ট্রাম্পের নতুন নিয়ম: ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও হৃদ্রোগ থাকলে বাতিল হতে পারে মার্কিন ভিসার আবেদন
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য ভিসা পেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এবার স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর কঠোর নজরদারি আনলো ট্রাম্প প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলে আবেদনকারীদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে। ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতাগুলোকে ভিসা বাতিলের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নতুন এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা আবেদনকারীদের বয়স অথবা ভবিষ্যতে দেশটির জনসাধারণের সাহায্যের ওপর নির্ভর করার সম্ভাবনার ভিত্তিতে তাদের 'পাবলিক চার্জ' হিসেবে বিবেচনা করতে পারবেন।
এর অর্থ হলো, আবেদনকারীদের স্বাস্থ্য সমস্যা বা বয়সের কারণে যদি মনে হয় তারা যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের ওপর বোঝা হয়ে উঠতে পারেন, তাহলে তাদের ভিসা আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।
যদিও সম্ভাব্য অভিবাসীদের স্বাস্থ্য যাচাই করা ভিসা প্রক্রিয়ার একটি পুরোনো অংশ, যেমন সংক্রামক রোগ টিউবারকিউলোসিসের পরীক্ষা বা ভ্যাকসিনের ইতিহাস সংগ্রহ, তবে নতুন নির্দেশিকায় যে ধরনের চিকিৎসা অবস্থাকে বিবেচনায় নেওয়া হবে, তার পরিধি ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে, আবেদনকারীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ভিত্তিতে ভিসা কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই নতুন নির্দেশিকা ট্রাম্প প্রশাসনের বিতর্কিত ও কঠোর অভিবাসন নীতিরই একটি অংশ। এর মূল লক্ষ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বিতাড়িত করা এবং অন্যদের অভিবাসনপ্রক্রিয়াকে যথাসম্ভব কঠিন করে তোলা।
হোয়াইট হাউসের এই অভিযানের মধ্যে রয়েছে প্রতিদিনের গণ-গ্রেফতার, নির্দিষ্ট কিছু দেশ থেকে শরণার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং সামগ্রিক অভিবাসন সংখ্যা কঠোরভাবে সীমিত করার পরিকল্পনা।
ক্যাথলিক লিগাল ইমিগ্রেশন নেটওয়ার্কের সিনিয়র আইনজীবী চার্লস হুইলার জানিয়েছেন, এই নির্দেশনাটি প্রায় সব ভিসা আবেদনকারীর জন্য প্রযোজ্য হলেও, যারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে ইচ্ছুক, তাদের ক্ষেত্রেই এটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে।
র্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, ভিসা কর্মকর্তাদের অবশ্যই আবেদনকারীর স্বাস্থ্য বিবেচনা করতে হবে। কার্ডিওভাসকুলার রোগ, শ্বাসনালী সংক্রান্ত রোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, বিপাকজনিত রোগ, স্নায়ুবিক সমস্যা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন অবস্থা – যার চিকিৎসার জন্য হাজার হাজার ডলার খরচ হতে পারে – এ সবকিছুই এখন ভিসা বাতিলের কারণ হতে পারে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। একইভাবে, কার্ডিওভাসকুলার রোগ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এসব স্বাস্থ্যগত সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের 'পাবলিক চার্জ' হিসেবে গণ্য করা হতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আবেদন প্রত্যাখ্যানের জন্য এটিকে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, ভিসা কর্মকর্তাদের অবশ্যই যাচাই করতে হবে যে, আবেদনকারীর চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ সরকারি সাহায্য ছাড়া নিজে বহন করার মতো আর্থিক সক্ষমতা আছে কি না।
নির্দেশিকায় লেখা আছে, 'আবেদনকারীর কি এমন পর্যাপ্ত আর্থিক সম্পদ আছে যা দিয়ে তিনি সরকারি সহায়তা বা দীর্ঘমেয়াদী সরকারি প্রতিষ্ঠানভিত্তিক চিকিৎসা ছাড়া তার পুরো জীবনের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারবেন?'
আইনজীবী চার্লস হুইলার মনে করেন, এই নির্দেশিকার ভাষা স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিজস্ব হ্যান্ডবুক 'ফরেন অ্যাফেয়ার্স ম্যানুয়াল'-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ম্যানুয়ালে বলা আছে যে, 'কী হতে পারে'—এমন অনুমানের ভিত্তিতে ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা যাবে না।
হুইলার আরও বলেন, 'এটি খুবই উদ্বেগজনক, কারণ ভিসা কর্মকর্তারা তো চিকিৎসাবিদ্যায় প্রশিক্ষিত নন, এই বিষয়ে তাদের কোনো অভিজ্ঞতাও নেই। ব্যক্তিগত জ্ঞান বা পক্ষপাতের ভিত্তিতে অনুমান করা তাদের উচিত নয়।'
নির্দেশিকায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ভিসা কর্মকর্তাদের আবেদনকারীর পরিবারের স্বাস্থ্য, বিশেষ করে শিশু বা বৃদ্ধ অভিভাবকদের স্বাস্থ্যগত অবস্থাও বিবেচনা করতে হবে। প্রশ্ন রাখা হয়েছে, 'কোনো নির্ভরশীলের কি এমন কোনো প্রতিবন্ধকতা, দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন বা অন্যান্য বিশেষ চাহিদা আছে, যার কারণে আবেদনকারী তার চাকরি চালিয়ে যেতে পারবেন না?'
এর আগে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা একজন অনুমোদিত চিকিৎসকের মাধ্যমে মেডিকেল পরীক্ষা করাতেন। সেখানে সংক্রামক রোগের স্ক্রিনিং, অতীতের ড্রাগ বা অ্যালকোহল ব্যবহার, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বা সহিংসতার ইতিহাস প্রকাশ করতে হতো। কিছু নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে টিকা নেওয়াও বাধ্যতামূলক ছিল।
কিন্তু নতুন নির্দেশিকা ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদী রোগকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে বলায়, এটি বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ সম্ভাব্য অভিবাসীর জন্য জটিলতা বাড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
