Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Wednesday
July 02, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
WEDNESDAY, JULY 02, 2025
অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট: দুই প্রতিবেশীর কাহিনী

মতামত

ফিরোজ আহমেদ
21 May, 2021, 10:40 pm
Last modified: 21 May, 2021, 11:37 pm

Related News

  • যেভাবে ভারতের বিচার বিভাগ এখনও জনগণের আশা জাগিয়ে রেখেছে
  • ভারতের ভ্যাকসিন সংগ্রহের সব তথ্য দেখাতে হবে: কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্ট
  • কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন সাংবাদিক রোজিনা
  • জামিন পেলেন সাংবাদিক রোজিনা 
  • রোজিনা ইসলামকে দ্রুত মুক্তিদানের দাবি জানালেন মার্কিন গণমাধ্যম নেতৃবৃন্দ

অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট: দুই প্রতিবেশীর কাহিনী

বেনুগোপালকে আদালত পড়ে শোনাতে বলেন ধারা ৮(২), সেখানে বলা আছে তথ্য প্রকাশ করলে জনস্বার্থে যতটুকু উপকার হবে তা যদি তথ্য প্রকাশের কারণে সংরক্ষিত কোন স্বার্থের যা ক্ষতি হবে তার চাইতে বেশি হয়, তাহলে সরকার তথ্য প্রকাশে বাধ্য থাকবে।
ফিরোজ আহমেদ
21 May, 2021, 10:40 pm
Last modified: 21 May, 2021, 11:37 pm
১৮ মে ২০২১: গ্রেপ্তারের একদিন পর প্রিজন ভ্যানে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। ছবি: মুনির উজ জামান/এএফপি

১.
বছর দুয়েক আগে ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকার কিছু প্রতিবেদনকে ঘিরে একটা মামলা আলোড়ন তৈরি করেছিল। দেশের কয়েকটা পত্রিকাকে অনুরোধও করেছিলাম এ বিষয়ে আলোচনা ছাপতে, যে কারণেই হোক গুরুত্ব পায়নি প্রসঙ্গটা। অথচ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জনগণের জানবার অধিকার বিষয়ে এই মামলার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম, অনেকগুলো প্রয়োজনীয় নজির স্থাপন করেছিল মামলার ঘটনাবলী ও এনিয়ে আদালতের রায়। ভারত ও বাংলাদেশ এই দুই প্রতিবেশীর আইন-কানুন একই ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকারের কারণে বহুক্ষেত্রেই হুবহু এক বলে ভারতীয় বিচারকদের মতামত ও নজিরগুলোকে বাংলাদেশেও অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়, এই প্রায়োগিক তাৎপর্যের কারণেই মামলাটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একইসাথে সরকারের কাজের ওপর গণমাধ্যমের নজরদারির অধিকারের রাষ্ট্রনৈতিক ও দার্শনিক যৌক্তিকতা স্থাপনের প্রেক্ষিত থেকেও ওই রায়টির একটি বিশ্বজনীন আবেদন আছে।

শুরুতে দ্য হিন্দু পত্রিকাটি মামলাতে জড়িল ছিল না। ঘটনার সূত্রপাত ২০১৫ সালে। ভারতের ১৩৬টি রাফাল জঙ্গিবিমান কেনার আলোচনা ইতোমধ্যে বিমানটির উৎপাদক দাসো কোম্পানির সাথে অনেকদূর এগিয়ে গেলেও হঠাৎ করেই মোদি সরকার সেই আলোচনা বন্ধ করে দিয়ে ঘোষণা করেন যে, উৎপাদকের সাথে নয়, রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের চুক্তির মাধ্যমে বিমানগুলো কেনা হবে। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, এতে খরচ পড়বে কম। কিন্তু তখন থেকেই বিষয়টা নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠতে থাকে, খরচ আদৌ কম হবে কিনা, কেন এই চুক্তিতে অনিল আম্বানীর রিলায়েন্স গ্রুপ যুক্ত হচ্ছে ইত্যাদি। ২০১৮ সালে এনিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হয়, কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত এই কেনাকাটার বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মামলাটির প্রথম পর্যায়ের সেই রায়টিও ব্যাপকভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়। 

