিষদ চত্বরের পার্কের বাগানে ফুলগাছ খাওয়ার অপরাধে এক ছাগলের দুই হাজার টাকা জরিমানা করা সেই ছাগল অবশেষে ফিরিয়ে দিয়েছেন ইউএনও।
বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে ওই ছাগল তার মালিক সাহারা বেগমের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। জরিমানার টাকা সরকারি কোষাগারে ইউএনও তার পকেট থেকে দিয়েছেন।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদমদীঘি নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সীমা শারমিন।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান, স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ওই নারীকে ছাগল ফেরত দেওয়া হয়েছে। জরিমানা টাকা আমি দিয়েছি। তাকে সংশোধনের জন্য জরিমানা করেছিলাম; শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়।
তিনি আরও বলেন, মোবাইল কোর্টের টার্গেট অন্য কিছু ছিল না। জাস্ট সংশোধনের জন্য তাকে ছাগল ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর ছাগল বিক্রির অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর জরিমানা করার পর ছাগল আমার এখানে নিরাপত্তার জন্যই জিম্মায় রাখা হয়েছিল একজনের কাছে; যাতে ছাগলের কোনো ক্ষতি না হয়। ওই নারী জরিমানার টাকা ফেরত দিতে পারেনি বলে দেননি।'
ফেরত পাওয়ার ওই ছাগল মালিক সাহারা বেগম বলেন, আমার ছাগল কয়েকদিনে খুব নাকাল হয়ে গেছে। এভাবে একটি পশুকে আটকে রাখা ঠিক না। তার ছাগল এর আগে বাগানের ফুল খায়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
এর আগে গত ১৭ মে উপজেলা পরিষদের বাগানের ফুল খাওয়ার অপরাধে ছাগল আটক করে ভ্রাম্যমাণ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেনে ইউএনও। তিনি ছাগল মালিকের অনুপস্থিতে এই জরিমানা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ কারণে এ বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায় গণমাধ্যমের কল্যাণে।
পরে জরিমানার টাকা দিতে না পারায় নয় দিন আটকে রাখার পর মালিক সাহারা বেগমকে না জানিয়ে ছাগলটি পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। গত বুধবার ছাগল মালিক সাহারা বেগম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, তিনি আদমদীঘি উপজেলা পরিষদ চত্বরের ডাকবাংলো সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করেন। তার স্বামীর নাম জিল্লুর রহমান। গত ১৭ মে তার ছাগলটি হারিয়ে যায়। অনেক জায়গায় তিনি ছাগলটির সন্ধান করেন। পরে এলাকার লোকজন তাকে জানায়, ছাগলটি ইউএনওর এক নিরাপত্তা কর্মীর নিকট রয়েছে। তিনি ইউএনওর বাসার পাশে গিয়ে এক নিরাপত্তাকর্মীকে ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে দেখেন। এসময় সাহারা বেগম ছাগল নিতে চাইলে তাকে ছাগল দেওয়া যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয় ওই নিরাপত্তাকর্মী।
নিরুপায় হয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট গেলে তাকে তিনি (নির্বাহী অফিসার) বলেন, ফুলগাছের পাতা খাওয়ার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিয়ে ছাগল নিয়ে যান। জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার গত ২২ মে শনিবার ছাগলটি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে সাহারা খাতুন অভিযোগ করেন।
তিনি আরোও জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসার গৃহকর্মী তাকে জানায়, ছাগলটি পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। জরিমানার দুই হাজার টাকা বাদ দিয়ে বাকি তিন হাজার টাকা নিয়ে আসার জন্য বলে ওই গৃহকর্মী।
তবে এ বিষয়ে ইউএনও বরাবর বলে আসছেন তিনি ছাগল বিক্রি করেননি; জিম্মা রেখেছেন উপজেলা পরিষদের পরিচিত এক ব্যক্তির কাছে।
সীমা শারমিন জানান, উপজেলা চত্বরে একটি পার্ক করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুলের গাছ নিয়ে এসে লাগানো হয়েছে। কিন্তু এখানে ওই ছাগল এসে গাছের ফুলগুলো খেয়ে নিয়েছে কয়েকবার। এ বিষয়ে ছাগলের মালিককে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু উনি কথা শোনেন নি। এ কারণে গণ উপদ্রুপ আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ছাগলের মালিকের অনুপস্থিতিতে এভাবে জরিমানা করা যায় কিনা জানতে চাইলে বগুড়া জেলা বার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোজ্জাম্মেল হক বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের আইন মতে অভিযুক্ত ব্যক্তির দোষ স্বীকার করতে হবে। তখন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান বা সম্পদের (ছাগল) মালিকের বিরুদ্ধে এভাবে জরিমানা করা ঠিক হয়নি। এই ঘটনায় প্রচলিত বৈধ রীতি খোয়াড়ে ছাগল রাখতে পারতেন। অথবা বেশি ক্ষতি হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থানায় কিংবা আদালতে মামলা করতে পারেন।