জুলাই আন্দোলনে হত্যা নিয়ে মিথ্যা মামলা: হাসিনাসহ ৪২ জনকে অব্যাহতি, বাদীর বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
জুলাই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলার অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪২ জনকে অব্যাহতি দেওয়ায় আবেদন করেছে পুলিশ।
একইসঙ্গে মিথ্যা মামলা করার জন্য মামলার বাদী মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে মামলার অনুমতি চেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
২০২৪ সালের ৩ আগস্ট জুলাই আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে দুলাল ওরফে সেলিম হত্যা অভিযোগে মামলাটি করা হয়।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। সেখানে নিহত সোলায়মান সেলিমের নাম উল্লেখ করা হয় দুলাল/সেলিম। পেশা দেখানো হয় 'ঠিকানা' পরিবহনের হেলপার।
ওইসময়ে আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। ডিবি পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে। তদন্তে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, দুলাল নিহত হননি।
তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের ওয়ারী বিভাগের উপ-পরিদর্শক ইনামুল ইসলাম গত ৩০ নভেম্বর মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৪২ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
মিথ্যা মামলা করায় সেলিমের ভাই মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় মামলা করার অনুমতিও চেয়েছেন।
অব্যাহতির সুপারিশ করা বাকি আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, রমেশ চন্দ্র সেন, আসাদুজ্জামান নুর, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, মশিউর রহমান মোল্লা সজল, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাদী মোস্তফা (কামাল) ও ভিকটিম (সেলিম) আপন ভাই। তারা চার ভাই ও দুই বোন।
বড় ভাইয়ের নাম হেলাল উদ্দিন (৬২), মেজ ভাই মো. আবুল হোসেন আলম (৫৮), সেজো ভাইয়ের নাম মো. মোস্তফা কামাল (৫৫) এবং ছোট ভাই সোলায়মান সেলিম ওরফে দুলাল/সেলিম (৫০) সবার ছোট।
মোস্তফা কামাল ডাকাতিতে জড়িত থাকায় সে এলাকায় মোস্ত ডাকাত নামে পরিচিত। মোস্তফা কামাল ওরফে মোস্ত ডাকাতের নামে ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া থানায় হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সার্চ ওয়ারেন্ট থাকায় সে ১০ বছর পলাতক রয়েছেন।
তার সঙ্গে সোলায়মান সেলিম ওরফে দুলালের কোনো যোগাযোগ নেই।
প্রতিবেদন আরও বলা হয়, ভাইদের সঙ্গে সেলিমের জায়গা জমি নিয়ে শত্রুতা আছে এবং জমির মামলা-মোকদ্দমা চলমান আছে।
মোস্তফা কামাল খারাপ চরিত্রের লোক। সে তার আপন ছোট ভাই সোলায়মান সেলিম ওরফে দুলালকে যাতে পরবর্তীতে হত্যা করে লাশ গুম করে সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে পারে এবং অসাধুভাবে অর্থনৈতিক লাভবান হওয়ার আশায় মোস্তফা কামাল এজাহার নামীয় আসামিদের টাকার বিনিময়ে মামলা থেকে প্রত্যাহার করতে পারে; সেই উদ্দেশ্যে জীবিত সোলায়মান সেলিমকে জুলাই আন্দোলনে গুলিতে মৃত দেখিয়ে মোস্তফা কামাল বাদী হয়ে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় মিরাজ খান নামে এক ব্যক্তিকে।
তার আইনজীবী রাশেদুল ইসলাম রাশেদ বলেন, 'লোকটা রাজনীতি করেন না। তারপরও তাকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাকে প্রথমে লালবাগ থানার একটা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। যার মধ্যে যাত্রাবাড়ি থানার মামলাটাও রয়েছে। হত্যার ঘটনা ঘটলো, তারপর আসামি হলো। হয়রানির শিকার হলো।'
তিনি আরও বলেন, 'তার উচিত হবে রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করা। কারণ বিনা কারণে তাকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।'
মোস্তফা কামাল তার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে গত ৩ আগস্ট কাজলা এলাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়। মাথায় গুলি লেগে মারা যান দুলাল। সেই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে মামলাকারীর বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় অভিযোগ দায়েরের আবেদন করা হয়েছে।