আইনি পর্যালোচনা বিষয়ে যাদের আগ্রহ আছে, তারা এ বিষয়ে এই আলাপটি এইখানে (t.ly/PP2L) শুনতে পারেন অথবা এইখানে  (t.ly/jqpX) এটির লিখিত রূপটি পড়তে পারেন। ওয়্যার.কম নামের প্রভাবশালী ভারতীয় অন্তর্জালিক সংবাদ মাধ্যম ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে এই সাক্ষাতকারটি প্রকাশ করে। প্রতিবেশী ভারতীয় গণমাধ্যম ও বিশেষজ্ঞরা এমনকি আদালতের রায়কেও কিভাবে খুঁটিনাটি পর্যালোচনা ও সমালোচনা করেন, তার সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেন, সেটি বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম ও বিচার বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয় হতে পারে। এখানে আলোচক অজয় শুক্লা ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, বর্তমানে তিনি ভারতের বিজনেস স্টান্ডার্ড পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিসেবেও তিনি আলোচিত। অন্যদিকে, সাক্ষাতকার গ্রহীতা সিদ্ধার্থা বরদারঞ্জন দা ওয়্যার- এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। এছাড়া, এই রায়টির তীব্র নিন্দা করে একটি লেখা লিখেছিলেন মামলাটির তিন বাদী; সাবেক মন্ত্রী যশোবন্ত সিংহ, অর্থনীতিবিদ অরুণ সৌরী ও প্রখ্যাত আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, তাদের লেখাটি পাওয়া যাবে এখানে (t.ly/qcm3)।

২.
ঘটনা আসলে এখানে শেষ নয়, বরং সূচনা মাত্র। ৬ মার্চ ২০১৯ সালে দুনিয়া নড়েচড়ে বসে রয়টার্স প্রচারিত একটা সংবাদে। ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল কে. কে. বেনুগোপাল দেশটির উচ্চ আদালতে রাফাল বিমান ক্রয় নিয়ে নতুন একটি শুনানিতে দেশটির অন্যতম প্রধান পত্রিকা দ্য হিন্দুর বিরুদ্ধে চুরিকৃত সরকারী নথি প্রকাশ করবার অপরাধে ১৯২৩ সালের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের এর অধীনে ফৌজদারি মামলার হুমকি দেন । 

উল্লেখ্য যে, বৃটিশ আমলে প্রণীত এই অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাকট বাংলাদেশেও কার্যকর, হুবহু এই আইনেই প্রথম আলোর পুরস্কার প্রাপ্ত সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম এখন কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে দ্য হিন্দু পত্রিকাকে এমন হুমকি দেয়ার কারণটা হলো এই যে, আদালত রাফাল বিমানের মামলা খারিজ করে দেওয়ার কিছুদিন পরই ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দ্য হিন্দু পত্রিকাতে একের পর এক ৬টি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, সরকারি ক্রয় কমিটির সমান্তরালেই তৎপরতা চালিয়ে মোদি সরকার এই ক্রয়টিকে কঠিন করে তোলে, আম্বানিকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ক্রয় কার্যক্রমে যুক্ত করে এবং এসবের পরিণতিতে একেকটি যুদ্ধ বিমানের দাম প্রায় ৪১ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। 

