সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীর মৃত্যু: দুই ঘণ্টা অবরোধের পর ফার্মগেটের সড়ক ছাড়লেন তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা
সহপাঠী 'হত্যার' প্রতিবাদে রাজধানীর ফার্মগেট মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তারা ফার্মগেট মোড় অবরোধ করে রাখেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিএমপির ট্রাফিক তেজগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার অনীশ কীর্ত্তনীয়া বলেন, 'সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা ফার্মগেট অবরোধ করেন। ফার্মগেট বন্ধ থাকায় আশপাশের সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।'
তবে পুলিশ ও কলেজ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়েন। এরপর যান চলাচল শুরু হয়।
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈন্যু মারমা বলেন, 'শিক্ষার্থী সহপাঠীকে হত্যার বিচারের দাবি জানিয়েছিল। পুলিশ অবশ্যই সেটি তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনবে৷ তাদের সেই আশ্বাস দেওয়ার পর তারা সড়ক ছেড়ে দেন। পাশাপাশি তাদের কলেজের কিছু সমস্যা ছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষ সেগুলোও মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।'
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, তেজগাঁও কলেজের ছাত্রাবাসে গত ৬ ডিসেম্বর মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৩ জন শিক্ষার্থী আহত হন। তার মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিবুল হাসান রানা চার দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থেকে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় মারা যান।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, রানাকে রাজনৈতিক সহিংসতার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে, যা এখন ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে। কলেজে জানাযা পড়তে চাইলে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
নিহত রানার সহপাঠী উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ফারহান বলেন, 'স্থানীয় ছাত্রদলের একটি গ্রুপ তেজগাঁও কলেজ ছাত্রাবাসে মাদক সেবন করছিল। রানা সেটির প্রতিবাদ করায় তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।'
গত ৬ ডিসেম্বর রাতে তেজগাঁও কলেজের একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে স্থানীয় বহিরাগত একটি গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তখন মাথায় গুরুতর আঘাত পান সাকিবুল হাসান রানা। পরে তাকে প্রশান্তি হসপিটাল লিমিটেডে ভর্তি করা হয়। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির উচ্চমাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পরে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তবে তার মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুরে নিয়ে যায় পরিবার।
ওইদিন দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) শের-ই-বাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন তেজগাঁও কলেজ ছাত্রাবাসের হল সুপার মো. জহিরুল ইসলাম।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শের-ই-বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম মনির টিবিএসকে বলেন, 'মৃত্যুর পর থানা পুলিশকে অবহিত না করেই ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ শ্রীপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা মরদেহ ফিরিয়ে আনতে শ্রীপুর থানা ও গাজীপুর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিন্তু পরিবার মরদেহ দিচ্ছে না। ওই শিক্ষার্থীর বাবা মালয়েশিয়া থাকেন। তিনি আসার পর মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে পরিবারর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'মারামারির ঘটনায় গত চার দিনে কোনো মামলা হয়নি। আমরা কলেজ প্রিন্সিপল ও হল সুপারকে অনেকবার মামলা করতে বলেছি। আজ হল সুপারকে ডেকে এনে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা করানো হয়েছে। পরে শুনি ওই শিক্ষার্থী মারা গেছেন, পরিবার মরদেহ নিয়ে গেছে।'
মামলার এজাহারে কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, ছাত্রাবাসের মধ্যে সিগেরেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে বহিরাগতদের সঙ্গে একদল আবাসিক শিক্ষার্থীর সংঘর্ষ হয়।
