মানুষ কি আসলে একগামী? উত্তর মিলল প্রাণীদের সঙ্গে তুলনায়!
মানুষ কি আসলেই সারা জীবন একজনের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে? বানর বা শিম্পাঞ্জির চেয়ে মানুষ অনেক বেশি একগামী। কিন্তু বিভার বা ভোঁদড় জাতীয় প্রাণীর কাছে মানুষ হেরে গেছে। নতুন এক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই গবেষণাটি করেছেন। তারা বিভিন্ন প্রাণীর আপন ভাই-বোন এবং সৎ ভাই-বোনের অনুপাত বিশ্লেষণ করেছেন। একই সঙ্গে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের মানুষের তথ্যও যাচাই করা হয়েছে।
গবেষণার মূল বিষয়টি বেশ সহজ। যেসব প্রাণী বা সমাজ বেশি একগামী, সেখানে বাবা-মা দুজনেই এক থাকে এমন ভাই-বোনের সংখ্যা বেশি। অন্যদিকে যারা বহুগামী, তাদের ক্ষেত্রে সৎ ভাই-বোনের সংখ্যা বেশি দেখা যায়।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় নৃতত্ত্ববিদ মার্ক ডিবলের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের একটি দল এই কাজ করেছেন। তারা কম্পিউটার মডেল এবং জিনগত গবেষণার তথ্য ব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে তারা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর 'একগামীতা রেটিং' বা স্কোর বের করেছেন।
গত বুধবার 'প্রসিডিংস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি' জার্নালে তাদের এই ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা দেখেছেন, একগামীতার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে বিভার। তাদের স্কোর ৭২ শতাংশ। মানুষের স্কোর ৬৬ শতাংশ। মানুষের পরে আছে মিরক্যাট নামের প্রাণী। তাদের স্কোর ৬০ শতাংশ। গবেষকরা এই তিনটি প্রজাতিকে একগামীতার 'প্রিমিয়ার লিগ'-এর সদস্য বলছেন।
তালিকার উল্টো পিঠের চিত্রটা বেশ ভিন্ন। ডলফিন এবং শিম্পাঞ্জিদের একগামীতা রেটিং মাত্র ৪ শতাংশ। আর পাহাড়ি গরিলাদের ক্ষেত্রে এই হার ৬ শতাংশ।
ডিবল সিএনএনকে বলেন, 'ভাই-বোনের অনুপাত দিয়ে একগামীতা মাপার চেষ্টা এটাই প্রথম নয়। তবে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সঙ্গে মানুষের এই হারের তুলনা এটাই প্রথম।'
গবেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে একগামীতাকে মানুষের সামাজিক সহযোগিতার চাবিকাঠি মনে করা হয়। এই গুণের কারণেই মানুষ পৃথিবী শাসন করতে পেরেছে।
ডিবল ৯৪টি ভিন্ন ভিন্ন মানব সমাজের তথ্য ব্যবহার করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে মানুষের বিয়ে ও সঙ্গীর ধরণ একেক জায়গায় একেক রকম।
ডিবল বলেন, 'নৃতত্ত্ববিদরা এই বৈচিত্র্য বুঝতে চান। তবে মাঝে মাঝে পিছিয়ে এসে পুরো প্রজাতিকে দেখা দরকার। তখন বোঝা যায় অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় আমরা কোথায় আছি।'
একগামিতার 'প্রিমিয়ার লিগ'
গবেষণায় সব মিলিয়ে ১১টি প্রজাতিকে সামাজিকভাবে একগামী হিসেবে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে মানুষের অবস্থান সপ্তম। মানুষের গড় স্কোর ৬৬ শতাংশ।
ডিবল জানান, মানুষের আপন ভাই-বোনের অনুপাত অন্য একগামী প্রাণীদের মতোই। এতে তিনি অবাক হননি।
তিনি একটি ইমেইলে বলেন,'তবে মানুষ ও বহুগামী প্রাণীদের মধ্যে বিশাল তফাৎ দেখে আমি অবাক হয়েছি। যেসব মানব সমাজে আপন ভাই-বোনের সংখ্যা সবচেয়ে কম (২৬%), তাদের স্কোরও একগামী নয় এমন প্রাণীদের সর্বোচ্চ স্কোরের (২২%) চেয়ে বেশি।'
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে ডিবল বলেন, এই ফলাফল প্রমাণ করে যে মানুষ মূলত একগামী প্রজাতি।
ইংল্যান্ডের নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যা জীববিজ্ঞানের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ইসাবেল স্মলেঞ্জ এই গবেষণার প্রশংসা করেছেন। তিনি সিএনএনকে বলেন, 'স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে তুলনা করার জন্য গবেষণাটি একটি চমৎকার নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রধান ফলাফলটি চমকপ্রদ। আমাদের সবচেয়ে কাছের প্রাণী আত্মীয়দের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি একগামী।'
ইসাবেল যোগ করেন, 'বিভার ও মিরক্যাটের মতো মানুষও 'প্রিমিয়ার লিগে' আছে। এতে বোঝা যায় শিম্পাঞ্জি বা গরিলাদের চেয়ে মানুষের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক বেশি দেখা যায়। শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে একাধিক সঙ্গী থাকাই স্বাভাবিক নিয়ম।'
তার মতে, মানুষ অন্য অনেক প্রাণীর চেয়ে বেশি একগামী ঠিকই। তবে মানুষের সামাজিক সাফল্যের পেছনে শুধু এই একটি কারণ নেই। এর পেছনে আছে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক, আত্মীয়তার বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের এক মিশ্রণ।