সরকারি এই নথি থেকেই জানা যায়, ভারত সরকারের ভূমিকার কল্যাণে ফরাসি কোম্পানিটি চুক্তি থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধী ধারাগুলো বাদ দেওয়ার এবং ব্যাঙ্ক নিশ্চয়তা সংযোজন না করার সুযোগ পায়। দ্য হিন্দুর এই প্রতিবেদনগুলো প্রায় কামানের গোলার মতই ছিল মোদি সরকারের জন্য। বিষয়টি বেশি চাঞ্চল্য তৈরি করে, কেননা এখানে সূত্র হিসেবে সরকারি কর্মচারিদের তৈরি করা নথিপত্রকেই ব্যবহার করা হয়েছে- যেখানে প্রতিরক্ষা ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারের দুর্নীতি, অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, অসত্য তথ্য প্রদান এবং রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘনের মত গুরুতর অভিযোগগুলো উঠে আসে। আগ্রহী পাঠকরা প্রখ্যাত প্রতিবেদক এন. রাম এর করা এই ছয়টি প্রতিবেদন দেখতে পারেন দ্য হিন্দুর একটি প্যাকেজে এখানে (t.ly/x2FF)। 
 
ফলে ঘটনা প্রবাহের মোড় ঘুরে যায়। এগুলো নিছক বিরোধী পক্ষের অভিযোগ বা বাইরের বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনা নয়, ফলে এগুলোকে সরকারের পক্ষে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার উপায় ছিল না। রাফাল ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করা তিন ফরিয়াদী এবার আবারও আদালতের দ্বারস্থ হন, তারা আর্জিতে এই নতুন সাক্ষ্য-প্রমাণাদির ভিত্তিতে অন্তত একটি নতুন তদন্তের দাবি জানান।  

আদালতে মোদি সরকার কিভাবে আত্মরক্ষা করতে চেয়েছিলেন? সেটাই বর্তমান নিবন্ধের একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয়। একবাক্যে সরকারের প্রধান যুক্তিটিকে এভাবে প্রকাশ করেছে ভারতের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম: রাফাল বিমান ক্রয় সংক্রান্ত কোন নথিকে আদালত যেন আমলে না নেন, কেননা সেই গোপনীয় নথিগুলো অবৈধভাবে 'চুরি' করা। অবৈধভাবে চুরি করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আদালত যেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করেন।

এছাড়া তিনি আরও যুক্তি দেখান যে, ভারতীয় সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী কোন নথির প্রকাশকে জননিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিস্বরূপ বলে মনে হলে সরকারি কর্মচারিদের অধিকার আছে তা প্রকাশ না করবার। ফলে এই তথ্যগুলো তথ্য অধিকার আইনে প্রকাশযোগ্য ছিল না, এটাও এই নথিগুলোকে বিবেচনায় না নেওয়ার যুক্তি বলে তিনি দাবি করেন।

বাইরে বিজেপির পক্ষ থেকে নানান বর্ণের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রচার চলতে থাকে। আদালতের ভেতরে অ্যাটর্নি জেনারেল বেনুগোপাল এমন মত প্রকাশ করেন যে, এই নথিগুলোর প্রকাশ ভারতকে গভীর নিরাপত্তা ঝুঁকির মাঝে ফেলবে। যারা এগুলো ফাঁস করেছেন, তারা ফৌজদারী আদালতে বিচারযোগ্য অপরাধ করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এই প্রসঙ্গে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘাতের কথা উল্লেখ করে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এই নথি ফাঁসকারীদের হুমকিস্বরূপ হিসেবে বিচার করার হুমকি দেন। কিন্তু, তিনি কখনোই কী ধরনের হুমকি এই ফাঁস করা নথিগুলোর কারণে সৃষ্টি হবে, তা উল্লেখ করেননি। হুবহু একই ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে, রোজিনা ইসলামকে জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকিস্বরূপ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, সচিবের ব্যক্তিগত সহকারীর টেবিলে মিলবে এমন একটি নথি রোজিনা ইসলাম চুরি করে আন্তর্জাতিক টিকা রাজনীতিতে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি করেছেন, এমন অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে বলা হচ্ছে।

