যুদ্ধ থামলেও গাজার ব্যাংকে নগদ অর্থ সংকট, লোভী ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়ে ঠকছেন অনেকেই
গাজায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় ইসরায়েলের বিমান হামলা ও অবরোধের ভয়াবহতা কিছুটা কমলেও নগদ অর্থের তীব্র সংকট ফিলিস্তিনিদের জন্য নতুন এক যন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে। তাদের হাতে অল্প কিছু নগদ অর্থ থাকলেও তা ব্যবহার করতে পারছেন না তারা। এমন পরিস্থিতিতে সেখানকার সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের কাছে বাধ্য হয়ে ঠকতে হচ্ছে অনেককে।
দুই বছরের বিধ্বংসী যুদ্ধের মধ্যে গাজার ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতালের মতো সেখানকার বহু ব্যাংকও ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ছয় দিন পর, গত ১৬ অক্টোবর থেকে কিছু ব্যাংক পুনরায় চালু হয়। তবে ব্যাংক খোলার খবর শুনে সেখানে দীর্ঘ সারি পড়লেও অধিকাংশ মানুষ ফিরে যাচ্ছেন হতাশ হয়ে।
গাজার মানুষের দৈনন্দিন প্রায় সব লেনদেনেই এখন নগদ অর্থের ওপর নির্ভরশীল। বাজারে খাবার কেনা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ বা পানির বিল পরিশোধ সবকিছু নগদ অর্থে করতে হচ্ছে। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের পর থেকে ইসরায়েল সেখানকার ব্যাংকনোটসহ অধিকাংশ পণ্যের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়।
গাজার অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ আবু জায়াব জানান, এখানকার ব্যাংকগুলো খোলা, ভেতরে এয়ারকন্ডিশন চলছে, কিন্তু কার্যত সবকিছুই ইলেকট্রনিক লেনদেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ- কোনো জমা বা নগদ টাকার লেনদেন হচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, মানুষ বাধ্য হয়ে কিছু লোভী ব্যবসায়ীর কাছে যায়, তারা বেতনের টাকা নগদে তুলে দেয়, কিন্তু ২০ শতাংশ থেকে করে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন কেটে রাখে।
কয়েকজন ফিলিস্তিনি এ নগদ সংকটের মধ্যেও টিকে থাকার এক উপায় নিয়ে কাজ করছেন। যেমন, ৪০ বছর বয়সী মানাল আল-সাইদি ছেঁড়া-ফাটা ব্যাংকনোট ঠিক করেন। এর বিনিময়ে তিনি সামান্য কিছু উপার্জন করেন।
তিনি বলেন, 'আমি কাজ করে ২০–৩০ শেকেল (৬–৯ ডলার) পাই। তারপর এক টুকরো রুটি, কিছু মটরশুঁটি বা যা পাই তাই নিয়ে বাড়ি ফিরি। সবজি বা ভালো কিছু কেনার সামর্থ্য নেই, শুধু টিকে থাকার মতোই আয় হয় এখান থেকে।'
গাজায় নগদ অর্থের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় ছিল না। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অধীনস্থ গাজায় মানবিক সহায়তার তত্ত্বাবধান করা সংস্থা সিওজিএটি ব্যাংকনোট পুনরায় প্রবেশের বিষয়ে কোনো মন্তব্য বা সময়সীমা জানায়নি।
নোট ও কয়েনের ঘাটতি গাজাবাসীর দুঃসহ সংকট আর কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সেখানকার বহু মানুষ তাদের পরিবারের সদস্য, চাকরি ও ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। অনেকের সঞ্চয় ফুরিয়ে গেছে। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করতে হয়েছে। এখন কেউ কেউ পণ্য বিনিময়ের পথেও ফিরে যাচ্ছেন।
৫৩ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি ব্যবসায়ী সামির নামরুতি বলেন, 'অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে নোটের চেহারা প্রায় অচেনা হয়ে গেছে। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো নোটের সিরিয়াল নম্বর। যতক্ষণ সেই নম্বরটি আছে, আমি সেটাকে নিই।'