৩.
ভারত সরকারের আবেদনের জবাবে দেশটির আদালত সোজাসুজি জানিয়ে দেন যে, সরকার যেহেতু নথিগুলোর সত্যতা সম্পর্কে আপত্তি তোলেনি, সেগুলো কিভাবে যোগাড় হয়েছে তা ধর্তব্যের মাঝে আসে না। নথিগুলি প্রাসঙ্গিক কিনা, জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ কিনা, সেটিই আদালতের কাছে একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। গোপন দলিল হলেও রাফাল বিমান ক্রয়ের স্বচ্ছতা বিষয়ে সরকারেরই ক্রয় কমিটির একাধিক সদস্যের উত্থাপিত প্রশ্ন ও পর্যালোচনাগুলো দ্য হিন্দু পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করাকে আদালত সমর্থন করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেন। এভাবে ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে ভারতের উচ্চ আদালত এই রায়টির মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে নতুন এই ফলকটি স্থাপন করেন। সঙ্গত কারণেই ভারতের অধিকাংশ দায়িত্বশীল গণমাধ্যম রায়টিকে 'ভারতীয় সাংবাদিকতার জন্য একটা বিরাট বিজয়' হিসেবে উল্লেখ করে। 

এভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সরকারের সবগুলো যুক্তি একেবারে উড়িয়ে দেন। তারা পরিস্কার করে বলেন, নথি কিভাবে মিলেছে সেটা আদৌ বিষয় না। সেগুলো জনস্বার্থে প্রাসঙ্গিক কি না, নথিগুলো যথার্থ কি না আদালত সেগুলোই বিবেচনা করবে। আদালত এমনকি এমনও মত দেন যে, সরকারী কর্মচারিরা কোন নথিতে গোপনীয়, অতি-গোপনীয় ইত্যাদি মোহর এঁটে দিলেই তা পত্রিকায় প্রকাশ করার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায় না, বা তা আদালতে বিবেচনায় আনার অযোগ্য হয় না, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টেও এমন কোন বিধান নেই। ভারতীয় আদালতের এই পর্যালোচনার অংশটুকুও তাৎপর্যপূর্ণ। আমলাদের বা রাজনীতিবিদদের যে এই অধিকার নেই তারা যথেচ্ছভাবে গোপনীয়, অতি-গোপনীয় ছাপ্পর দিয়ে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে যাবেন, সেটা আদালত এখানে গুরুত্ব দিয়ে স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশে রোজিনা ইসলামের বেলাতে এমনটা ঘটার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

আদালতের রায়ের নেতিবাচক রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া থাকতে পারার সম্ভাব্যতা বিষয়ে আদালত বিখ্যাত কেশবানন্দ ভারতী বনাম রাষ্ট্র মামলার একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরেন, যেখানে বলা হয়েছিল: "সংবিধানের যে কোন ব্যাখ্যার রাজনৈতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থাকার বাস্তবতা যেন এই সত্যকে মুছে না দেয় যে,... [আদালতের] প্রধান কর্তব্য হলো ভীতি বা পক্ষপাত মুক্ত থেকে সংবিধান ও আইনকে উর্ধে তুলে ধরা।"

এখানে ছোট্ট একটা ‌'নিয়তির বিচার'ও ঘটে। এ সংক্রান্ত শুনানির একেবারে শেষ দিনটিতে গোপন তথ্য ফাঁসের দায়ে জড়িতদের ফৌজদারী আদালতে বিচারের হুমকি দেওয়া অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপালকেই সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি ভারতীয় তথ্য অধিকার আইনের কয়েকটি ধারা পড়ে শোনাতে বলেন। আদালতের আদেশে প্রথমে ধারা ২২ পড়েন বেনুগোপাল, সেখানে বলা আছে তথ্য অধিকার আইন গোপনীয়তা সংক্রান্ত অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের উপরে স্থান পাবে। এরপর আদালতের আদেশে অ্যাটর্নি জেনারেল পড়েন ধারা ২৪। সেখানে বলা আছে, তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত বিষয়ে তথ্য প্রদানে বাধ্য থাকবে। এরপর, বেনুগোপালকে আদালত পড়ে শোনাতে বলেন ধারা ৮(২), সেখানে বলা আছে তথ্য প্রকাশ করলে জনস্বার্থে যতটুকু উপকার হবে তা যদি তথ্য প্রকাশের কারণে সংরক্ষিত কোন স্বার্থের যা ক্ষতি হবে তার চাইতে বেশি হয়, তাহলে সরকার তথ্য প্রকাশে বাধ্য থাকবে। বিচারপতিদের আদেশে এভাবে ভারতের তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে পড়ে শোনান তথ্য অধিকার আইনের সেই ধারাগুলো, যেগুলো তার নিজের উত্থাপিত যুক্তিসমূহকে একদম বাতিল করে দেয়।

এরপর, আদালত সরকার পক্ষকে মনে করিয়ে দেন যে, তথ্য অধিকার আইন কার্যকর হবার পর থেকে গোপনীয়তা বিষয়টি নিয়েই ভারতের আইনের দৃষ্টিভঙ্গিতে একটা বিরাট বদল ঘটে গেছে। এই বদলটিকে একটা 'যুগান্তর' এবং 'বিপ্লব' হিসেবে উল্লেখ করে এই ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের এই রায়টিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে তথ্য অধিকার আইন যে গোপনীয়তা সংশ্লিষ্ট আইনগুলোকে স্পষ্টতই বাতিল করে দেয়, সেটা পুনর্ব্যক্ত করা হয়। ভারতীয় উচ্চ আদালত এভাবে জনস্বার্থে গণমাধ্যমের তথ্য চুরির অধিকারকেই নৈতিক ও আইনি ভিত্তি প্রদান করেন।

৪.

না, এত সব রুদ্ধশ্বাস বিপ্লবের পরও ভারতীয় আদালত রাফাল বিমান ক্রয়ের দুর্নীতির অভিযোগের মামলাটিকে নতুন করে আমলে নেননি। এর কয়েকমাস পর ১৪ নভেম্বর, ২০১৯ তারিখে একই আদালত মামলাটির পুরনো রায়টিকে নতুনভাবে বিবেচনা করার আবেদনটি চূড়ান্ত রূপে খারিজ করে দেন, বাদীকে নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়।

এর কারণটিও বোধগম্য। রাফাল ক্রয়ের অনিময় যদি কিছু হয়ে থাকে, তার বিচার করতে গেলে ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থার গোড়ায় হাত দিতে হবে আদালতকে। কেননা এর মূল বর্তমান ভারত সরকার ও রাষ্ট্রের গভীরতম অংশে ছড়িয়ে আছে। ফলে এমন ক্ষেত্রগুলোতে সরকারের বদল না ঘটলে পরিমাণে যতই অবিশ্বাস্য বিপুল হোক না কেন, এই জাতীয় দুর্নীতির অভিযোগের যথাযথ বিচার সম্ভব হবে না। সেটা ভারত রাষ্ট্রের ভিন্নতর একটি সীমাবদ্ধতার কাহিনী। কিন্তু কী কারণে ভারতে প্রবল হিন্দুত্ববাদী অপশাসনের পরও দ্য হিন্দু, স্ক্রল.কম, ওয়্যার বা এমনি সব গণমাধ্যমে নিয়মিতই রাষ্ট্রকে ঝাঁকুনি দেয়া অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা আমরা দেখতে পাই; অসাধারণ সব ব্যঙ্গচিত্র বা বিশ্লেষণের সন্ধান পাই, তার উৎস খুঁজতে হবে সেখানকার এই আদালত, এবং আমলাতন্ত্রের মত প্রতিষ্ঠানগুলোর রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসেবে বেশ খানিকটা শক্তিশালী ভাবে গড়ে ওঠা, টিকে যাওয়ার ভেতরে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোরই ভেতরকার বহু সৎ ও জনস্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়া মানুষ ভেতরের তথ্য গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরছেন। সেই কারণেই নানান রকম হস্তক্ষেপ ও প্রভাবের পরও একটা কার্যকর নির্বাচনী গণতন্ত্র হিসেবে ভারত টিকে আছে। এবং ধরে নেয়া যায় যে আজ কিংবা কাল অথবা পরশু, রাফাল বিমান কেনার বেলায় আসলে কী ঘটেছিল, তা ভারতের জনগণ জানতে পারবেন, হয়তো প্রয়োজনে বিচারও পাবেন।

ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশেও রোজিনা ইসলাম একের পর সরকারি নথি ফাঁস করে বহুবার সরকারকে বিব্রত করেছেন। কিন্তু, রোজিনার উদঘাটিত দুর্নীতিগুলো যতই চাঞ্চল্য সৃষ্টি করবার মত হোক না কেন, তা কখনো বাংলাদেশের আদালতের বিবেচ্য বিষয় হিসেবে উত্থাপিত হয়নি। গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে রোজিনা ইসলামের কাজের স্বাধীনতা ঘোষনা করে বাংলাদেশের কোন বিচারপতি আদেশ জারি করার সুযোগ পাননি। দ্য হিন্দু পত্রিকার সেই প্রতিবেদক এন. রাও ভারত জুড়ে একজন নায়ক, আদালতের আদেশের কারণে তার কাজ নিয়ে বিপুল আগ্রহ দেখা দিয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্রয়ের মত স্পর্শকাতর বিষয়ে সরকারি নথি ফাঁস করেও বিপুল স্বীকৃতি ধন্য তিনি আজ। অন্যদিকে, জনস্বাস্থ্যের মত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রায় একই ভূমিকা রাখবার দায়ে প্রতিবেশী দেশে রোজিনা ইসলামকে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বেঁধে রেখেছে কারাগারে।

  • লেখক: প্রাবন্ধিক, অনুবাদক এবং রাজনীতিক 

Related Topics

টপ নিউজ

অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট / সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম / ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • কাল থেকে আমদানি-রপ্তানির সব সনদ অনলাইনে জমা বাধ্যতামূলক: এনবিআর
  • হলে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দে যেভাবে বদলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের চিত্র
  • রাজস্বের কর্তৃত্ব এনবিআর কর্মকর্তাদের হাতেই থাকা উচিত: অর্থ উপদেষ্টাকে ব্যবসায়ীরা  
  • গতকালের ঘটনায় বুঝলাম পিস্তল, মিসাইল সঙ্গে রাখলেও আমি-আপনি নিরাপদ নই: আসিফ
  • চাইলেই বিশ্বজুড়ে গাড়ির কারখানা বন্ধ করতে পারে চীন!
  • যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ

Related News

  • যেভাবে ভারতের বিচার বিভাগ এখনও জনগণের আশা জাগিয়ে রেখেছে
  • ভারতের ভ্যাকসিন সংগ্রহের সব তথ্য দেখাতে হবে: কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্ট
  • কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন সাংবাদিক রোজিনা
  • জামিন পেলেন সাংবাদিক রোজিনা 
  • রোজিনা ইসলামকে দ্রুত মুক্তিদানের দাবি জানালেন মার্কিন গণমাধ্যম নেতৃবৃন্দ

Most Read

1
অর্থনীতি

কাল থেকে আমদানি-রপ্তানির সব সনদ অনলাইনে জমা বাধ্যতামূলক: এনবিআর

2
বাংলাদেশ

হলে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দে যেভাবে বদলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের চিত্র

3
অর্থনীতি

রাজস্বের কর্তৃত্ব এনবিআর কর্মকর্তাদের হাতেই থাকা উচিত: অর্থ উপদেষ্টাকে ব্যবসায়ীরা  

4
বাংলাদেশ

গতকালের ঘটনায় বুঝলাম পিস্তল, মিসাইল সঙ্গে রাখলেও আমি-আপনি নিরাপদ নই: আসিফ

5
আন্তর্জাতিক

চাইলেই বিশ্বজুড়ে গাড়ির কারখানা বন্ধ করতে পারে চীন!

6
অর্থনীতি

যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net